Kamal Nath Sikh riots: পদ্ম শিবিরে যাওয়ার পথে শিখ দাঙ্গাই ‘কাঁটা’ কমলের?

Kamal Nath Sikh riots: তাহলে কি পা বাড়িয়েও ফিরে আসতে হল কমল নাথকে? বিজেপি কি নিল না এই প্রবীন কংগ্রেস নেতাকে? এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গাই সম্ভবত পদ্ম শিবিরে যাওয়ার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াল কমলের জন্য। যে দাঙ্গা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে কমল নাথকে নিশানা করেছে বিজেপি।

Kamal Nath Sikh riots: পদ্ম শিবিরে যাওয়ার পথে শিখ দাঙ্গাই 'কাঁটা' কমলের?
শিখ দাঙ্গার কলঙ্ক সারা জীবন তাড়া করবে কমল নাথকে Image Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Updated on: Feb 19, 2024 | 8:10 AM

নয়া দিল্লি: গত কয়েকদিন ধরেই জল্পনা চলছিল, কমল নাথ এবং তাঁর ছেলে নকুলকে নিয়ে। বাবা-ছেলে দুজনেই বিজেপিতে যোগ দিতে চলেছেন বলে শোনা যাচ্ছিল৷ কমলনাথ এবং বিজেপির পক্ষ থেকে সরাসরি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করা হলেও, সূত্র মারফৎ অনেক কথাই রটছিল। রবিবার বিকেলে অবশ্য মধ্য প্রদেশের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি জিতেন্দ্র পাটওয়ারি জানিয়েছেন, কমল নাথ আমৃত্যু কংগ্রেসেই থাকবেন। তাহলে কি পা বাড়িয়েও ফিরে আসতে হল কমল নাথকে? বিজেপি কি নিল না এই প্রবীন কংগ্রেস নেতাকে? এতে অবশ্য অবাক হওয়ার কিছু নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ১৯৮৪ সালের শিখ দাঙ্গাই সম্ভবত পদ্ম শিবিরে যাওয়ার পথে কাঁটা হয়ে দাঁড়াল কমলের জন্য। যে দাঙ্গা নিয়ে বছরের পর বছর ধরে কমল নাথকে নিশানা করেছে বিজেপি।

১৯৮৪ সালের ৩১ অক্টোবর, খুন হয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তাঁর দুই শিখ দেহরক্ষীই গুলি করে হত্যা করেছিল তাঁকে। সেই বছরের জুন মাসে, অপারেশন ব্লু স্টার পরিতালনা করেছিল ইন্দিরা সরকার। তারই প্রতিশোধে ছিল সেই হত্যাকাণ্ড। পরের তিন দিনে, দাঙ্গার আগুনে জ্বলেছিল রাজধানী দিল্লি। দিল্লি ও আশপাশের এলাকার প্রায় ৩,০০০ নিরীহ শিখকে হত্যা করেছিল উন্মত্ত জনতা। কমলনাথ-সহ কংগ্রেসি নেতাদের বিরুদ্ধে দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার পাশাপাশি, রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে নিরপরাধ শিখদের চিহ্নিত করা এবং নিশানা করার অভিযোগ উঠেছিল। বিশেষ করে রাকাব গঞ্জ গুরুদ্বারে হামলা, কমল নাথের জীবনের সবথেকে কলঙ্কিত অধ্যায়।

ইন্দিরা হত্যা এবং তার পরের শিখ দাঙ্গার বিশদ বিবরণ পাওয়া যায় ২০০৭-এ লেখা মনোজ মিত্তা এবং এইচএস ফুলকার লেখা, ‘হোয়েন আ ট্রি শুক দিল্লি’ গ্রন্থে। এই গ্রন্থ অনুসারে, ১৯৮৪-র ১ নভেম্বর, নয়াদিল্লির কেন্দ্রস্থলে সংসদ ভবনের ঠিক পাশে অবস্থিত রাকাব গঞ্জ গুরুদ্বার ঘিরে ফেলেছিল প্রায় ৪,০০০ লোকের ভিড়। অন্তত পাঁচ ঘণ্টা ধরে গুরুদ্বারটি অবরোধ করেছিল তারা। বাইরে থেকে গুরুদ্বারের ভিতরে থাকা শিখ সম্প্রদায়ের ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে পাথর ছোড়া হয়, পেট্রোলে ভেজা ন্যাকড়া জ্বালিয়ে ছুড়ে দেওয়া হয়েছিল ভিতরে। আর, সবথেকে জঘন্য ঘটনা ছিল, গুরুদ্বারের দরজায় এক শিখ বাবা-ছেলেকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারা।

