Iraq War: ইরাক যুদ্ধের ২০ বছর, কীভাবে বিরোধী নেতাদের কাজে লাগিয়ে জর্জ বুশকে চেকমেট করেছিলেন বাজপেয়ী?

20 years of Iraq War: একদিকে বিরোধী নেতাদের ইরাকে ভারতীয় সেনা পাঠানোর বিরোধিতা করতে উস্কে দিয়েছিলেন। অন্যদিকে আমেরিকাকে বলেছিলেন এই বিরোধিতার মধ্যে সেনা পাঠানো যাবে না।

Iraq War: ইরাক যুদ্ধের ২০ বছর, কীভাবে বিরোধী নেতাদের কাজে লাগিয়ে জর্জ বুশকে চেকমেট করেছিলেন বাজপেয়ী?
প্রকৃত রাষ্ট্রনায়কের ভূমিকা নিয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 20, 2023 | 8:23 PM

নয়া দিল্লি: আজ থেকে ২০ বছর আগে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ ইরাক আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ৯/১১ হামলার পর প্রথমে আফগানিস্তানে হামলা চালিয়েছিল আমেরিকা। পরাজিত করেছিল তালেবান শক্তিকে। তারপর, ওয়েপন অব মাস মার্ডার বা গণহত্যাকারী অস্ত্র ধ্বংস করার ছলে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রশক্তিরা ইরাকে অবৈধ সামরিক অভিযান শুরু করেছিল। রাষ্ট্রপুঞ্জের অনুমোদন ছাড়াই এই সামরিক অভিযান শুরু হয়েছিল। ফ্রান্স, জার্মানি-সহ বেশ কয়েকটি দেশ এই অভিযানের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।

মার্কিন সেনাদের ছায়াসঙ্গী ছিলেন সাংবাদিক ওয়ায়েল আওয়াদ। ইরাক যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং আমেরিকার প্রতারণা তিনি খুব কাছ থেকে দেখেছেন। আমেরিকা বলেছিল ইরাকের হাতে গণহত্যাকারী অস্ত্র রয়েছে। অথচ, ওয়ায়েলের মতে অস্ত্র ইরাকের হাতে নয়, ছিল আমেরিকার হাতে। সেটা ছিল গণ প্রতারণাকারী অস্ত্র। নিউজ৯ প্লাসকে এই সাংবাদিক বলেছেন, “আমেরিকানরা বাকি বিশ্বকে বোঝাতে চেয়েছিল যে ইরাকে হামলা ছিল বৈধ। এটাই ছিল ইরাক যুদ্ধের অনন্যতা। আমেরিকানরা সব জানত। ইরাকের প্রতিটি এলাকা, প্রতিটি কোণ তারা জানত। সবকিছু মানচিত্রে আঁকা ছিল।”

শুধু তাই নয়, এই মার্কিন সাংবাদিক আরও জানিয়েছেন যে, ইরাক যুদ্ধের সঙ্গে ভারতের উল্লেখযোগ্য যোগ ছিল। হামলাকে বৈধতা দিতে আমেরিকা ভারতকে ইরাকে সেনা পাঠাতে বলেছিল মার্কিন প্রশাসন। তবে, তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী কী পদক্ষেপ করবেন, তারা তা অনুমানও করতে পারেনি। ইরাকে মার্কিন হামলা শুরুর কয়েকদিন পরই ভারতীয় সংসদ, ইরাকের সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে মার্কিন বাহিনীর সামরিক পদক্ষেপের বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করেছিল। ইরাকি জনগণের প্রতি গভীর সহানুভূতিও প্রকাশ করা হয়েছিল। যুদ্ধ শুরুর কয়েক মাস পরই, আমেরিকা বুঝতে পেরেছিল যে তাদের হামলার কোনও বৈধতা নেই। এরপর, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রজেশ মিশ্র। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ এবং তাঁর দুই বিশ্বস্ত সেনাপতি কলিন পাওয়েল এবং কন্ডোলিজা রাইসের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থকে ইরাকে ভারতীয় সেনার অন্তত একটি ডিভিশন পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছিল।

প্রাক্তন বিদেশ সচিব কানওয়াল সিবালের মতে, ভারতকে দিয়েই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ইরাক হামলার বৈধতা দিতে চেয়েছিল। কারণ ভারতকে বরাবর উন্নয়নশীল বিশ্বের কণ্ঠস্বর হিসাবে দেখা হয়। এরপর আমেরিকা সেনা পাঠানোর বিষয়ে ভারত সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা শুরু করেছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উপ-প্রধানমন্ত্রী এলকে আদবানির সঙ্গে বৈঠক করেন প্রেসিডেন্ট বুশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা কন্ডোলিজা রাইস। কানওয়াল সিবালের মতে, আমেরিকা মনে করেছিল ভারত তাদের সঙ্গেই রয়েছে। কারণ, ওয়াশিংটন সফরের সময় এক পদস্থ মন্ত্রীর ভুলে আমেরিকার ধারণা হয়েছিল যে, ভারত ইরাকে সামরিক অবদান রাখতে প্রস্তুত।

কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে চিনতে ভুল করেছিল আমেরিকা। তিনি দেশের মেজাজ বুঝতে পেরেছিলেন এবং সেই সঙ্গে এটাও বুঝেছিলেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে গেলে তাদের সরাসরি না বলা যাবে না। তাঁর মন্ত্রিসভাও ইরাকে সেনা পাঠানো নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত ছিল। এমনকি উপ-প্রধানমন্ত্রী আদবানি এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী জর্জ ফার্নান্দেজও মার্কিন অনুরোধের মানার পক্ষেই ছিলেন। অন্যদিকে, অর্থমন্ত্রী যশবন্ত সিং এবং বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত সিনহা এর বিপক্ষে ছিলেন। এই অবস্থায় বাজপেয়ী, এই বিষয়ে বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বাম নেতারা ইরাকে সেনা পাঠানোর বিষয়ে ভারতের কোনও পদক্ষেপ করা উচিত নয় বলে জানিয়েছিলেন। বাজপেয়ী বলেছিলেন, “এগুলি আপনারা বাইরে গিয়ে বলছেন না কেন?”

তৎকালীন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর সঙ্গেও দেখা করেছিলেন বাজপেয়ী। এই বিষয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছিলেন তাঁরা। প্রধানমন্ত্রীর স্পেশাল ডিউটি অফিসার সুধীন্দ্র কুলকার্নি জানিয়েছেন, বাজপেয়ী একদিকে বাম নেতাদের প্রতিবাদ করার জন্য প্ররোচিত করেছিলেন। পরে আমেরিকানদের বলেছিলেন দেশে সেনা পাঠানো নিয়ে ব্যাপক প্রতিবাদ হচ্ছে। তাই, ভারত এই যুদ্ধে অংশ নিতে পারবে না। বাজপেয়ীর এই পদক্ষেপে হতবাক হয়ে গিয়েছিল আমেরিকা। বিশ বছর পর, প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ীর নেওয়া সিদ্ধান্ত কতটা দুরদর্শী ছিল তা স্পষ্ট হয়েছে। একজন সত্যিকারের রাষ্ট্রনায়কের মতো পদক্ষেপ করেছিলেন তিনি।