সাড়ে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে ‘অপমান’, স্থির হল না আগামি বৈঠকের দিনও
বৈঠক শেষে কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার (Narendra Singh Tomar) গম্ভীর মুখে বলেন, "কৃষি আইন নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কৃষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকার এখনও দেড় বছরের জন্য আইন স্থগিত রাখতে রাজি।"
নয়া দিল্লি: সমাধান সূত্র তো দূরের কথা, আগামি বৈঠকের দিনও স্থির হল না কেন্দ্র-কৃষকদের মধ্যে একাদশতম বৈঠকে (Centre-Farmers Talk)। কৃষি আইন নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করতে শুক্রবার দুপুর একটা নাগাদ বিজ্ঞান ভবনে পৌঁছে যান কৃষক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। বিকেল পাঁচটা নাগাদ শেষ হয় সেই বৈঠক। তবে কৃষকদের দাবি, তাঁদের প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা অপেক্ষা করিয়ে রেখেছিল মন্ত্রীরা। এভাবে অপেক্ষা করিয়ে তাঁদের অপমান করা হয়েছে। দুই পক্ষই নিজেদের অবস্থানে অটল থাকায় এই বৈঠকেও কৃষি আইন (Farm Laws) নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি।
গত বৈঠকেই কৃষকরা আইন স্থগিত রাখার প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও আজকের বৈঠকে সরকার তাঁদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দেয়। তবে মধ্যাহ্নভোজনের সময়েই কৃষক সংগঠনের নেতা দর্শন পাল বলেন, “আমরা সরকারকে জানিয়েছি যে আইন প্রত্যাহার ছাড়া অন্য কোনও প্রস্তাব গ্রহণ করা হবে না। তবুও মন্ত্রী আমাদের আলাদাভাবে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছেন।”
বৈঠক শেষে কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমার (Narendra Singh Tomar) গম্ভীর মুখে বলেন, “কৃষি আইন নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কৃষকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সরকার এখনও দেড় বছরের জন্য আইন স্থগিত রাখতে রাজি।” তিনি আরও যোগ করে বলেন, “আমরা কৃষকদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য প্রস্তাব দিয়েছি। আগামিকাল তাঁদের সিদ্ধান্ত জানাতে বলা হয়েছে।”
We asked them to reconsider our proposal as it is in the interest of farmers and the country. We asked them to convey their decision tomorrow: Union Agriculture Minister Narendra Singh Tomar on the eleventh round of talks between farmer unions and the government https://t.co/3D8Ka2AXfG
— ANI (@ANI) January 22, 2021
অন্যদিকে কৃষক নেতারা জানান, পাঁচঘণ্টা ধরে বৈঠক চললেও দুইপক্ষ মাত্র আধ ঘণ্টার জন্য মুখোমুখি বসে আলোচনা করেছে। কিষাণ মজদুর সংঘর্ষ কমিটির প্রধান এসএস পান্ধের বলেন, “মন্ত্রী আমাদের সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করতে বাধ্য করেছে। কৃষকদের কাছে এটা অপমানজনক। তিনি এসে আমাদের সরকারের প্রস্তাব পুনর্বিবেচনা করতে বলেন এবং জানান যে বৈঠক প্রক্রিয়া শেষ করা হচ্ছে।”
The minister made us wait for three & a half hours. This is an insult to farmers. When he came, he asked us to consider the govt’s proposal & said that he is ending the process of meetings… The agitation will continue peacefully: SS Pandher, Kisan Mazdoor Sangharsh Committee pic.twitter.com/J1ppwGfHCn
— ANI (@ANI) January 22, 2021
আরও পড়ুন: জুন মাসেই কংগ্রেস পাবে ‘নতুন মুখ’, জোর জল্পনা রাহুলের অবস্থান ঘিরে
বৈঠক শেষে ভারতীয় কৃষক ইউনিয়ন ক্রান্তিকারীর রাজ্য সভাপতি সুরজিৎ সিং ফুল বলেন, “পরবর্তী বৈঠক কবে হবে, সে বিষয়ে সরকার কিছু জানায়নি।” একইসঙ্গে কৃষকরা জানান, তারা শান্তিপূর্ণভাবে যেমন আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিলেন, তা বজায় রাখা হবে। আন্দেলন কর্মসূচিতে কোনও পরিবর্তন আনা হবে না।
গত বৈঠকে কেন্দ্রের তরফে কৃষকদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, সরকার এক থেকে দেড় বছরের জন্য তিনটি কৃষি আইন স্থগিত রাখতে রাজি। সেই সময়ের মধ্যে কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধান সূত্র পাওয়া যাবে। প্রথমে কৃষকের অধিকাংশ নেতাই সরকারের এই প্রস্তাবে রাজি হলেও পরেরদিনই তাঁরা জানিয়ে দেন, আইন প্রত্যাহারের দাবিতেই অটল থাকবেন তাঁরা।
অন্যদিকে কৃষিমন্ত্রী নরেন্দ্র সিং তোমারও দু’দিন আগেই বলেছিলেন, “কৃষকদের সঙ্গে আলোচনা ইতিবাচক দিকেই এগোচ্ছে। আশা করছি ২২ জানুয়ারির বৈঠকে সমাধানসূত্র পাওয়া যাবে।” সেদিনের মন্তব্যের পর আজকের বৈঠকে কী কারণে কৃষকদের সাড়ে তিনঘণ্টা অপেক্ষা করাল সরকার এবং কেনই বা পরবর্তী বৈঠকের দিন ঘোষণা করা হল না, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
বৈঠক নিয়ে কেন্দ্রের এই বিমুখতার পিছনে অন্য কারণ রয়েছে বলেই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের। তাঁদের মতে, কৃষকদের সঙ্গে আলোচনার বদলে সরকার ফের একবার সুপ্রিম কোর্ট (Supreme Court)-র দারস্থ হতে পারে কিংবা সংসদেও এই বিষয়ে আলোচনা করতে পারে। এছাড়াও গতকাল সুপ্রিম কোর্ট গঠিত কমিটিও গতকাল কৃষকদের সঙ্গে কথা বলায় আলাদাভাবে কেন্দ্র বৈঠক আয়োজন করতে চাইছে না বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।
প্রজাতন্ত্র দিবসে ট্রাক্টর মিছিল (Tractor Rally) নিয়েও কৃষকরা জানান, তাঁরা দিল্লির আউটার রিং রোডেই ১৬-১৭ কিলোমিটার ধরে ট্রাক্টর মিছিল করবেন। এতে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে কোনও প্রভাব পড়বে না। কর্নাটকের কৃষকরাও এই আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছেন এবং প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন বেঙ্গালুরুতে ট্রাক্টর মিছিল বের করার কথা ঘোষণা করেছেন।কর্নাটকের কৃষক সংগঠনের নেতা বলেন, “প্রজাতন্ত্র দিবসের দিন প্রায় ২৫ হাজার কৃষক বেঙ্গালুরুতে প্রবেশ করবে এবং যশবন্তপুর ও মালেশ্বরমের রাস্তা ধরে ফ্রিডম পার্কে পৌঁছবেন। প্রায় ১০ হাজার ট্রাক্টর এই মিছিলে অংশ নেবে।”
এমসিপি নেতা শরদ পাওয়ার (Sharad Power)-ও জানিয়েছেন, কৃষকদের সমর্থনে মুম্বইয়ে যে প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে তিনি অংশগ্রহণ করবেন।
আরও পড়ুন: প্রয়োজনীয়তা পূরণে দেশ সম্পূর্ণ আত্মনির্ভর হয়ে উঠেছে: প্রধানমন্ত্রী