Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

বিরিয়ানি খাইয়ে স্বামীকে খুন! ছেলের সাক্ষ্যে ফাঁসি মায়ের

British woman to be hanged: বিচারক এই মামলাটিকে 'বিরলের মধ্যে বিরলতম' বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই ক্ষেত্রে শুধু সুখজিৎই খুন হননি, তাঁর মায়ের জীবনের বাকি বছরগুলিকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের সন্তানদের শৈশব এবং যৌবন নষ্ট হয়েছে। বাবা বেঁচে থাকলে তারা যে সুখ পেতে পারত, তার থেকে বঞ্চিত হয়েছে তারা।

বিরিয়ানি খাইয়ে স্বামীকে খুন! ছেলের সাক্ষ্যে ফাঁসি মায়ের
সুখজিৎ সিং এবং রামনদীপ কওর মান Image Credit source: Twitter
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 19, 2023 | 9:02 PM

নয়া দিল্লি: বিরিয়ানি ছিল ব্রিটিশ-ভারতীয় ব্যবসায়ী সুখজিৎ সিংয়ের প্রিয় খাবার। স্ত্রী, রামনদীপ কওর মান যখন তাঁর হাতে বিরিয়ানির থালা তুলে দিয়েছিলেন, স্বাভাবিকভাবেই কোনও সন্দেহই করেননি তিনি। কিন্তু, সেই বিরিয়ানির মধ্যেই মেশানো ছিল ঘুমের ওষুধ। ফলে রাত্রিবেলা গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন সুখজিৎ। আর সেই সুযোগে তাঁকে মুখে বালিশ চাপা দিয়ে, মাথায় হাতুড়ির বাড়ি মেরে এবং অবশেষে তাঁর গলা চিড়ে দিয়ে হত্যা করেছিল তাঁর স্ত্রী রামনদীপ এবং তাঁর ছোটবেলার অভিন্ন-হৃদয় বন্ধু গুরপ্রীত সিং। এই হত্যার পিছনে ছিল দুটি উদ্দেশ্য – রামনদীপ এবং গুরপ্রীত বিয়ে করতে চেয়েছিল। সেই সঙ্গে, সুখজিতের সম্পত্তি এবং জীবনবিমার টাকা হাতাতে চেয়েছিল তারা।

ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর, দিল্লিতে সুখজিতের মায়ের বাড়িতে। সম্প্রতি, দিল্লির এক আদালত স্বামীকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দিল্লির এক আদালত। গুরপ্রীতকে মৃত্যুদণ্ড না দেওয়া হলেও, তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে রয়েছে মোটা টাকার জরিমানা। তবে, এই মামলার সবথেকে চাঞ্চল্যকর বিষয় হল, বাবাকে হত্যার জন্য মায়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছে রামনদীপ এবং সুখজিতের বড় ছেলে অর্জুন।

পুলিশ জানিয়েছে, বাড়িতে তৈরি বিরিয়ানির মশলার সঙ্গেই ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছিলেন রামনদীপ। ওই বিরিয়ানি খেয়েছিলেন সুখজিৎ এবং তাঁদের ছোট ছেলে আর্য। তবে বড় ছেলে অর্জুন ওই বিরিয়ানি যায়নি। রাতে, আচমকা বাবার গোঙানির শব্দে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল তার। আদালতে সে জানিয়েছে, রাতে বাবার পাশেই শুয়েছিল মা। মাঝরাতে ঘুম ভাঙার পর সে দেখেছিল, বাবার মুখে একটি বালিশ চেপে ধরেছে তার মা। এরপর, এসেছিল গুরপ্রীত। তার মা, বাবার দুই হাত চেপে রেখেছিল, আর গুরপ্রীত তার মাথায় হাতুড়ির বাড়ি মেরেছিল। তারপর, রামনদীপ একটি ছুরি দিয়ে চিড়ে দিয়েছিল সুখজিতের গলা। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয়েছিল সুখজিতের।

