নাগোরটা এনকাউন্টারে খতম ৪ জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি, মিলল পাক যোগের প্রমাণ

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেন, "সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছে আসন্ন নির্বাচনের উপর নজর রাখছে পাকিস্তানি এজেন্সি ও জঙ্গি সংগঠনগুলি। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার জন্য তারা প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রের ব্যবহারও করছে।"

নাগোরটা এনকাউন্টারে খতম ৪ জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি, মিলল পাক যোগের প্রমাণ
প্রতীকী চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Nov 27, 2020 | 3:06 PM

TV9 বাংলা ডিজিটাল: জম্মুতে সন্ত্রাসবাদী হামলার পিছনে পাকিস্তানি মদতের মিলল প্রমাণ। বৃহস্পতিবার সকালে জম্মুর বাইরে অবস্থিত নাগোরটায় (Nagrota) তিন ঘন্টা ধরে চলে এনকাউন্টার (encounter), চার জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিকে খতম করে নিরাপত্তারক্ষীরা। আগামী ২৮ তারিখ জেলা উন্নয়ন পরিষদের নির্বাচন (District Development Council polls)-কেই বানচাল করার পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের, এমনটাই জানান জম্মুর পুলিস আধিকারিক।

সন্ত্রাসবাদী হামলা চালানোর পিছনে পাকিস্তানের হাত থাকার সন্দেহ হলেও ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করে এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে যান তাঁরা। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয় একটি ডিজিটাল মোবাইল রেডিয়ো,যা মাইক্রো ইলেকট্রনিক্স (Micro Electronics) নামক একটি পাকিস্তানি কোম্পানির তৈরি। সেই মোবাইল রেডিয়োতে “কোথায় পৌঁছেছো? পরিস্থিতি কী? কোনও সমস্যা রয়েছে কি? দু’টোর সময় তোমাদের জানিয়ে দেওয়া হবে।”-এই ধরনের বেশ কয়েকটি মেসেজও পাওয়া যায়। জঙ্গিরা পাকিস্তানে তাঁদের প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে যে স্মার্টফোন ব্যবহার করছিল, তা কিউ মোবাইল (Q Mobile) নামক একটি পাকিস্তানি মোবাইল প্রস্তুতকারক সংস্থার তৈরি। এছাড়াও তাদের কাছে যে ওষুধগুলি ছিল তা করাচিতে তৈরি, পরনের জুতোও পাকিস্তানের তৈরি।

জম্মু-কাশ্মীর পুলিসি তদন্তে জানা যায়,কাশ্মীরে আসন্ন জেলা উন্নয়ন পরিষদের নির্বাচন বানচাল করার জন্যই বড় আকারের হামলা চালানোর উদ্দেশ্যে ওই চার জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিকে ভারতে পাঠানো হয়েছিল। ঘটনাস্থান থেকে পুলিস ১১টি একে অ্যাসল্ট রাইফেল, ২৪টি ম্যাগাজিন, ৭.৫ কেজি আরডিএক্স (RDX), ২০ মিটার আইইডি তার(IED wire) ও ছটি ডিটোনেটর উদ্ধার করে। পরে এছাড়াও একটি আন্ডার ব্যারেল গ্রেনেড লঞ্চার(Under Barrel Grenade Launcher), ২৯ টি গ্রেনেড (grenades), পাঁচটি রাইফেল গ্রেনেড, ছটি ম্যাগাজিন সহ তিনটি পিস্তল, একটি ওয়্যারলেস সেট ও জিপিএস(GPS) উদ্ধার করা হয়।

সীমান্ত পেরিয়ে কীভাবে জম্মুতে এল জঙ্গিরা, সেই পথেরও হদিশ পেয়েছে পুলিস। তাঁরা জানান, জম্মু সীমান্ত পার করেই দেশে প্রবেশ করে ওই চার জঙ্গি এবং দক্ষিণ সাম্বায় জাতীয় সড়কের উপর পূর্বনির্ধারিত একটি জায়গায় তারা এক সাহায্যকারী ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করে। ওই ব্যক্তির ট্রাকে চেপেই কাশ্মীর পৌঁছানোর পরিকল্পনা ছিল তাদের । গোপন সূত্রের খবর অনুযায়ী জম্মুর বান টোল নাকাতেই ট্রাকটিকে আটকে দেওয়া হয়। পুলিস ট্রাকের ভিতর পরীক্ষা করে দেখতে গেলে জঙ্গিরা গুলি চালাতে শুরু করে, ঘটনায় আহত হন দুই পুলিসকর্মী। এরপরই ভারতীয় সেনার সঙ্গে গুলির লড়াই শুরু হয়, দীর্ঘ তিনঘণ্টার লড়াইয়ে চার জঙ্গিকে খতম করে সেনাবাহিনী ও পুলিস।

আরও পড়ুন: মাটি চাপা পড়ে গিয়েছে ৩৭০ অনুচ্ছেদ, কোনওদিন ফিরবে না : শাহনাওয়াজ হুসেন

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক আধিকারিক বলেন, “সূত্র অনুযায়ী জানা গিয়েছে আসন্ন নির্বাচনের উপর নজর রাখছে পাকিস্তানি এজেন্সি ও জঙ্গি সংগঠনগুলি। নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার জন্য তারা প্রচুর পরিমাণে অস্ত্রের ব্যবহারও করছে। ২০১৯-র ৫ অগস্ট সংবিধানে পরিবর্তনের কারণে কাশ্মীরে যে শান্তিপূর্ণ পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন খুশি নয়। তাই তারা বারংবার রাজনৈতিক নেতা বা সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য বানিয়ে দেশের উপর আঘাত হানার চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে জম্মু-কাশ্মীরের মানুষদের সহযোগিতায় প্রতিবারই এই প্রচেষ্টাগুলিকে প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে।”

ঘটনাস্থান থেকে যে ওষুধ ও চিকিৎসাসামগ্রীগুলি উদ্ধার করা হয়েছে, সেগুলির মধ্যে পেইনকিলার, ডায়েরিয়া রোখার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক, উনানি ওষুধ, ইন্জেকশন ও সার্জিকাল গজ ছিল। প্রতিটি জিনিসই লাহোর মেডিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড(কসুর),কোয়ারসি ইন্ডাস্ট্রিজ (খাইবার পাখতুনখা), শামি ফার্মাসিউটিক্যালস (করাচি), রহমান রেইনবো প্রাইভেট লিমিটেড (লাহোর)-র মতো পাকিস্তানি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার তৈরি।

আরও পড়ুন: বিপুল কর্ম সংস্থান হয়েছে ত্রিপুরায়, দাবি করলেন বিপ্লব দেব