দিল্লি মহারাষ্ট্রেও কোপ বার্ড ফ্লু-র, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বিশেষ বৈঠক সংসদীয় কমিটির
কেন্দ্রের তরফে প্রতিটি রাজ্যে পরিস্থিতির উপর কড়া নজরদারি বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে রাজ্যে ইতিমধ্যেই পাখির মড়ক শুরু হয়েছে, সেখানে আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় পিপিই কিট (PPE Kit) মজুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নয়া দিল্লি: করোনার নতুন স্ট্রেনের পাশাপাশি চিন্তা বাড়াচ্ছে বার্ড ফ্লু (Bird Flu)-ও। কেরল (Kerala), গুজরাট (Gujarat) থেকে তা ছড়িয়ে পড়ছে মহারাষ্ট্র (Maharashtra), দিল্লি (Delhi)-তেও। ইতিমধ্যেই নয়টি রাজ্যে সরকারিভাবে এই সংক্রমণের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এই রাজ্যগুলি হল কেরল, উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা, মধ্য প্রদেশ, গুজরাট, রাজস্থান, হিমাচল প্রদেশ, দিল্লি ও মহারাষ্ট্র। ক্রমবর্ধমান এই সংক্রমণের কথা মাথায় রেখেই কৃষি বিষয়ক সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটি উপলব্ধ পশু ভ্যাকসিনের হিসাবনিকেশ খতিয়ে দেখতে পশুপালন মন্ত্রালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ডেকে পাঠিয়েছেন। সোমবার দুপুর তিনটে থেকে শুরু হবে এই বৈঠক।
বার্ড ফ্লুতে এখনও অবধি সর্বাধিক পাখি মৃত্যু হয়েছে হরিয়ানা (Haryana)-এ, সেখানে চার লক্ষেরও বেশি পাখির সংক্রমণের কারণে মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে শনিবারই দিল্লির মুখমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল (Arvind Kejriwal) জানিয়েছেন যে প্রতিটি জেলায় র্যাপিড অ্যাকশন টিম তৈরি করা হয়েছে সংক্রমণ চিহ্নিতকরণ ও রুখতে। মূলত সঞ্জয়, ভালসয়া লেক ও হৌজ খাসের পোলট্রি মার্কেটগুলিতে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে। এছাড়াও দিল্লিতে যাবতীয় জ্যান্ত পাখির আমদানিতেও নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
মহারাষ্ট্রের পারবনিতে বিগত দুই দিনে প্রায় ৮০০ মুরগির মৃত্যু হওয়ায়, তাদের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। সেখান থেকেই জানা যায়, সে রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়েছে বার্ড ফ্লু। ওই অঞ্চলে প্রায় আটটি পোলট্রি ফার্ম রয়েছে। সেই ফার্মগুলির আট হাজার পাখিকে মারার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান জেলার কালেক্টর দীপক মাধুকর মুঙ্গলীকর। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী উদ্ভব ঠাকরে (Uddhav Thackeray)-ও আজ বিকেলে বার্ড ফ্লু পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে একটি বৈঠক ডেকেছেন।
আরও পড়ুন: কৃষক আন্দোলন সম্পর্কিত একাধিক মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে, ক্ষুব্ধ ‘অন্নদাতা’রা
এর আগে গুজরাট, হরিয়ানা, হিমাচল প্রদেশ, কেরল, মধ্য প্রদেশ, উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থানেও ধরা পড়েছে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ। তবে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে, এখনও কোনও মানব দেহে এই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েনি। সংক্রমণ রুখতে ইতিমধ্যেই যে রাজ্যগুলিতে পাখি মৃত্যু শুরু হয়েছে, তার আশেপাশের এলাকাগুলিতেও পাখি মেরে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কেরলে গত সপ্তাহে বার্ড ফ্লু ধরা পড়তেই প্রায় ৩৬ হাজার পাখি মারার নির্দেশ দিয়েছিল রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই প্রায় ১০ হাজার পাখি মারা হয়েছে সেখানে। রাশ টানা হয়েছে পোলট্রিজাত দ্রব্যের কেনাবেচাতেও। হরিয়ানাতেও শনিবার থেকে পাঁচকুলা জেলায় প্রায় দেড় লাখেরও বেশি পাখি মারার অভিযান শুরু হয়েছে। সেখানে গত দু-তিন সপ্তাহে প্রায় চার লাখ পাখির মৃত্যু হয়েছে এইচ৫এন৮ (H5N8) সংক্রমণে।
হিমাচল প্রদেশেও পরিযায়ী পাখির উপর বার্ড ফ্লুয়ের কোপ পড়েছে। কেবল পোং দাম অভয়ারণ্যেই প্রায় দুই হাজার পাখির মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে অধিকাংশই বার হেড প্রজাতির হাঁস। মানুষের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রুখতে পোলট্রিজাত পণ্য ও মাছের বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
কেন্দ্রের তরফে প্রতিটি রাজ্যে পরিস্থিতির উপর কড়া নজরদারি বজায় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যে রাজ্যে ইতিমধ্যেই পাখির মড়ক শুরু হয়েছে, সেখানে আধিকারিকদের প্রয়োজনীয় পিপিই কিট (PPE Kit) মজুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও বার্ড ফ্লুয়ে মৃত পাখিদের দেহ যেন অতি সাবধানতার সঙ্গে সরানো হয়, তার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ‘কে বন্ধু, কে শত্রু চিনতেই পারলাম না’, জোট নিয়ে আক্ষেপ নীতীশের গলায়