মনোজ মিত্তা এবং এইচএস ফুলকা জানিয়েছেন, সেখানে পুলিশ উপস্থিত ছিল। কিন্তু, তারা তাদের কাজ করেনি। দাঁড়িয়ে ছিল নীরব দর্শক হয়ে। সেই সময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন কমল নাথও। দিল্লির তৎকালীন পুলিশ কমিশনার সুভাষ টন্ডন এবং অতিরিক্ত কমিশনার গৌতম কওল দুজনেই পরে জানিয়েছিলেন, হিংসা চলাকালীন সেখানে কমল নাথ ছিলেন। ২০১৫ সালে রাকাব গঞ্জ গুরুদ্বারের বাইরের সেই ঘটনার বিশদ বিবরণ দিয়েছিলেন দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের রিপোর্টার সঞ্জয় সুরিও। তাঁর দাবি, সেখানে জনতাকে নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন কমল নাথই। ওই দুই শিখ ব্যক্তিকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার পর, জনতা গুরুদ্বারের ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু কমলনাথ হাত দেখাতেই তারা থেমে গিয়েছিল। সঞ্জয় সুরি বলেছিলেন, “মনে হতেই পারে গুরুদ্বারে হামলা থামিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু, প্রশ্ন হল, দাঙ্গাকারী আর তাঁর মধ্যে কী এমন সম্পর্ক ছিল যে, তিনি শুধু হাত তুলতেই জনতা থেমে গিয়েছিল?”

দাঙ্গাস্থলে কমল নাথ ছিলেন, তার ভুড়ি ভুড়ি প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও, তাঁর বিরুদ্ধে কখনও কোনও এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়নি। এমনকি, ১৯৮৫ সালে বিচারপতি রঙ্গনাথ মিশ্র কমিশন, কমল নাথ-সহ কংগ্রেসের সমস্ত অভিযুক্ত নেতাদের ক্লিন চিট দিয়েছিল। ২০০০ সালে বিচারপতি নানাবতী কমিশনের তদন্তে অবশ্য কমল নাথের নাম উঠে এসেছিল। কমিশনের সামনে হাজিরা দিয়ে কমল নাথ স্বীকার করেছিলেন য়ে, তিনি সেখানে ছিলেন। কিন্তু, তিনি দাবি করেন, উন্মত্ত জনতার উপর তাঁর কোনও নিয়ন্ত্রণ ছিল না। তিনি আরও দাবি করেন, তিনি জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে চেষ্টা করেছিলেন। তাদের বারংবার আইন নিজেদের হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য বুঝিয়েছিলেন। পুলিশ কমিশনার আসার পর, পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে বলে অনুমান করে তিনি ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছিলেন। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে, শেষ পর্যন্ত কমিশন কমল নাথকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারেনি।

কমল নাথের দাবি, নানাবতী কমিশন তাঁকে এই মামলায় সম্পূর্ণভাবে অব্যাহতি দিয়েছিল। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে নানাবতী কমিশন তাঁকে শুধুমাত্র ‘বেনিফিট অব দ্য ডাউট’ দিয়েছিল। অর্থাৎ, দাঙ্গার পিছনে তাঁর ভূমিকা ছিল অত্যন্ত সন্দেহজনক। কিন্তু, উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে, তাঁর দোষ সম্পর্কে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তাঁকে ছাড় দেওয়া হয়েছিল প্রধানত দুটি বিষয়ের ভিত্তিতে। প্রথমত, এই ঘটনার পর থেকে অনেকটা সময় পেরিয়ে গিয়েছিল। তাই কমল নাথ কখন, কোথায় ছিলেন এবং সেখানে তিনি কী করেছিলেন, সেই সম্পর্কে বিশদ বিবরণ দিতে পারেননি। দ্বিতীয় বিষয় ছিল সাংবাদিক সঞ্জয় সুরির সাক্ষ্য। তাঁর হাত দেখানোতেই যে জনতা গুরুদ্বারের ভিতরে প্রবেশ করেনি, সঞ্জয় সুরির বক্তব্যের এই নির্বাচিত অংশকে গুরুত্ব দিয়েছিল কমিশন। এত কিছুর পরও, শিখ দাঙ্গার কলঙ্ককে পিছনে ফেলতে পারেননি কমল নাথ। আর সেটাই সম্ভবত, তাঁর ‘পদ্মের কাঁটা’ হয়ে দাঁড়াল।