World Sleep Day 2024: মুখ হাঁ করে ঘুমোচ্ছেন? কত বড় বিপদ ধেয়ে আসছে, জেনে নিন…

Sleep apnea: যিনি স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত, তিনি অনেক সময় নিজেও সেই সমস্যার কথা বুঝতে পারেন না। আর তাই আমরা রোগীকে বলি, একা আসবেন না। সব সময় যেন বাড়ির লোক সঙ্গে থাকেন। অর্থাৎ যিনি ২৪ ঘণ্টা অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনেকটা তাঁর সঙ্গে থাকছেন। এক্ষেত্রে রোগীর বেড পার্টনারের হিস্ট্রি খুব গুরুত্বপূর্ণ

World Sleep Day 2024: মুখ হাঁ করে ঘুমোচ্ছেন? কত বড় বিপদ ধেয়ে আসছে, জেনে নিন...
ওজন বাড়লে ঘুম সমস্যার হয়
Follow Us:
| Updated on: Mar 15, 2024 | 4:11 PM

রেশমী প্রামাণিক 

‘আয় ঘুম আয়’ বললেও এখন আর ঘুম আসে না চট করে। মাসের পর মাস কেটে যায় বিনিদ্র রজনীতে। আবার কারও ঘুম এলেও মধ্যরাতে তা ভেঙে যায়। এরপর কিছুতেই আর ঘুম আসতে চায় না। হাজারো চেষ্টাতেও কোনও কাজ হয় না। আবার এমন কিছু মানুষ আছেন, যাঁরা বিছানায় পড়ামাত্র ঘুমিয়ে পড়েন। সঙ্গে অদ্ভুত সব শব্দে নাসিকা গর্জন। সেই গর্জনের চোট এমনই যে, পাশের মানুষটি কানে বালিশ চাপা দিয়েও ঘুমোতে পারেন না। একেবারে গৃহযুদ্ধ বেঁধে যাওয়ার মতো অবস্থা তৈরি হয় অনেকক্ষেত্রে। কোভিড-পরবর্তী সময়ে মানুষ নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে সচেতন হয়েছে ঠিকই, কিন্তু চোখ থেকে ঘুম উবে গিয়েছে। অনেক জটিল রোগের অন্যতম কারণ হল ঘুমের ঘাটতি। পাশাপাশি আমাদের আশপাশের অনেক মানুষই স্লিপ অ্যাপনিয়ার শিকার। স্লিপ অ্যাপনিয়া হল ঘুম-সম্পর্কিত শ্বাস-প্রশ্বাসের একটি ব্যাধি।

এই রোগে ঘুমানোর সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত হয়ে যায়। অর্থাৎ শ্বাস কখনও শুরু হয়, কখনও আচমকা বন্ধ হয়ে আসে। এই অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল বাপি লাহিড়ির। এরপর বহু মানুষ নড়েচড়ে বসে। আর তাই প্রচুর মানুষ এখন সচেতন হয়েছেন,সেই সঙ্গে সময়মতো চিকিৎসকের কাছেও আসছেন। নাক ডাকা, স্লিপ অ্যাপনিয়া বিষয়ে মানুষের মনে কিছু সাধারণ প্রশ্ন থাকে। আজ, ১৫ মার্চ, বিশ্ব ঘুম দিবসে (World Sleep Day) সেই সব প্রশ্ন নিয়ে TV9 বাংলার তরফে যোগাযোগ করা হয় চিকিৎসক উত্তম আগরওয়ালের সঙ্গে (Sleep Apnea & ENT Surgeon)।

প্রশ্ন: স্লিপ অ্যাপনিয়া (Sleep Apnea) কি?

উত্তম: স্লিপ অ্যাপনিয়া হল ঘুমের মধ্যে হঠাৎ শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যাওয়া। তখন মানুষ ঠিক ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারে না। এই রোগে ঘুমনোর সময়ে শ্বাস-প্রশ্বাস অনিয়মিত হয়ে যায়। অর্থাৎ শ্বাস কখনও শুরু হয়, কখনও আচমকা বন্ধ হয়ে আসে। শ্বাসনালী ছোট হয়ে যায়। কোনও কারণে নাকের হাড় বাঁকা থাকলে, নাকে কোনও রকম পলিপ থাকলে বা কোনও সমস্যায় যদি নাকের মধ্যে স্পেস কমে যায়, তখনই জোরে-জোরে মানুষ নাক ডাকে। টনসিল বড় থাকলেও এই সমস্যাটি হতে পারে। গলার পেশি স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি শিথিল হলে শ্বাস নেওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়, ঘুমের মধ্যে আচমকা শ্বাস প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। তখনই চট করে ঘুম ভেঙে যায়।

প্রশ্ন: মোটা হলে বা ওজন বাড়লে কি স্লিপ অ্যাপনিয়ার সম্ভাবনা বাড়ে?

