AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Kargil War Hero: যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ার পরই মুখে ঠেসে ধরেছিল AK-47-এর নল!

Kargil War Hero: পঁচিশ বছর আগের ঘটনা। কিন্তু, আজও সেই বন্দুকধারীর চোখ-মুখ তাঁর মনে স্পষ্ট ধরা আছে। কার্গিল যুদ্ধের সময় একটি মিগ-২৭ বিমানের পাইলট ছিলেন তিনি। ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যাওয়ায় তিনি নিজেকে সেই যুদ্ধবিমান থেকে ইজেক্ট করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তারপর, ধরা পড়েছিলেন পাক বাহিনীর হাতে।

Kargil War Hero: যুদ্ধবিমান ভেঙে পড়ার পরই মুখে ঠেসে ধরেছিল AK-47-এর নল!
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে গ্রুপ ক্যাপ্টেন কে নচিকেতা রাও (অবসরপ্রাপ্ত)Image Credit: YouTube video grab
| Updated on: Jul 26, 2024 | 9:49 AM
Share

কার্গিল: একে-৪৭ (AK-47) বন্দুকের ব্যারেল ঠেসে দিয়েছিল তাঁর মুখে। ট্রিগারে ছিল আঙুল। সেই আঙুলের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন কে নচিকেতা রাও (এখবন অবসরপ্রাপ্ত)। কি করবে সে, ট্রিগারটা টানবে কি টানবে না? পঁচিশ বছর আগের ঘটনা। কিন্তু, আজও সেই বন্দুকধারীর চোখ-মুখ তাঁর মনে স্পষ্ট ধরা আছে। কার্গিল যুদ্ধের সময় একটি মিগ-২৭ বিমানের পাইলট ছিলেন তিনি। ইঞ্জিন খারাপ হয়ে যাওয়ায় তিনি নিজেকে সেই যুদ্ধবিমান থেকে ইজেক্ট করতে বাধ্য হয়েছিলেন। তারপর, ধরা পড়েছিলেন পাক বাহিনীর হাতে। পরে তাঁকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল ঠিকই, তবে তার আগে তাঁকে সহ্য করতে হয়েছিল নিদারুণ অত্যাচার। আজ ২৬ জুলাই, কার্গিল বিজয় দিবসের ২৫ বছর। কী ঘটেছিল গ্রুপ ক্যাপ্টেন কে নচিকেতা রাও-এর সঙ্গে? আসুন জেনে নেওয়া যাক তাঁর বীরত্বের কাহিনি –

ইজেকশন

সেই সময় ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে ছিলেন কে নচিকেতা রাও। তিনি জানিয়েছেন, ওই সকালে শ্রীনগর থেকে আরও তিন ফাইটার পাইলটের সঙ্গে উড়েছিলেন তিনি। লক্ষ্য ছিল মুনথু ধলো নামে এক জায়গা। সেখানে ছিল পাকিস্তানের লজিস্টিক হাব। চারটি ফাইটার প্লেন থেকে সেই হাব লক্ষ্য করে রকেট ছোড়া হয়েছিল। পরে পাল্টা রকেট হামলায় আক্রমণে, লেফটেন্যান্ট কে নচিকেতা রাওয়ের মিগ ২৭ বিমানটির ইঞ্জিন খারাপ হয়ে গিয়েছিল। অনেক উঁচুতে ছিলেন, তাই ওই অবস্থাতেও কিছুক্ষণ বিমানে ছিলেন তিনি। কিন্তু, বিমানটি পাহাড়ে ভেঙে পড়ার উপক্রম হওয়ায়, নিজেকে বিমানটি থেকে ইজেক্ট করেছিলেন তিনি।

পড়লেন ধরা

বিমানটি থেকে নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারলেও, তাঁর সামনে হাজির হয়েছিল নতুন সমস্যা। জ্ঞান ফিরে আসার পর দেখেছিলেন চারিদিকে শুধু বরফ আর বরফ। তাঁর শরীর সেই ঠান্ডা সহ্য করতে পারছিল না। আর সঙ্গে অস্ত্র বলতে ছিল একটি ছোট পিস্তল এবং ১৬ রাউন্ড গুলি। তিনি কোথায় আছেন, তার কোনও ধারণা ছিল না তাঁর। এরপর প্রচুর গুলিবর্ষণ শব্দ শুনতে পেয়েছিলেন। তাঁকে লক্ষ্য করেই গুলি ছোড়া হচ্ছে কিনা, তাও বুঝতে পরছিলেন না। কিছু পাথরের আড়ালে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিনি। পাঁচ-ছয়জন পাক সৈন্যকে দেখতে পেয়েছিলেন তিনি। সেই সময় তাঁর গুলিওফুরিয়ে এসেছিল। কাছাকাছি কোনও ভারতীয় সেনাও ছিল না। এরপরই পাক বাহিনীর হাতে ধরা পড়েছিলেন তরুণ পাইলট, লেফটেন্যান্ট কে নচিকেতা রাও। আর তাঁর মুখে ধরা হয়েছিল একে-৪৭ রাইফেলের ব্যারেল। হয়তো গুলি করেই দেওয়া হত, কিন্তু ওই পাক সেনাকে থামিয়েছিলেন প্লাটুনের দায়িত্বে থাকা আর্মি ক্যাপ্টেন। তাঁকে বন্দি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পাক সেনা শিবিরে।

