Galwan Clash Anniversary : ভূ-রাজনৈতিক পট পরিবর্তন কি আরও ‘গালোয়ান’ ডেকে আনবে? ভারত-চিন সম্পর্কের মোড় কোন দিকে

Galwan Clash Anniversary : ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের আবহে ভূ-রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটেছে। তবে রাশিয়ার মতো চিনও যদি কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে ভারত-চিন সম্পর্কে নয়া মোড় আসবে। তবে আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হয়, ছোটখাটো ‘স্ট্যান্ডঅফ’-এ জড়ালেও সম্মুখ সমরে লিপ্ত হবে না চিন।

Galwan Clash Anniversary : ভূ-রাজনৈতিক পট পরিবর্তন কি আরও ‘গালোয়ান’ ডেকে আনবে? ভারত-চিন সম্পর্কের মোড় কোন দিকে
ছবি সৌজন্যে : PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 17, 2022 | 12:06 AM

সৈয়দ আতা হাসনাইন

ভারত স্বাধীন হওয়ার পরই ‘হিন্দি-চিনি ভাই ভাই’ স্লোগান খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। তবে ১৯৬২ সালে লাদাখে ভারতের ‘ঘুম ভাঙে’। সেই যুদ্ধের পাঁচ বছর পর ফের রক্ত ঝরেছিল ভারত-চিন সংঘর্ষে। সেই সংঘর্ষ বেঁধেছিল সিকিমের নাথুলায়। ১৯৬৭ সালের সেই সংঘর্ষে বেশি রক্ত ঝরেছিল চিনাদের। কয়েকজন জওয়ানের পিছু না হটার সেই মনোভাব চিরকালের জন্য চিনা সামরিক শক্তি সম্পর্কে ভারতীয় সেনার মনোভাব পাল্টে দিয়েছিল। চিন নিয়ে ভারতের মনে যে রক্ষণশীলতা ছিল, তা ভেঙে চৌচির হয়েছিল। সেই সংঘর্ষের পর দীর্ঘ ৫৩টা বছর প্রায় নির্বিঘ্নেই কেটেছিল। মাঝে সাঝে অরুণাচল বা ডোকলামে উত্তেজনা ছড়ালেও রক্ত ক্ষয়ের ঘটনা ঘটেনি। তবে ২০২০ সালের ১৫ জুন ভারত-চিন সম্পর্কে আসে নয়া মোড়। ভারতের জওয়ানরা নিজেদের প্রাণ দিয়ে ফের একবার প্রমাণ করেন, আমরা পিছু হটব না।

২০২০ সালের ১৫ জুন গালোয়ানে কর্নেল সন্তোষবাবু সহ ভারতের ২০ জন সেনাকর্মীর বলিদানের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি আসন্ন। সেই ঘটনায় বহু চিনা সেনাও প্রাণ হারিয়েছিল। যদিও চিনের তরফে হতাহতের সংখ্যা নিশ্চিত করা হয়নি। তবে সেই একটা দিনই চিনের যাবতীয় পরিকল্পনায় জল ঢেলেছিল। ভারতকে রক্ষণশীল মনোভাবের খোলসে পুড়তে চাওয়া চিন সেদিন ভারতীয় সেনার বীরত্ব দেখেছিল। যদি আমরা মনে করি, চিন ইচ্ছে করেই ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে গালোয়ান উপত্যকায় উত্তেজনা ছড়িয়েছিল, তাহলে বলতেই হবে, তারা তাদের পরিকল্পনায় ডাহা ফেল করে। করোনার ফায়দা তুলে চিন চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। সেই অনুযায়ী তিব্বতে চিনা সেনা প্রশিক্ষণও নিয়েছিল। তবে তাতে ভারতও কিঞ্চিত সতর্ক হয়েছিল। সাধারণত এর আগে চমকে দেওয়ার কৌশল হিসেবে চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর কম সেনা মোতায়েন রাখত। ২০০৫ সালের আগে ভারতও প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখার দিকে ততটা নজর দিত না।