উত্তম: অতিরিক্ত ওজন বা ওবেসিটির কারণে জিভ, তালুতেও ফ্যাট জমে যায়। অনেকেই যা বুঝতে পারেন না। Bulky Tissue তৈরি হয়। সেখান থেকেও কিন্তু সমস্যা হতে পারে। ওবেসিটি থাকলে ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইড, উচ্চ রক্তচাপের মতো একাধিক সমস্যা আসে। এসবও হতে পারে স্লিপ অ্যাপনিয়ার কারণ। আজকাল অনেকেরই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছে। প্রত্যক্ষভাবে না হলেও এই ফ্যাটি লিভারের সঙ্গে পরোক্ষ ভাবে জড়িয়ে স্লিপ অ্যাপনিয়া। জিভ, তালু মোটা হয়ে যায়। সেখান থেকে সমস্যার সূত্রপাত। অতিরিক্ত ওজন থেকে একাধিক শারীরিক সমস্যা আর সেখান থেকে স্লিপ অ্যাপনিয়াও আসে।

প্রশ্ন: কী-কী লক্ষণ থাকে স্লিপ অ্যাপনিয়ার?

উত্তম: নাক ডাকা একটা লক্ষণ। নাকের মধ্যে কোনও কারণে স্থান সঙ্কুলান হলে অথবা শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে গেলে তখনই বেশি নাক ডাকে। তবে নাক ডাকা মানেই স্লিপ অ্যাপনিয়া নয়। কোনও একদিন অতিরিক্ত পরিশ্রমের পর বাড়ি ফিরে নাক ডেকে ঘুম হতেই পারে। কিন্তু রোজ বিছানায় পড়া মাত্র নাক ডাকতে শুরু করলে তা হল স্লিপ অ্যাপনিয়া। এমতাবস্থায় চিকিৎসকের পরামর্শ প্রয়োজন। দিনের বেলায় ঘুম পাওয়া বা অতিরিক্ত ক্লান্তিও কিন্তু স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ।

প্রশ্ন: নাক ডাকা তো মানুষ সমস্যা বলে মনেই করেন না…

উত্তম: যিনি স্লিপ অ্যাপনিয়ায় আক্রান্ত, তিনি অনেক সময় নিজেও সেই সমস্যার কথা বুঝতে পারেন না। আর তাই আমরা রোগীকে বলি, একা আসবেন না। সব সময় যেন বাড়ির লোক সঙ্গে থাকেন। অর্থাৎ যিনি ২৪ ঘণ্টা অথবা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অনেকটা তাঁর সঙ্গে থাকছেন। এক্ষেত্রে রোগীর বেড পার্টনারের হিস্ট্রি খুব গুরুত্বপূর্ণ। জোরে-জোরে আওয়াজ করে নাক ডাকছে কি না, হঠাৎ করে ঘুমের মধ্যে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কি না অথবা কীভাবে নাক ডাকছেন, তা একমাত্র যিনি তাঁর সঙ্গে রোজ ঘুমোচ্ছেন, তিনিই বলতে পারবেন। Witnessed Apnea During Sleep এটা একমাত্র বেড পার্টনারই শনাক্ত করতে পারেন। তাই এক্ষেত্রে তাঁর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্ন: কোভিড পরবর্তী সময়ে ঘুমের সমস্যা কতটা জটিল হয়েছে?

উত্তম: কোভিডের পর সমস্যা জটিল হয়নি, মানুষ সচেতন হয়েছে। আগে নাক ডাকাকে কেউ পাত্তাও দিতেন না। মনে করতেন না যে, এটাও একরকম রোগ। মানুষ স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ বুঝত না। এখন নাক ডাকলে মানুষ নিজে থেকে সজাগ হয়ে আগেই চিকিৎসকের কাছে আসছে। তাই কোভিডের পর রোগীর আনাগোনা বেড়েছে।

প্রশ্ন: ভাল বিছানা ম্যাট্রেস ( Mattress) হলেই কি ভাল ঘুম হবে?

উত্তম: এরকম কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। স্লিপ হাইজিন (Sleep Hygiene) মেনে চলতে হবে। বেডরুমের পরিবেশ ড্রইং রুমের চাইতে আলাদা হবে। বেডরুম হবে ঠান্ডা, আরামদায়ক। তাপমাত্রা ২২-২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে থাকবে। বাইরে থেকে আলো এলে চলবে না বা বেডরুমে অতিরিক্ত আলোর প্রয়োজন নেই। আলোয় মেলাটোনিন হরমোন কাজ করে না, যার ফলে ঘুম আসে না। মাথা একটু উঁচু করে পাশ ফিরে শুতে হবে। তাহলে নাক কম ডাকবে। চিৎ হয়ে শুলে শ্বাসনালীতে বেশি চাপ পড়ে, ফলে তখন বেশি নাক ডাকে। খুব নরম বা খুব উঁচু শক্ত বালিশ ব্যবহার করবেন না। ঘাড় বাঁকা থাকলেও নাক ডাকে।

প্রশ্ন: Sleep Hygiene মেনে চলতে কী কী পরামর্শ দেবেন?