যুদ্ধবন্দি

সেই সময় গ্রুপ ক্যাপ্টেন নচিকেতা রাও (অবসরপ্রাপ্ত) জানতেন না তিনি কোথায়। এখন জানেন, জায়গাটা ছিল নিয়ন্ত্রণ রেখা থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে, ভারতের দিকেই। ইজেকশনের ফলে, তাঁর পিঠে ব্যথা লেগেছিল। ঠান্ডাও লাগছিল। ওই পাক ক্যাপ্টেন সেদিন পাক সৈন্যদের হাত থেকে বাঁচিয়েছিলেন নচিকেতাকে। তাই সেই ক্যাপ্টেনের প্রতি আজও অগাধ শ্রদ্ধা রয়েছে তাঁর। ওই ক্যাাপ্টেনের উদ্যোগেই তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসাও দেওয়া হয়েছিল। যদিও, ভারতীয় সেনাবাহিনী শেষ পর্যন্ত ওই এলাকা পুনর্দখল করার সময়, ওই পাক সেনা কর্তাকে হত্যা করা হয়েছিল। যাইহোক, তার আগে বন্দি গ্রুপ ক্যাপ্টেন নচিকেতা রাও (অবসরপ্রাপ্ত)-কে হেলিকপ্টারে করে আরেক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁকে জেরা করা হয়। প্রায় ২৪ ঘন্টা পর, তাঁকে উড়িয়ে নিয়ে যাওযা হয় প্রথমে ইসলামাবাদ এবং পরে রাওয়ালপিন্ডিতে। তুলে দেওয়া হয় আইএসআই-এর হাতে।

এরপরই শুরু হয়েছিল ক্যাপ্টেন নচিকেতার খারাপ সময়। একটি কারাগারে বন্দি ছিলেন তিনি। সেখানে তাঁকে একাকি রাখা হয়েছিল। ওই জেল কক্ষে খাবার ছিল না। দাঁড়ানোর উপায় ছিল না। গরম ছেঁকা দেওয়া, চোখের সামনে হাই ভোল্টেজ বাল্ব জ্বালিয়ে রাখা, খেতে না দেওয়া, ঘুমোতে না দেওয়ার মতো অত্যাচার সহ্য করতে হয়েছিল তাঁকে। খিদে, না ঘুমানো, শারীরিক ব্যথা, না মানসিক ব্যথা – কোনটা বেশি তাই বুঝতে পারতেন না। এছাড়া শুরু হয়েছিল মারধর করা। মানসিক, শারীরিকভাবে তাঁকে ভাঙতে চেয়েছিল পাক বাহিনী। এরপরও অবশ্য ‘থার্ড ডিগ্রি’ দেওয়া বাকি ছিল। কিন্তু, সেই পর্ব শুরু হওয়ার আগেই তাঁকে ভারতে ফিরিয়ে দেওয়ার সিন্ধান্ত নিয়েছিল পাক বাহিনী। তাই নিজেকে ভাগ্যবান বলে মনে করেন তিনি।

প্রত্যাবর্তন

তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি সেফ হাউসে। নতুন পোশাক দেওয়া হয়। খাবার দেওয়া হয়। মৌলিক সকল সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়। তাঁকে কিছু না বলা হলেও, তিনি বুঝেছিলেন ভাগ্যের চাকাটা উল্টদিকে ঘুরছে। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেওয়ার পর, তাঁকে ইন্টারন্যাশনাল রেডক্রস সোসাইটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। যুদ্ধবন্দীদের সরাসরি অন্য দেশের হাতে তুলে দেওয়া হয় না। প্রাথমিক মেডিক্যাল চেক-আপ কর এবং নথিপত্রে সই-সাবুদের পর, তাঁকে ভারতীয় দূতাবাসের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে তিনি তাঁর বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন।”

২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি বাহিনীর সদস্য ছিলেন। এখন অবসরের পর বাণিজ্যিক বিমান চালান। অবসর গ্রহণের পর, এই প্রথম তিনি নিজের কাহিনি জানালেন। তবে ওই ঘটনার পর আর কোনোদিন যুদ্ধবিমান ওড়াননি গ্রুপ ক্যাপ্টেন নচিকেতা (অবসরপ্রাপ্ত)। ইজেকশনের সময় মেরুদণ্ডে চোট পাওয়ায়, বাহিনীতে চাকরির বাকরি সময় ট্রান্সপোর্ট প্লেন উড়িয়েছিলেন।