তবে গালোয়ান সংঘর্ষ পরবর্তী যেসব পদক্ষেপ ভারত করেছে, তা থেকে স্পষ্ট ভারত কৌশলগতভাবে আগ্রাসী হতে পিছপা হবে না। ভারত প্রথমেই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলিতে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করেছিল। এরপর পর্যাপ্ত সংখ্যায় সেনা মোতায়েন করার পর চুশুলের গুরুত্বপূর্ণ সব চূড়া নিজেদের দখলে নেয় ভারতীয় সেনা। চিনের মল্ডো গ্যারিসনের উপর ভারতীয় সেনার নজর এতে আরও তীক্ষ্ণ হয়। এরপর শীতের আগেই আরও সেনা লাদাখ সীমান্তে মোতায়েন করা হয়। পাশাপাশি শীতে সেখানে যাতে সেনারা থাকতে পারে, তার জন্য সরঞ্জামও পাঠানো হয়। এই আবহে ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে চিন ফিঙ্গার পয়েন্ট থেকে পিছু হটে এবং ভারত তারপর কৈলাশ রেঞ্জে নিজেদের অবস্থান বদল করে।

ভারত ও চিন প্যাংগং সো, গালোয়ান ও গোগরা হটস্প্রিং থেকে পিছু হটেছে। তবে কংকা লা থেকে এখনও পিছু হটেনি চিন। দেপসাঙের চারটি পয়েন্ট থেকেও চিন সরতে অস্বীকার করেছে। এই আবহে ১৫ দফা আলোচনার পরও সীমান্তের দুই পারে দুই দেশের প্রায় এক লক্ষ সেনা মোতায়েন রয়েছে। চিন শীতকালীন প্রতিবন্ধকতার কারণে কিছু সেনা সাময়িকভাবে প্রত্যাহার করেছিল বটে, তবে ভারত ৩৬৫ দিন ধরেই কড়া নজর রেখে চলেছে সীমান্তে। এদিকে ভারতীয় সেনার সাহস (২৯-৩০ এপ্রিল ভারত যেভাবে কৈলাশ রেঞ্জে নিজেদের সেনা মোতায়েন করেছিল) দেখে চিন এবার প্যাংগং সোর কাছে একটি কৌশলগত ব্রিজ তৈরি করছে। তবে এখন চিনও ভারতের ক্ষমতাকে সমীহ করে চলে।

এই সবের মাঝেই আন্তর্জাতিক মহলে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের আবহে ভূ-রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটেছে। তবে রাশিয়ার মতো চিনও যদি কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে ভারত-চিন সম্পর্কে নয়া মোড় আসবে। তবে আপাত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হয়, ছোটখাটো ‘স্ট্যান্ডঅফ’-এ জড়ালেও সম্মুখ সমরে লিপ্ত হবে না চিন। তবে ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে চিনের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক আরও ‘মধুর’ হয়েছে। এই আবহে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে কী আমরা আরও ‘গালোয়ান সংঘর্ষ’ প্রত্যক্ষ করব? তবে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনের কোনও ‘ভুল চাল’ রাশিয়ার সঙ্গে তাদের সম্পর্কে চিড় ধরাতে পারে। কারণ রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্কও ‘ভাল’। এই আবহে ভূ-রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের মাঝেও চিন প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ‘ভারসাম্য’ বজায় রাখার পক্ষেই থাকবে। গালোয়ানে কৌশলগত যে আক্রমণ হয়েছিল, তবে চিন এখন অবগত যে ভারতীয় সেনা পেশাদারিত্বের সঙ্গে নিজের দেশকে রক্ষা করতে সক্ষম। তাই গালোয়ানের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তিতে আমরা সেই বীরত্বকেই উদযাপন করতে চাই।