Bipin Rawat Death: বিতর্ককে ভয় পেতেন না সেনা সর্বাধিনায়ক বিপিন রাওয়াত, মুখে বলতেন মনের কথা
Bipin Rawat Death: ২০১৬ সালে তাঁকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেনা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পাকিস্তান প্রসঙ্গে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছিলেন তিনি। কাশ্মীরেও এই সময়ে বিশেষ সক্রিয় হয়ে ওঠে সেনা।
সৈয়দ আতা হাসনাইন (লে. জেনারেল): গতকালই তামিলনাড়ুর ওয়েলিংটনের কাছে নীলগিরিতে ভয়াবহ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন সস্ত্রীক সেনা সর্বাধিনায়ক বিপিন রাওয়াত সহ ১১ জন। এমআই-১৭ হেলিকপ্টার দুর্ঘটনাতেই প্রাণ হারিয়েছেন সেনা সর্বাধিনায়ক। এই দুর্ঘটনার খবর সামনে আসার পর থেকে দেশের প্রথম সিডিএসের সুরক্ষা কামনায় প্রার্থনা করছিল সমগ্র দেশ। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি, দেশ হারিয়েছে এক বীর সন্তানকে। দেশকে এখনও অনেক কিছু দেওয়া বাকি ছিল জেনারেল রাওয়াতের। তার আগেই অজানার দেশে পাড়ি দিলেন সিডিএস রাওয়াত।
ভারতীয় সেনা বাহিনীর ৫/১১ গোরখা রাইফেল থেকেই নিজের কর্মজীবন শুরু করেছিলেন রাওয়াত। এরপরেই সেনা সদর দফতরে কর্ণেল পদে যোগদান করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি। সেখানে সেনা অফিসারদের দায়িত্বভাগ ও তাদের কর্মজীবন সংক্রান্ত অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতেন জেনারেল রাওয়াত। এই দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি বিপিন রাওয়াতকে। লেফট্যান্যান্ট জেনারেল সৈয়দ হাসনয়ন লিখেছেন, কাশ্মীরের বারমুলাতে ফিরে গিয়ে সেখানেই তিনি রাষ্ট্রীয় রাইফেলের প্রধান দায়িত্বে সোপোরে বিপিন রাওয়াতের দেখা পেয়েছিলেন।
জেনারেল হাসনয়ন জানিয়েছেন, সেই সময়ে কাশ্মীরের সবদিকই জঙ্গিতে ছেয়ে গিয়েছিল। বিপিন রাওয়াত তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন বলেই জানিয়েছেন তিনি। সেই সময় কখনই নিজের দফতরে থাকতেন না রাওয়াত, সর্বদাই তিনি ঘুরে ঘুরে পরিস্থিতিক তদারকি করতেন। এরপরেই দিল্লিতে ন্যাশানাল ডিফেন্স কলেজে সেনা বিষয়ক একটি কোর্স করতে যান, সেখান থেকেই রাষ্ট্রপুঞ্জে বিশেষ অপারেশনে ভারতীয় দলের কমান্ডার হিসেবে আফ্রিকার কঙ্গোতে গিয়েছিলেন।
সেখান থেকে ফিরে আসার পরই তাঁকে মেজর জেনারেল পদে উন্নীত করা হয়। জেনারেল হাসনয়ন জানিয়েছেন, সেনা প্রধানের কাছে তিনি বিপিনকে কাশ্মীরে পাঠানোর অনুরোধ করেছিলেন। কাশ্মীরে আমার অধীনে কাজ করার সময় আমাদের পুরোনো সুসম্পর্কের কারণে আমরা যেভাবে কাশ্মীরে বাহিনীকে পরিচালিত করেছি তাতে সেনার অনেক উন্নতি হয়েছে বলেই মনে হয়। সেই সময়ে জেনারেল ভিপি সিংহ সেনা প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।
এর পরবর্তী সময়ে বিপিনের সাফল্যের মুকুটে একের পর এক পালক জুড়তে থাকে। কিছুদিন আগেও নাগাল্যান্ডের দিমাপুরে হেলিকপ্টার দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচেছিলেন বিপিন রাওয়াত। তিন বাহিনীর প্রধান হিসেবে তাঁকে ঘনঘন হেলিকপ্টারে যাতায়াত করতে হত। মণিপুরের এক জঙ্গি সংগঠনের আক্রমণে ২০১৫ সালের জুন মাসে যখন অনেক জন সেনা জওয়ান মারা গিয়েছিলেন, তার প্রত্যাঘাতেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন জেনারেল রাওয়াত। হাসনয়ন জানান, বহুল চর্চিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের আগে আমি তাঁর সঙ্গে দেখা করেছিলাম, তখন তিনি সেনার উপপ্রধান। সেই সময় তিনি আমাকে যাবতীয় পরিকল্পনার কথা জানিয়েছিলেন।
২০১৬ সালে তাঁকে সেনাপ্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেনা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর পাকিস্তান প্রসঙ্গে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছিলেন তিনি। কাশ্মীরেও এই সময়ে বিশেষ সক্রিয় হয়ে ওঠে সেনা। এমনকি কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের পরও কাশ্মীরে বড় কোনও ঘটনা ঘটাতে পারেনি বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিরা। তাই দেশের স্বাভাবিকভাবেই দেশের সেনা সর্বাধিনায়ক হিসেবে রাওয়াতই ছিলেন সরকারের প্রথম পছন্দ।
সেনা বিষয়ক বিভাগ ও প্রতিরক্ষা বিভাগ নিশ্চিন্তেই তাঁর ওপর ছেড়ে নিশ্চিন্ত ছিলেন সরকারে শীর্ষকর্তারা। সেখানে স্বাধীনভাবেই কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলেন তিনি। সিডিএসের দায়িত্ব নিয়েই তিন বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার জন্য একজন শীর্ষকর্তার বদলে এক প্রতিরক্ষা কর্মী হিসেবে কাজ করেছিলেন জেনারেল রাওয়াত। তাই তিনি বাহিনীতে আলাদাভাবে সম্মানের জায়গা তৈরি হয়েছিল।
দেশের সেরা তিন বাহিনীর নেতা হিসেবে, জেনারেল বিপিন রাওয়াত মনে যা আসতেন মুখেও তাই বলতেন। কোনও ধরনের বিতর্ককে তিনি ভয় পাননি। নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তিনিু বুঝতেন বিতর্ক যতই হোক আসলে সেই বক্তব্যে বাহিনী তথা দেশের উন্নতিই হবে। দেশের সেনা বাহিনীতে সব থেকে বেশি বয়স অবধি কাজ করা আধিকারিকের রেকর্ডও বিপিনের। তিনি যদি সিডিএসের দায়িত্বকালের ৬ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারতেন তবে দেশ সম্বৃদ্ধ হত।