করোনা ভ্যাকসিন ১ বছরে! কিন্তু ৩৭ বছরেও অধরা HIV-এর টিকা, লুকিয়ে আছে কোন রহস্য?

এই ভাইরাস বারবার মিউটেশন ঘটাতে সক্ষম হলেও দুর্বল হয় না। ফলে একজন সংক্রমিত ব্যক্তির মধ্যেই ভিন্ন ধরনের ভাইরাসের স্ট্রেন মেলে। ফলে যে কোনও একটি স্ট্রেন-এর বিরুদ্ধে কার্যকরী ভ্যাকসিন নিলেও কাঙ্খিত প্রতিরোধ মেলে না।

করোনা ভ্যাকসিন ১ বছরে! কিন্তু ৩৭ বছরেও অধরা HIV-এর টিকা, লুকিয়ে আছে কোন রহস্য?
ছবিটি প্রতীকী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 18, 2021 | 8:55 PM

গণহারে টিকাকরণের কারণেই মারক গুটিবসন্ত পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। একই কথা বলা চলে পোলিও ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রেও। এমনকী সদ্য আবিষ্কৃত কোভিড ১৯ ভ্যাকসিনের কারণেই প্রাণে বেঁচে গিয়েছেন বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। অথচ হিউম্যান ইমিউনো ডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস (HIV) আবিষ্কার হওয়ার পর কেটে গিয়েছে ৩৭ বছর! এইচআইভি-এর কারণেই হয় দুরারোগ্য এইডস (AIDS)। প্রতিবছর লক্ষাধিক প্রাণহানি ঘটে। অথচ এখনও কেন আবিষ্কার করা গেল না একখানি কার্যকরী এইচআইভি ভ্যাকসিন (AIDS Vaccine)?

বিজ্ঞান কেন এইচআইভি-এর সামনে এত অসহায়?

এই প্রসঙ্গে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন এক চমকপ্রদ তথ্য। মায়ামি মিলার স্কুল অব মেডিসিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি আবিষ্কার করেছেন সিমিয়ান ইমিউনোডেফিশিয়েন্সি ভাইরাস (simian immunodeficiency virus) । মূলত বাঁদরের দেহে এই ভাইরাস মেলে। এসআইভি (SIV) আসলে এইচআইভি-এর নিকটাত্মীয়। এইচআইভি-এর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে এসআইভি এবং বাঁদর খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছে। গবেষকরা আরও জানাচ্ছেন, ৮৩-৮৪ সাল নাগাদ এইচআইভি আবিষ্কারের পর সকলে ভেবেছিল খুব দ্রুত ভ্যাকসিনের দেখা মিলবে। তবে এমন হয়নি। তার মূল কারণগুলি বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা দেখছেন, মূল সমস্যাটি তৈরি করছে এইচআইভি ভাইরাস নিজে। ভাইরাসটির একাধিক স্ট্রেনের উপস্থিতি এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ভেদ করে শরীরে ঢুকে যাওয়ার পদ্ধতিই জটিল করে তুলেছে ভ্যাকসিন প্রস্তুতিকে। ইতিমধ্যে বড় আকারে কয়েক হাজার কোটি টাকা খরচ করে তিনি ৩ বার এইচআইভি ভ্যাকসিনের ফেজ থ্রি ট্রায়াল (Phase Three trial) করা হয়েছে। তার পরেও ভ্যাকসিনের সুরক্ষা মেলেনি। মানুষ সংক্রমিত হতেই থেকেছেন।

আরও পড়ুন: World AIDS Vaccine Day 2021: HIV/AIDS সংক্রান্ত কিছু জরুরি তথ্য জানা আবশ্যিক

বিতর্কিত চতুর্থ ট্রায়াল বা থাই আরভি১৪৪ ট্রায়ালে কিছুটা হলেও সংক্রমণ বাঁধানোর বিরুদ্ধে সুরক্ষা মিলছে বলে দাবি করা হয়েছিল। তবে অন্য এক সমীক্ষায় দেখা যায় সুরক্ষা মেলার বিষয়টি সত্যি হওয়ার ক্ষেত্রে ৭৮ শতাংশেরও কম সম্ভাবনা রয়েছে! এরপর পঞ্চম ভ্যাকসিনের ট্রায়াল বা এইচভিটিএন ৭০২ ট্রায়ালেও মেলেনি কোনও আশার আলো।

নতুন গবেষণা

থেমে গেলে চলবে কেন? বিজ্ঞানীরা এখন হারপিস ভাইরাসের (Herpes virus family) সঙ্গে যুক্ত করছেন এইডস ভাইরাসের প্রোটিন। তারপর তা ভ্যাকসিন হিসেবে প্রয়োগ করা নিয়ে চালাচ্ছেন গবেষণা। হারপিস ভাইরাস একবার শরীরে ঢুকলে তা সারাজীবনের মতো শরীরে থেকে যায়। ফলে সারাজীবন শরীর হারপিসের বিরুদ্ধে একটানা লড়তে থাকে। এই সাফল্যের উপর ভিত্তি করেই হারপিসকে এইডস প্রোটিনের বাহক করে তৈরি করা হচ্ছে ভ্যাকসিন। তবে একাধিক স্ট্রেন-এর বিরুদ্ধে এই ভ্যাকসিন কতটা সুরক্ষা দিতে পারবে তা নিয়ে প্রশ্ন চিহ্ণ থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে ভিন্ন পথে চেষ্টা চলছে প্রোটেকটিভ ইমিউনিটি তৈরি করারও। বিরল হলেও কিছু কিছু এইচআইভি সংক্রামিতের দেহে একাধিক স্ট্রেন-এর বিরুদ্ধে কার্যকরী অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। বিজ্ঞানীরা সেই বিশেষ অ্যান্টিবডি পৃথক করতে সক্ষম হয়েছেন। বিশেষ অ্যান্টিবডির সাহায্যে, এইচআইভি ভাইরাসের বিরুদ্ধে সারাজীবনের সুরক্ষা পাওয়ারও চেষ্টা করা হচ্ছে। আশার আলো একটাই। বাঁদরদের মধ্যে এই ধরনের অ্যান্টিবডি নিয়ে গবেষণায় সুফল পাওয়া গিয়েছে। প্রায় সাড়ে ছয়বছর বাঁদরগুলি সুরক্ষিত থাকছে। ফলে এখনই হাল ছেড়ে দেওয়ার সময় হয়নি বলেই জানাচ্ছেন গবেষকরা।

আরও পড়ুন- World Aids Vaccine Day 2021: এইডস ভ্যাকসিন আর বিল ক্লিন্টনের সম্পর্ক কোথায় জানেন কি?