অজানা জ্বরে নয়, ফিরোজাবাদে ১০ দিনে ৫০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুর কারণেই, জানাল কেন্দ্রীয় দল

ফিরোজাবাদের জেলাশাসক চন্দ্রবিজয় সিং সম্প্রতিই জানান যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি দলের তরফে উপসর্গ ও সংক্রমণের হার দেখে এটিকে হেমারোজিক ডেঙ্গু বলে জানিয়েছে।

অজানা জ্বরে নয়, ফিরোজাবাদে ১০ দিনে ৫০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুর কারণেই, জানাল কেন্দ্রীয় দল
হাসপাতালে ভর্তি এক রোগীর দেখভাল করছেন পরিজন। ছবি:PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 04, 2021 | 2:23 PM

লখনউ: অজানা জ্বরের আসল কারণ জানা গেল অবশেষে। উত্তর প্রদেশে বিগত দুই সপ্তাহে ৫০ জন শিশু সহ ৬০ জনের যে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে, তার কারণ হিসাবে দায়ী করা হল “ডেঙ্গু হেমারোজিক ফিভার”-কেই। অজানা জ্বরে শিশু মৃত্যুর কারণ জানতেই কেন্দ্রীয় দল পাঠানো হয়েছিল, তাদের মৌখিক রিপোর্টের ভিত্তিতেই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে এই খবর জানা গিয়েছে।

প্রবল জ্বর, খিঁচুনি, রক্তে প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যাওয়া এবং শরীরে জল শুকিয়ে যাওয়ার মতো উপসর্গ নিয়ে উত্তর প্রদেশের বিভি্ন্ন জেলায় অনেকে ভর্তি হচ্ছিলেন। অজানা জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক রোগীর খোঁজ মিলছে ফিরোজাবাদ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলি থেকেই। চিকিৎসকরা প্রথমেই ডেঙ্গু বলে সন্দেহ করলেও দু-তিনদিনের মধ্যেই শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ও তারপর মৃত্যু হওয়ায় গোটা রাজ্যেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফিরোজাবাদে বিগত ১০ দিনেই ৪৫টি শিশুর মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসার পরই বিশেষ তদন্তের নির্দেশ দেয় উত্তর প্রদেশ সরকার। কেন্দ্রের তরফেও চিকিৎসক, বিশেষজ্ঞদের একটি দল পাঠানো হয়।

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক সূত্রে জানানো হয়েছে, ফিরোজাবাদ ও তার আশেপাশের এলাকা থেকে প্রায় ২০০ জনের দেহের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। এদের মধ্যে প্রায় ৫০ শতাংশের রিপোর্টই ডেঙ্গু পজেটিভ এসেছে। সেই রিপোর্টের ভিত্তিতেই ওই অঞ্চলে ডেঙ্গু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

ফিরোজাবাদের জেলাশাসক চন্দ্রবিজয় সিং সম্প্রতিই জানান যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি দলের তরফে উপসর্গ ও সংক্রমণের হার দেখে এটিকে হেমারোজিক ডেঙ্গু বলে জানিয়েছে। দেহে আচমকা প্লেটলেটের সংখ্যা কমে যাওয়ায় রক্তক্ষরণের মতো ঘটনাও ঘটছে বলে তিনি জানান।

এদিকে, কেন্দ্রের তরফেও ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের ছয় সদস্য়ের একটি দল পাঠানো হয়। এদের মধ্য়ে মশাবাহিত রোগের বিশেষজ্ঞরাও রয়েছেন। সোমবার ওই দলটি রিপোর্ট জমা দেবে। সূত্রের খবর, সেই রিপোর্টে ডেঙ্গুর পাশাপাশি স্ক্রাব টাইফাস বা বুস টাইফাসের কারণে জ্বর আসার প্রমাণ মিলেছে। পরীক্ষায় একাধিক নমুনায় সবজি বা ঝোপঝাড়ে পাওয়া যাওয়া এই পোকার উপস্থিতির প্রমাণ মিলেছে।

ফিরোজাবাদ ছাড়াও মথুরা, আগ্রা উত্তর প্রদেশের পূর্বাংশের একাধিক জায়গায় অজানা জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। হাসপাতালগুলির অবস্থাও শোচনীয়। অধিকাংশ জায়গাতেই বেড পাওয়া যাচ্ছে না, অসুস্থ রোগীদের মাটিতে শুইয়ে রেখে চিকিৎসা চালানো হচ্ছে। মথুরার  একটি গ্রামে বিগত ১৫ দিনেই ১১ শিশুর মৃত্যু হয়েছে।  দু-তিনদিনের জ্বরেই মৃত্যু হচ্ছে ছোট বাচ্চাদের। একবার জ্বরে পড়লে সুস্থ হতে সময় লাগছে কমপক্ষে দুই সপ্তাহ। শিশুদের ক্ষেত্রে সময়টা আরও বেশি।

সোমবারই ফিরোজাবাদের পরিস্থিতি যাচাই করে দেখতে সেখানে যান মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। তিনি বলেন, “মেডিক্যাল কলেজগুলিকে তৎপর থাকতে বলা হয়েছে। রোগীদের চিকিৎসার জন্যও যথেষ্ট সংখ্যক চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীর ব্যবহার করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও বিশেষ তদন্তকারী দল পাঠানো হচ্ছে। এত সংখ্যক রোগীদের মৃত্যুর কারণ তদন্ত করে দেখবে তারা।”

এ দিকে, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গান্ধী রাজ্য সরকারকেই দোষারোপ করেছেন। তিনি টুইটারে লিখেছেন, করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা থেকেও রাজ্য সরকার শিক্ষা নেয়নি। প্রশাসনের গাফিলতিতেই ১০০-রও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।  আরও পড়ুন: ‘ভ্রূণেরও নিজস্ব প্রাণ রয়েছে’, গর্ভাবস্থার ৩১ সপ্তাহে গর্ভপাতের আবেদন খারিজ কেরল হাইকোর্টের