পরে, তাঁর মায়ের বাড়ির কাছেই এক ঝোপ থেকে ওই ছুরিটি পেয়েছিল পুলিশ। তারপরই গ্রেফতার করা হয়েছিল রামনদীপকে। তাঁকে জেরা করে পুলিশ তাঁর আর গুরপ্রীতের সম্পর্কের বিষয়ে জানতে পেরেছিল। দুবাই যাওয়ার পথে, দিল্লি বিমান বন্দর থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল গুরপ্রীতকে। অথচ গুরপ্রীত ছিল সুখজিৎ সিং-এর ভাইয়ের মতো। একেবারে গলায়-গলায় বন্ধু যাকে বলে।

২০০২ সালে সুখজিৎ সিং পাড়ি দিয়েছিলেন ব্রিটেনে। আর গুরপ্রীত দেশ ছেড়ে থাকতে শুরু করেন দুবাইয়ে। ব্রিটেনেই রামনজিতের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল সুখজিতের। ২০০৫-এ তাঁরা বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর তাঁরা ডার্বিসায়ারে থাকতেন। কিন্তু, দুজনের সম্পর্কের রসায়ন বদলে গিয়েছিল এক ছুটিতে। স্ত্রীকে নিয়ে দুবাইয়ে বন্ধু গুরপ্রীতের বাড়ি গিয়েছিলেন সুখজিৎ। সেই সময়ই সুখজিতের আড়ালে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল গুরপ্রীত এবং রামনদীপের মধ্যে। পরবর্তী সময়ে টেক্সট মেসেজ এবং ভিডিয়ো কলে সেই সম্পর্কের গভীরতা আরও বাড়ে। সেই সময় থেকেই বিয়ে ভেঙে বেরিয়ে আসার পরিকল্পনা করতে শুরু করেছিল রামনদীপ।

গুরপ্রীত তাঁকে পরামর্শ দিয়েছিল, সুখজিৎকে নিয়ে এক মাসের জন্য ভারতে আসতে। সেই পরিকল্পনা মেনে সুখজিৎকে নিয়ে তাঁর মায়ের বাড়িতে এসেছিল রামনদীপ। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছিল গুরপ্রীতও। আর তারপরই, দুজনে মিলে খুন করেছিল সুখজিৎ সিংকে। সুখজিৎ আর গুরপ্রীত এতটাই ঘনিষ্ঠ ছিলেন, যে গুরপ্রীত এই কাজ করেছে, সুখজিতের পরিবার এখনও তা বিশ্বাসই করতে পারছে না। তবে, রামনদীপের মধ্যে কোনও অনুশোচনা দেখা যায়নি। গ্রেফতারের পর থেকে সে সমানে দোষ অস্বীকার করে গিয়েছে।

রায় ঘোষণার সময় বিচারক জানিয়েছেন, রামনদীপের এই শাস্তি প্রাপ্য। কারণ তিনি তঁর নিজের স্বামীকে হত্যার জন্য তাঁকে এবং নিজের সন্তানদের মাদক সেবন করিয়েছিলেন। গুরপ্রীতের সঙ্গে ঘর করার পাশাপাশি জীবন বিমার মোটা টাকা এবং লন্ডন ও ভারতে সুখজিতের সম্পত্তি হাতানোর মতলব ছিল তার। বিচারক এই মামলাটিকে ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ বলেছেন। তিনি জানিয়েছেন, এই ক্ষেত্রে শুধু সুখজিৎই খুন হননি, তাঁর মায়ের জীবনের বাকি বছরগুলিকে হত্যা করা হয়েছে। তাদের সন্তানদের শৈশব এবং যৌবন নষ্ট হয়েছে। বাবা বেঁচে থাকলে তারা যে সুখ পেতে পারত, তার থেকে বঞ্চিত হয়েছে তারা। ব্রিটেনের আদালতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, সুখজিৎ এবং রামনদীপের দুই ছেলে এখন সুখজিতের পরিবারের সঙ্গে থাকবে।