দার্জিলিং-এর চা, সুন্দরবনের মধু – সিন্দুক ভরে কী কী উপহার নিয়ে গেলেন G20-র অতিথিরা?

G20 gifts: বিদেশি অভ্যাগতদের এই ঐতিহাসিক সম্মেলনের স্মারক হিসেবে এক বিশেষ উপহারের বাক্স দিয়েছে ভারত সরকার। সেই উপহারের বাক্সে তুলে ধরা হয়েছে ভারতের শতাব্দী সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ভারতীয় কারিগরদের অতুলনীয় হাতের কাজ, আমাদের দেশের অনন্য জীববৈচিত্র্যকে।

দার্জিলিং-এর চা, সুন্দরবনের মধু - সিন্দুক ভরে কী কী উপহার নিয়ে গেলেন G20-র অতিথিরা?
সিন্দুক ভরা উপহার জি২০-র অতিথিদেরImage Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 12, 2023 | 5:44 PM

নয়া দিল্লি: জি২০ শীর্ষ সম্মেলন উপলক্ষে ৯ ও ১০ সেপ্টেম্বর নয়া দিল্লিতে উপস্থিত হয়েছিলেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানরা। চিন ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্টরা না আসলেও, সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন তাঁদের দেশের প্রতিনিধিরা। এই বিদেশি অভ্যাগতদের এই ঐতিহাসিক সম্মেলনের স্মারক হিসেবে এক বিশেষ উপহারের বাক্স দিয়েছে ভারত সরকার। সেই উপহারের বাক্সে তুলে ধরা হয়েছে ভারতের শতাব্দী সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য, ভারতীয় কারিগরদের অতুলনীয় হাতের কাজ, আমাদের দেশের অনন্য জীববৈচিত্র্যকে। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক, ভারত থেকে কী কী উপহার পেলেন বিদেশি রাষ্ট্রপ্রধানরা –

পিতলের পাত দেওয়া, কারুকার্য করা শিশু কাঠের সিন্দুক

পিতলের পাত দেওয়া শিশুকাঠের সিন্দুক

ভারতীয় সংস্কৃতিতে এক বিশেষ স্থান রয়েছে সিন্দুকের। সাধারণত, টাকা-পয়সা, সোনা বা অন্য মূল্যবান জিনিস রাখা হয় সিন্দুকে। ঐতিহ্যগতভাবে, ভারতে শক্ত কাঠ বা ধাতু দিয়ে তৈরি সিন্দুকের উপর সূক্ষ্ম কারুকার্য করা থাকে। জি২০-র অতিথিদের এরকমই এক শিশুকাঠের তৈরি এবং সূক্ষ্ম কাজ করা পিতলের পাতের মোড়ক দেওয়া সিন্দুক উপহার দেওয়া হয়েছে।

সবথেকে দামী মশলা কেশর

কাশ্মীরের বিশ্বখ্যাত কেশর

বিশ্বের সবথেকে দামী মশলাগুলির অন্যতম জাফরান বা কেশর। রান্নার কাজে তো লাগেই, ঔষধি গুণেও কেশরের জুড়ি মেলা ভার। বিশেষ করে কাশ্মীরের কেশর, গোটা বিশ্বে বিখ্য়াত। সুগন্ধে, রঙ এবং মশলা গুণ একে বিশ্বের অন্যান্য সকল জায়গার কেশরের থেকে আলাদা করেছে। কেশরে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। এছাড়াও, স্বাস্থ্যগত দিক থেকে এর অনেক উপকারিতা আছে। এই কেশরও স্থান পেয়েছে অতিথিদের উপহার সামগ্রির তালিকায়।

চায়েও ধরা পড়ল বৈচিত্র

দার্জিলিং এবং নীলগিরির চা

আমাদের বাংলার দার্জিলিং-এর চা, বিশ্বের সবথেকে মূল্যবান চা। ৩০০০ থেকে ৫০০০ ফুট উচ্চতায় কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ে অবস্থিত বাগানের চা, গোটা বিশ্বে সম্বৃদ্ধ। বিশের করে দার্জিলিং-এ চায়ের মতো ফ্লেভার অন্য কোনও জায়গার চায়ে পাওয়া যায় না। অন্যদিকে, দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি পর্বতমালার ১০০০ থেকে ৩০০০ ফুট উচ্চতায় হওয়া চা তুলনামূলকভাবে কম কড়া। উজ্জ্বল রঙ এবং গন্ধের জন্য বিখ্যাত এই চা সাধারণত ‘আইসড টি’ বা ‘লেমন টি’ তৈরির জন্য ব্যবহার করা হয়।

