দিল্লি তরজা: ‘বড় দুর্নীতি থেকে রক্ষা’, কেজরীবালের ‘দুয়ারে রেশন’ প্রকল্পে দুর্নীতির আঁচ বিজেপির

সম্বিত পাত্রের মতে, দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল যদি কেন্দ্রের আইনের বাইরে গিয়ে রেশন বিতরণ করতে চান, তবে রাজ্য সরকার নিজের টাকায় রেশন কিনে তা বিতরণ করতেই পারেন।

দিল্লি তরজা: 'বড় দুর্নীতি থেকে রক্ষা', কেজরীবালের 'দুয়ারে রেশন' প্রকল্পে দুর্নীতির আঁচ বিজেপির
ফাইল চিত্র।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 07, 2021 | 3:28 PM

জ্যোতির্ময় রায় : করোনাকালে কেন্দ্রের কোপে দিল্লির মানুষ। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালের ‘ঘরে ঘরে রেশন’ কর্মসূচি বাতিল করে দিল কেন্দ্র। এদিকে, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে ন্যায়সঙ্গত বলেই মনে করছে বিজেপি। শাসকদলের দাবি, এর ফলে একটা বড় দুর্নীতি হওয়া থেকে আটকানো গেল। বিজেপির অভিযোগ, দিল্লি সরকারের উদ্দেশ্য ছিল এই প্রকল্পের মাধ্যমে গরিব মানুষদের নামে প্রাপ্ত রেশনকে অন্যপথে চালান করে বড়সড় দুর্নীতি করা।

‘ঘর-ঘর রেশন’ প্রকল্প বন্ধ করার জন্য কেন্দ্রকে দোষারোপ করে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল অভিযোগ করেন যে, আগামী সপ্তাহ থেকেই ‘ঘর-ঘর রেশন’ বাস্তবায়নের জন্য সমস্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু প্রকল্প শুরুর দু’দিন আগেই কেন্দ্রীয় সরকার এই প্রকল্পটি বন্ধ করে দিল।

এই বিষয়ে বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, “গরিবদের নথি বা রেশনকার্ডের উপর নির্ভর করেই রেশন দেওয়া হয়।  অরবিন্দ কেজরীবাল এমনভাবে কথা বলছেন যেন মোদী সরকার দিল্লির জনগণকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা অপপ্রচার।” তিনি আরও যোগ করে বলেন, “জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইন এবং প্রধানমন্ত্রীর গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার মাধ্যমে অন্যান্য রাজ্যের মতো দিল্লির অভাবগ্রস্থ মানুষদেরও রেশন সরবরাহ করা হয়। খাদ্য সুরক্ষা আইনের অধীনে দিল্লি সরকার প্রতি কেজি  গমে ২ টাকা ভর্তুকি দেয়। সেখানেই কেন্দ্রীয় সরকারও প্রতি কেজি গমে ২৩.৭ টাকা ভর্তুকি দেয়। একইভাবে, রাজ্য সরকার প্রতি কেজি চালে ৩ টাকা এবং কেন্দ্রীয় সরকার প্রতি কেজি চালে ৩৩.৭৯ টাকা ভর্তুকি দেয়। গরিবদের সাহায্যের জন্য দেওয়া রেশনে কেন্দ্র সরকারের সহযোগ রাজ্যের তুলনায় অনেকগুণ বেশি।”

সম্বিত পাত্রের কথায়, দিল্লির অরবিন্দ কেজরিওয়াল যদি কেন্দ্রের আইনের বাইরে গিয়ে রেশন বিতরণ করতে চান, তবে রাজ্য সরকার নিজের টাকায় রেশন কিনে তা বিতরণ করতেই পারেন। কেন্দ্রীয় সরকার বা অন্য কারোর এই বিষয় নিয়ে কোনও আপত্তি থাকবে না। বিজেপি নেতার অভিযোগ, “মে মাস থেকে ৫ জুন অবধি প্রধানমন্ত্রী গরিব কল্যাণ অন্ন যোজনার আওতায় ৭২ হাজার ৭৮২ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য দিল্লির জন্য ধার্য করা হয়েছে। কিন্তু দিল্লি সরকার এ পর্যন্ত প্রায় ৫৩,০০০ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছে এবং এর মধ্যে মাত্র ৬৮ শতাংশ জনগণকে বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে কেজরীবাল সরকার।”

দিল্লি সরকারের ‘ঘর ঘর রেশন’ প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিজেপি নেতার দাবি, দিল্লিতে রেশন বিতরণের জন্য আধার কার্ড নথিভুক্তকরণের বা ইলেকট্রনিক পয়েন্ট অফ সেল (ই-পস) কম্পিউটারাইজড সিস্টেম নেই। যেখানে রেশন বিতরণের জন্য উভয় ব্যবস্থাকেই প্রযোজ্য করা হয়েছে, সেখানে দেশের রাজধানীতেই এই বিষয়ে কোন ব্যবস্থাই নেই। অথচ দেশের ছোট ছোট রাজ্যে গুলিতেও এই ব্যবস্থা আছে। এই নিয়ে সম্বিত পাত্র প্রশ্ন করেন, “কীভাবে জানা যাবে যে রেশনটি সঠিক ব্যক্তির কাছেই পৌঁছেছে? কাদের রেশন দেওয়া হচ্ছে, তা আমরা জানতেও পারব না। রেশন সঠিক লোকের কাছেই পৌচ্ছছে, আমরা তা বুঝব কি ভাবে?”

তাঁর আরও অভিযোগ, কেজরিওয়াল সরকার “ওয়ান নেশন-ওয়ান রেশন কার্ড”-র বিধানকে মানতে রাজি নয়। এর ফলে হাজার- হাজার সাধারণ মানুষ রেশন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কেন্দ্র গরিব-বিরোধী নয়। সরকারের দেওয়া সুযোগ-সুবিধা ন্যায্য লোকের কাছে পৌঁছে যাক, এটাই মোদী সরকারের লক্ষ্য এবং এই কর্মযজ্ঞ একমাত্র ডিজিটাল প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই সম্ভব।

উল্লেখ্য, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল কয়েকদিন আগে জানিয়েছিলেন, ‘ঘর ঘর রেশন’ প্রকল্পটিতে দিল্লির ৭২ লক্ষ গরিব পরিবারকে মাসে ১০ কেজি রেশন দেবে দিল্লি সরকার। এরমধ্যে দিল্লি সরকার ৫ কেজি রেশন এবং কেন্দ্র ৫ কেজি রেশন বিনামূল্যে দেবে। এই মাসে পুরো রেশনটিই বিনামূল্যে দেওয়া হবে।

দুর্নীতি মুক্ত সমাজব্যবস্থা এবং অর্থব্যবস্থা গড়ে তুলতে ডিজিটাল লেনদেনের ভূমিকা একান্ত আবশ্যক। বর্তমানে অপেক্ষা কেবল দুর্নীতি মুক্ত ভারতের!

আরও পড়ুন: ডমিনিকায় অপহরণ করে আনা হয়েছিল চোকসিকে? তদন্তের নির্দেশ অ্যান্টিগুয়ার প্রধানমন্ত্রীর