Lakshadweep: সর্দার প্যাটেল না থাকলে লাক্ষাদ্বীপও যেত পাকিস্তানের দখলে! কীভাবে আটকেছিলেন ‘লৌহমানব’?
Lakshadweep Sardar Patel: ৩৬ দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই দ্বীপপুঞ্জের আয়তন মাত্র ৩২.৬৯ বর্গ কিলোমিটর। কিন্তু, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং এর কৌশলগত অবস্থানের কারণে, লাক্ষাদ্বীপের ভারতের অন্যতম সম্পদ। তবে, এই সম্পদ স্বাধীনতার সময় প্রায় দখল করে নিয়েছিল পাকিস্তান। পারেনি, শুধুমাত্র স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্য।
কোচি: লাক্ষাদ্বীপ। গত সপ্তাহে আরব সাগরের অবস্থিত এই ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জে গিয়ে সেখানকার পর্যটনকে উৎসাহ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আর তারপর থেকেই চর্চায় রয়েছে এই দ্বীপপুঞ্জ। ভারত এবং মলদ্বীপের মধ্যে কূটনৈতিক উত্তেজনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আসলে, মলদ্বীপের বর্তমান শাসক দল চিনপন্থী এবং ভারত-বিরোধী হিসাবে পরিচিত। তাদের দিক থেকে ভারত এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে আক্রমণ করা হয়েছে। যার জেরে, ভারত জুড়ে এখন মলদ্বীপকে বয়কট করে লাক্ষাদ্বীপে ভ্রমণের ধুম পড়ে গিয়েছে। ৩৬ দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত এই দ্বীপপুঞ্জের আয়তন মাত্র ৩২.৬৯ বর্গ কিলোমিটর। কিন্তু, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং এর কৌশলগত অবস্থানের কারণে, লাক্ষাদ্বীপের ভারতের অন্যতম সম্পদ। তবে, এই সম্পদ স্বাধীনতার সময় প্রায় দখল করে নিয়েছিল পাকিস্তান। পারেনি, শুধুমাত্র স্বাধীন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সর্দার বল্লভভাই প্যাটেলের জন্য।
কূটনৈতিক বুদ্ধি এবং দূরদৃষ্টির জন্য সর্দার প্যাটেলকে বলা হয় ‘লৌহমানব’। ব্রিটিশ শাসনের পরবর্তী সময়ে, স্বাধীন ভারত গঠনে বড় ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি। আসলে, ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট স্বাধীনতা লাভের সময়ে, ভারতের শয়ে শয়ে রাজ্য ছিল বিভিন্ন রাজ পরিবারের আওতায়। তারা সরাসরি ব্রিটিশ শাসনের অন্তর্গত ছিল না। স্বাধীনতার পরও, এই রাজ্যগুলির সিংহভাগই স্বাধীন ভারতে যোগ দিতে বিশেষ আগ্রহ দেখায়নি। কিন্তু, সর্দার প্যাটেলের নিরলস কূটনৈতিক পদক্ষেপ, এই রাজ্যগুলিকে ভারতের সঙ্গে এনেছিল। এই সকল রাজ্যের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন সর্দার প্যাটেল। তিনি তাঁদের বুঝিয়েছিলেন, স্বাধীন ভারতে যোগ দিলে ভারতীয় বাহিনীর নিরাপত্তা পাবে তারা, সেই সঙ্গে ভারত সরকারের আওতায় তারা তাদের রাজকীয় প্রতিপত্তিও বজায় রাখতে পারবে। এইভাবে বহু রাজ্য ভারতে যোগ দিয়েছিল।
তবে লাক্ষাদ্বীপের ঘটনাটা ছিল আলাদা। ভারতের স্বাধীনতার সময় লাক্ষাদ্বীপ কোনও বিশেষ রাজ পরিবারের শাসনাধীন ছিল না। এটি ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। স্বাধীনতার প্রসঙ্গ আসলে, তার সঙ্গেই আলোচিত হয় দেশভাগের গ্লানিও। ভারতীয় উপমহাদেশের ভাগাভাগির মূল ভিত্তি ছিল ধর্ম। লাক্ষাদ্বীপ বরাবরই মুসলিম অধ্যুষিত। মুসলিমরাই এই দ্বীপের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা। কাজেই, ইসলামের ভিত্তিতে নবগঠিত পাকিস্তানের কাছে এই দ্বীপ ছিল অত্যন্ত অকর্ষণীয়। বিশেষ করে আরব সাগরে এর কৌশলগত অবস্থান দেখে চোখ চকচক করে উঠেছিল পাকিস্তানিদের। তাই এই দ্বীপপুঞ্জ দখলের জন্য একটি যুদ্ধজাহাজও পাঠিয়েছিল পাকিস্তান।
তবে, এই পাক পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছিলেন সর্দার প্যাটেল। লাক্ষাদ্বীপের অবস্থান ভারতের মালাবার উপকূলের কাছে। আরব সাগরে লাক্ষাদ্বীপ দ্বীপপুঞ্জের কৌশলগত অবস্থান উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন ভারতের প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। পাকিস্তানি জহাজ দ্বীপপুঞ্জ দখল করতে আসছে, খবর পেয়েই দক্ষিণ ভারতের কর্তৃপক্ষকে তিনি দ্রুত লাক্ষাদ্বীপে ভারতীয় নৌসেনার একটি রণতরী পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। মালাবার উপকূল থেকে কাছে হওয়ায়, পাকিস্তানি জাহাজ এই দ্বীপপুঞ্জে নোঙর ফেলর আগেই, সেখানে পৌঁছে গিয়েছিল ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ। লাক্ষাদ্বীপে, তেরঙ্গা জাতীয় পতাকা উড়িয়ে দ্বীপের দখল নমিয়েছিল ভারত। এই খবর পেয়ে, আর দ্বীপ পর্যন্ত আসেনি পাকিস্তানি জাহাজটি। মাঝপথ থেকেই তাদের ঘাঁটিতে ফিরে যেতে হয়েছিল।