মে-র মাঝামাঝি ‘পিক’! ১৩ হাজার মৃত্যু হতে পারে রোজ, বলছে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা

যদিও এই চরম ভয়াবহ পূর্বাভাসের মধ্যেও আশার বাণী শুনিয়ে বলা হয়েছে, মে মাস পেরলেই নামতে পারে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর গ্রাফ।

মে-র মাঝামাঝি 'পিক'! ১৩ হাজার মৃত্যু হতে পারে রোজ, বলছে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Updated on: Apr 27, 2021 | 10:45 PM

কমলেশ চৌধুরী: করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে জেরবার দেশবাসী। কেবল একটাই প্রশ্ন এখন ভাবাচ্ছে প্রত্যেককে। এর শেষ কোথায়? দৈনিক সংক্রমণ এবং মৃত্যুর গ্রাফই বা ঠিক কোন জায়গায় পৌঁছতে পারে, সেই নিয়েও উৎকণ্ঠায় ভুগছেন আমজনতা। সম্প্রতি ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠান ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন পূর্বাভাস দিয়ে জানিয়েছে, মে মাসের মাঝামাঝি ‘পিক’ অর্থাত্‍ সংক্রমণের শৃঙ্গে পৌঁছতে পারে ভারত। সামনের দিনগুলো আরও কতটা ভয়াবহ হতে পারে, ঠিক সেই বিষয়টিই উঠে এসেছে সেই গবেষণায়।

উদ্বেগের এই তথ্যের পাশাপাশি খানিকটা রুপোলি রেখাও রয়েছে পূর্বাভাসে। সমীক্ষকরা বলেছেন, মে-র শেষ সপ্তাহ থেকে গ্রাফ ধীরে ধীরে নামতে শুরু করবে। জুন-জুলাই পেরিয়ে অগস্টে ফিরতে পারে ফেব্রুয়ারির ছবি। যে সময় দেশে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১০০-র আশপাশে। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও একই পূর্বাভাস।

জানুয়ারিতে একদিনে সাড়ে ৪ হাজার মৃত্যুর সাক্ষী হয়েছিল আমেরিকা। সেটাই বিশ্বরেকর্ড। তারও প্রায় তিন গুণ মৃত্যুর আশঙ্কা করা হচ্ছে ভারত নিয়ে!

কেন এত মৃত্যুর আশঙ্কা?

ইনস্টিটিউট ফর হেলথ মেট্রিক্স অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের সঙ্গে জড়িত বাঙালি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ সৌম্যদীপ ভৌমিক। বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের এই প্রাক্তনীর কথায়, “অক্সিজেনের মতো হাসপাতালের অতি সাধারণ মানের প্রয়োজনও মেটাতে ব্যর্থ হচ্ছে দেশের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো! আমাদের হিসেব, ১৪ মে নাগাদ দেশ যখন দ্বিতীয় ঢেউয়ের শৃঙ্গে পৌঁছবে, তখন প্রায় ৩ লক্ষ ৪৫ হাজার আইসিইউ বেডের প্রয়োজন হবে। এই মুহূর্তে রয়েছে ২০ হাজারের কাছাকাছি আইসিইউ বেড। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ফারাক কতটা।”

গবেষণায় দেখানো হয়েছে, ১৯ মে নাগাদ পশ্চিমবঙ্গে ৩১ হাজারের বেশি আইসিইউ বেডের প্রয়োজন হতে পারে। এই মুহূর্তে রয়েছে ১২০০-র কিছু বেশি আইসিইউ বেড। রাজ্য সরকারের বুলেটিন অনুযায়ী, আইসিইউ-এইচডিইউ মিলিয়ে বেড রয়েছে ১,৮৩৮টি। সৌম্যদীপের বক্তব্য, “দিল্লিতে যা হয়ে চলেছে, তা বাংলায় হবে না, এমন ভাবা ঠিক হবে না। এখনই গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি দেখা উচিত। দেশের বেশিরভাগ রাজ্যই যখন বিপর্যস্ত, তখন অন্য দেশ থেকে সাহায্য চাওয়া প্রয়োজন।” তাঁর পরামর্শ, শুধু মেডিক্যাল যন্ত্রপাতি নয়, ডাক্তার-নার্স-প্যারামেডিক স্টাফও চাইতে হবে। ভেঙে পড়া স্বাস্থ্য পরিকাঠামোই যে মৃত্যুমিছিল বাড়িয়ে দিতে পারে, তার ইঙ্গিতই পূর্বাভাসের পরতে পরতে।

আরও পড়ুন: ভ্যাকসিনের দামে ‘বৈষম্য’ কেন? কেন্দ্রের কাছে জানতে চায় শীর্ষ আদালত

দেশ প্রথম ঢেউয়ের ‘পিক’ পেরিয়েছিল মাঝ-সেপ্টেম্বরে। বাংলা অবশ্য পাক্কা একমাস দেরিতে। বিভিন্ন গাণিতিক মডেলে দেখানো হয়েছিল, একুশের ফেব্রুয়ারি নাগাদ গ্রাফ ‘ফ্ল্যাট’ হয়ে যাবে। সেই আভাস মিলে যায়। কিন্তু এর পর পরই রাতের ঘুম কেড়ে চলে আসে দ্বিতীয় ঢেউ। কতটা আশঙ্কার এই পূর্বাভাস?

শহরের বিশিষ্ট জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অনির্বাণ দলুইয়ের হিসেব, এক সপ্তাহ পরই রাজ্যের দৈনিক সংক্রমণ ১৮-২৫ হাজারের মধ্যে পৌঁছতে পারে। মঙ্গলবার রাতের তথ্য, ১৬ হাজার পার করেছে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা। এই প্রথম এক লক্ষের গণ্ডি পেরিয়েছে সক্রিয় রোগীর সংখ্যা। অনির্বাণ বলেন, “যত বেশি মানুষ আক্রান্ত হবেন, তত বেশি গুরুতর রোগীর সংখ্যা বাড়বে। এখনও পর্যন্ত বেড বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু যখন আর বেড বাড়ানো সম্ভব হবে না, তখন চিকিত্‍সা না-পেয়ে মৃত্যু বাড়বেই।”

পরিস্থিতি যা, শুধু মাস্ক পরা, দূরত্ববিধি মেনে চলা, হাত ধোয়াই নয়, জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না বেরোনোই ভালো, পরামর্শ সৌম্যদীপের।

আরও পড়ুন: ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড মৃত্যু রাজ্যে, ১ লক্ষ পেরল সক্রিয় রোগীর সংখ্যা, আক্রান্ত সাড়ে ১৬ হাজার