বিশ্ব উষ্ণায়নের খাঁড়া! ১২১ বছরে দ্বিতীয় উষ্ণতম শীত দেশে

নয়াদিল্লি মৌসম ভবনের রিপোর্টে স্পষ্ট, দিনে দিনে ফিকে হচ্ছে শীত। বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে বলছেন, পুরোটাই বিশ্ব উষ্ণায়নের বা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের (Global Warming) প্রভাব।

বিশ্ব উষ্ণায়নের খাঁড়া! ১২১ বছরে দ্বিতীয় উষ্ণতম শীত দেশে
ছবি- টুইটার
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Mar 04, 2021 | 9:29 AM

কমলেশ চৌধুরী: ফাল্গুনেই চাঁদিফাটা রোদ্দুর। শীত (Winter) যেতে না যেতেই শুরু গ্রীষ্মের (Summer) ট্রেলার! এ বার ধীরে ধীরে গরম পড়বে, আরও গরম বাড়বে গ্রীষ্মে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু শীতেও উষ্ণতার রেকর্ড! একটি নয়, একাধিক। এ রকমই উলটপুরাণের সাক্ষী থাকল সদ্য বিদায় নেওয়া শীত। নয়াদিল্লি মৌসম ভবনের রিপোর্টে স্পষ্ট, দিনে দিনে ফিকে হচ্ছে শীত। বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে বলছেন, পুরোটাই বিশ্ব উষ্ণায়নের বা গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের (Global Warming) প্রভাব।

শীতের শুরুতেই আবহাওয়া দফতর জানিয়েছিল, উত্তর ভারত ছাড়া দেশের অন্য জায়গায় একটানা প্রবল ঠান্ডার সম্ভাবনা কম। দক্ষিণবঙ্গে সর্বনিম্ন তাপমাত্রার গড় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকার আভাস দিয়েছিল মৌসম ভবন। বাস্তবেও হয়েছে তাই। দিল্লি, হরিয়ানা, রাজস্থান হাড়-হিম ঠান্ডায় কাঁপলেও দেশের বাকি জায়গায় অনেকটাই ম্লান ছিল শীত। যেমন, দক্ষিণবঙ্গে জানুয়ারির শুরুতে প্রায় নিখোঁজই হয়ে গিয়েছিল শীত। সব মিলিয়ে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারির সমস্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে মৌসম ভবন জানিয়েছে, ঠান্ডার নয়, উষ্ণতার রেকর্ড গড়েছে ২০২১।

কী সেই রেকর্ড?

প্রথম রেকর্ড, সর্বনিম্ন তাপমাত্রার নিরিখে ১২১ বছরে দ্বিতীয় উষ্ণতম জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারির তকমা পেয়েছে ২০২১। এই তালিকার শীর্ষে ২০১৬। প্রথম পাঁচে ২০০৯, ১৯২৬, ১৯১২ সালও। দ্বিতীয় রেকর্ড, গড় তাপমাত্রার নিরিখে ১২১ বছরে তৃতীয় উষ্ণতম এ বারের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি। আগে শুধু ২০১৬, ২০০৯। সবচেয়ে বড় কথা, প্রথম পাঁচে এই শতাব্দীরই ৫। এর আগেই মৌসম ভবন জানিয়েছিল, ৬২ বছরের মধ্যে এ বছর উষ্ণতম জানুয়ারি হয়েছে দেশে। ১২১ বছরের ইতিহাসে ১৯১৯ সালের পরই ২০২১। কলকাতায় জানুয়ারি ছিল ১২১ বছরের মধ্যে চতুর্থ উষ্ণতম। শুধু জানুয়ারি নয়, ঠান্ডার বদলে গরমের রেকর্ড করেছিল ডিসেম্বরও। গড় তাপমাত্রার অঙ্কে ১২১ বছরে সপ্তম উষ্ণতম ডিসেম্বর পেয়েছিল ২০২০।

এর অর্থ কি শীত একেবারে পড়েনি?

তা নয়। বছরের পয়লা দিন রাজধানীতে তাপমাত্রা নেমেছিল ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ২০০৬ সালের পর জানুয়ারিতে এটাই দিল্লির শীতলতম দিন। রাজস্থান, হরিয়ানায় বেশ কয়েকদিন তাপমাত্রা ছিল হিমাঙ্কের নীচে। দফায় দফায় তুষারপাতে হাড়কাঁপানো শীতের মুখোমুখি হয়েছে কাশ্মীর, হিমাচল। রেকর্ডভাঙা ঠান্ডা পড়েছে শ্রীনগরে। কিন্তু প্রথমত, একটানা ঠান্ডা পড়েনি। দ্বিতীয়ত, ঠান্ডার দাপট সীমাবদ্ধ ছিল মূলত উত্তর ভারতেই। পূর্ব ভারত দূর, মধ্য ভারতেও সে ভাবে কাঁপুনি ধরাতে পারেনি। কলকাতার কথাই ধরা যাক। জানুয়ারিতে ১২.১ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে তাপমাত্রা নামেনি। তার চেয়ে বেশি ঠান্ডা পড়ে ফেব্রুয়ারি মাসে। আবার সেই মাস শেষ হওয়ার আগেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে যায় ৩৬.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।

আরও পড়ুন: ভোটের আগে ‘ঋণমুক্ত’ হতে মরিয়া বিধায়করা, হুড়োহুড়ি বিধানসভায়

বিশেষজ্ঞরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, দুনিয়ার প্রথম ১০টি উষ্ণতম বছরের সব ক’টিই চলতি শতকের। ভারতেও তার ছায়া। এমনকী শীতেও। বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব?

এই তত্ত্বেই সায় দিয়ে মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান তথা উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, “এ বারের শীতে গড় সর্বোচ্চ, গড় সর্বনিম্ন, গড় তাপমাত্রা সবই স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। দেখা যাচ্ছে, এই প্রবণতা এ বারই প্রথম নয়। উষ্ণতম শীতের তালিকায় রয়েছে চলতি শতকেরই বেশিরভাগ বছর। ২০০৬, ২০০৯, ২০১৬, ২০১৭, ২০২১। এটা স্পষ্ট, গ্রীষ্ম বা বর্ষার সময় তাপমাত্রার উপর বিশ্ব উষ্ণায়নের যত না প্রভাব পড়ছে, তার চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে শীতকালেই।” পুনের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী রক্সি ম্যাথু কলেরও মন্তব্য, “প্রশান্ত মহাসাগরে এল নিনো থাকলে বিশ্বের তাপমাত্রা বেশি থাকে, লা নিনা থাকলে হয় উল্টোটা। এ বার লা নিনা ছিল। তা সত্ত্বেও এল নিনো বছরের চেয়ে তাপমাত্রা বেশি থাকল। আসলে গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণের ফলে যে বিশ্ব উষ্ণায়ন হচ্ছে, তাতে লা নিনোর ঠান্ডা প্রভাবও থাকছে না। ২০২০-২১-এর শীতের মরসুম এরই উদাহরণ হয়ে থাকবে।”

গরম পড়লে যে কী হবে, ভাবলেই দুশ্চিন্তা বাড়ছে আমজনতার।

আরও পড়ুন: অবিলম্বে সরাতে হবে সমস্ত সরকারি বিজ্ঞাপনের ছবি, নির্দেশ কমিশনের