আরাকুর বিখ্যাত কফি

আরাকু কফি

আরাকু কফি হল বিশ্বের প্রথম ‘টেরোয়ার ম্যাপ করা কফি’। অর্থাৎ, অন্ধ্র প্রদেশের আরাকু উপত্যকার নির্দিষ্ট পরিবেশেই এই বিশেষ মানের কফি তৈরি হয়। ছোট ছোট খামারে যন্ত্র বা রাসায়নিক ছাড়াই প্রাকৃতিকভাবে এই কফি চাষ করা হয়। ফলে, এই কফি একেবারে জৈবিক। আরাকু কফি তার অনন্য টেক্সচার এবং একটি বিরল সুগন্ধের ভারসাম্যের জন্য পরিচিত।

সুন্দরবনের প্রাকৃতিক মধু নিয়ে গেলেন অতিথিরা

সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ মধু

আমাদের সুন্দরবন, পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ অরণ্য। রয়েল বেঙ্গল টাইগারের পাশপাশি, এই জঙ্গল মৌমাছিদের আবাসস্থলও বটে। মৌচাষের সংস্কৃতির উদ্ভবের আগে থেকেই এই অঞ্চলে মানুষ মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করত। সেই ধার এখনও বজায় রয়েছে। সুন্দরবনের মধু স্বাদে স্বতন্ত্র। কারণ, এই মধুতে বিভিন্ন ম্যানগ্রোভ ফুলের অমৃত মিশে থাকে। ১০০% প্রাকৃতিক এবং খাঁটি সুন্দরবনের মধু উপহার পেয়েছেন অতিথিরা।

একমাত্র কাশ্মীরেই পাওয়া যায় এই পশমিনা শাল

কাশ্মীরি পশমিনা শাল

কাশ্মীরি পশমিনা শাল নিয়ে কাহিনির অভাব নেই। ফার্সি ভাষায় ‘পশমিনা’ কথাটির অর্থ পশম। কাশ্মীরি ভাষায়, এর অর্থ অবশ্য আরও নির্দিষ্ট। কাশ্মীরের ১৪,০০০ ফুট উচ্চতায় যে চাংথাঙ্গি ছাগল দেখা যায়, সেই বিশেষ প্রজাতির ছাগলের গা থেকে ছাড়ানো কাঁচা পশমকেই পশমিনা বলা হয়। এই ছাগলের গায়ের লোমে চিরুনি চালিয়ে পশম সংগ্রহ করা হয়। দক্ষ কারিগররা সেই পশমের সুতো হাতে বুনে শাল এবং অন্যাম্য পণ্য তৈরি করেন। এমনই একটি করে শাল উপহার দেওয়া হয়েছে জি২০ অতিথিদের। প্রাচীনকালে, এই পশমিনা পদমর্যাদা এবং আভিজাত্যের সূচক হিসাবে ব্যবহৃত হত। এই উপহার ছিল বিশেষ সম্মানের।

অতিথিরা সঙ্গে নিয়ে গেলেন আতরের সুগন্ধ

জিঘরানা আতর

উত্তর প্রদেশের কনৌজ শহরে তৈরি জিঘরানা আতর পৃথিবী বিখ্যাত। সুগন্ধী হিসেবে গোটা বিশ্বে এই আতর সম্বৃদ্ধ। বিভিন্ন উদ্ভিদ থেকে তৈরি এই সুগন্ধী তেল, ভারতের শতাব্দী-প্রাচীন ঐতিহ্য। প্রকয়েক প্রজন্ম ধরে ভারতে সুগন্ধী হিসেবে আতরের ব্যবহার চালু রয়েছে। ভোরবেলাই ফুলের সুগন্ধ সবথেকে জোরালো থাকে। ভোরেই জুঁই এবং গোলাপ ফুল সংগ্রহ করে, পাতনের মাধ্যমে তার থেকে তেল বের করা হয়। এই তেল থেকেই তৈরি হয় আতর। ভারতের এই অনন্য সুগন্ধীও সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছেন জি২০ শীর্ষ সম্মেলনের অতিথিরা।