কে আটকাবে আমাদের? মিথ্যা মুছে নতুন ইতিহাস লেখার আহ্বান জানালেন অমিত শাহ

ভারতের অধিকাংশ ঐতিহাসিক পান্ড্য, চোল, মৌর্য, গুপ্ত বা অহমদের মতো অনেক গৌরবময় সাম্রাজ্যের ইতিহাসকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র মুঘলদের ইতিহাসই লিপিবদ্ধ করেছেন। শুক্রবার (১০ জুন), এমন দাবি করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্বাধীন ইতিহাস লেখার আহ্বান জানালেন।

কে আটকাবে আমাদের? মিথ্যা মুছে নতুন ইতিহাস লেখার আহ্বান জানালেন অমিত শাহ
অমিত শাহ।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 10, 2022 | 8:44 PM

নয়া দিল্লি: ভারতের অধিকাংশ ঐতিহাসিক শুধুমাত্র মুঘলদের ইতিহাসই লিপিবদ্ধ করায় প্রাধান্য দিয়েছেন। পান্ড্য, চোল, মৌর্য, গুপ্ত বা অহমদের মতো অনেক গৌরবময় সাম্রাজ্যের ইতিহাসকে তাঁরা উপেক্ষা করেছেন। শুক্রবার (১০ জুন), এমনই দাবি করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন। শুধু তাই নয়, এখন স্বাধীন ভারতে স্বাধীনভাবে ইতিহাস লেখা উচিত বলে মন্তব্য করেন শাহ। তাহলেই ‘ভুল ইতিহাস’ মুছে যাবে। এদিন, ‘মহারানা: সহস্র বর্ষ কা ধর্ম যুদ্ধ’ নামে একটি বই প্রকাশ করেন তিনি। সেখানেই তিনি বলেন, ১০০০ বছর ধরে সংস্কৃতি, ভাষা এবং ধর্ম রক্ষার জন্য এই লড়াই করা বৃথা যায়নি। কারণ ভারত আবার বিশ্বের সামনে সম্মানের সঙ্গে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে।

অমিত শাহ বলেন, ‘আমি ঐতিহাসিকদের কিছু বলতে চাই। অনেক সাম্রাজ্য আছে, কিন্তু ইতিহাসবিদরা শুধুমাত্র মুঘলদের উপরই মনোনিবেশ করেছেন এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের সম্পর্কেই লিখেছেন। পান্ড্য সাম্রাজ্য ৮০০ বছর ধরে রাজত্ব করেছিল। অহম সাম্রাজ্য ৬৫০ বছর ধরে অসম শাসন করেছে। এমনকি, বখতিয়ার খিলজি, আওরঙ্গজেবকেও তারা পরাজিত করে অসমের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখেছিল।পল্লব সাম্রাজ্য শাসন করেছে ৬০০ বছর। চোলরা শাসন করেছে ৬০০ বছর। মৌর্যরা আফগানিস্তান থেকে লঙ্কা পর্যন্ত গোটা দেশ শাসন করেছে ৫৫০ বছর ধরে। সাতবাহনরা রাজত্ব করেছে ৫০০ বছর। গুপ্ত সাম্রাজ্যের শাসন ছিল ৪০০ বছর ধরে। সমুদ্রগুপ্তই প্রথম একটি অখণ্ড ভারত গঠনের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সেই সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কিন্তু তাদের উপর কোন রেফারেন্স বই নেই’।

এরপরই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, এই সাম্রাজ্যগুলির ইতিহাস লেখার আহ্বান জানান। তাঁর মতে, এই নয়া ইতিহাস লেখা হলেই ‘ভুল ইতিহাস’ ধীরে ধীরে মুছে যাবে এবং ‘আসল সত্য’ প্রকাশিত হবে। তবে, এর জন্য বহু মানুষের যোগদানের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। অমিত শাহ বলেন, ‘ঐতিহাসিকদের কোনও মন্তব্য না করে, আমাদের গৌরবময় ইতিহাস জনগণের সামনে তুলে ধরা উচিত। আমরা যখন কোনও বড় প্রচেষ্টা করি, তখন আপনাআপনিই মিথ্যার প্রভাব কমে যায়। তাই আমাদের প্রচেষ্টা আরও বড় করার দিকে নজর দিতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ইতিহাস জয়-পরাজয়ের ভিত্তিতে লেখা উচিত নয়। কোনও ঘটনার ফলাফলের ভিত্তিতেই ইতিহাস লেখা উচিত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, ভারতে কিছু কিছু ইতিহাস এমনভাবে লেখা হয়েছে যে, তা পড়েই মানুষের মনে হতাশার জন্ম হয়। কিন্তু, ভারতে হতাশা টিকতে পারে না। একশ বছর কেটে গেলেও শেষ পর্যন্ত সত্যই জয়ী হবেই, বলে জানান তিনি।

শাহ আরও জানান, সত্য ইতিহাস নিয়ে কিছু কিছু ঐতিহাসিক ছোট পরিসরে লেখালিখি করেছেন, কিন্তু কেউই সমগ্র দেশের ইতিহাস নিয়ে কোনও ব্যাপক কাজ করেননি। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সত্য লেখা থেকে কেউ আটকাতে পারবে না। আমরা এখন স্বাধীন। আমরা আমাদের ইতিহাস নিজেদের মতো করে লিখতে পারি’। এই বিষয়ে সরকারও উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে, সরকার ইতিহাস লেখার উদ্যোগ নিলে বিভিন্ন অসুবিধা দেখা দেয় বলে মেনেও নেন অমিত শাহ। তাঁর মতে, ইতিহাসবিদরা স্বাধীনভাবে লিখলেই শুধুমাত্র সত্য ইতিহাস উঠে আসে।