Lightning strikes: ঘুর্ণিঝড়, বন্যার থেকেও ভয়ঙ্কর এখন বজ্রপাত! বর্ষা আসতেই আতঙ্ক গ্রামীণ ভারতে

Lightning strikes: বিশেষ করে বিহার-ঝাড়খণ্ড-উত্তর প্রদেশের মতো উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে মৃত্যু। বিহারে গত সপ্তাহেই বজ্রপাত সম্পর্কিত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের।

Lightning strikes: ঘুর্ণিঝড়, বন্যার থেকেও ভয়ঙ্কর এখন বজ্রপাত! বর্ষা আসতেই আতঙ্ক গ্রামীণ ভারতে
প্রতীকী ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jun 27, 2022 | 5:36 PM

নয়া দিল্লি: ভারতে পুরোদমে শুরু হয়ে গিয়েছে বর্ষা। আর সেই সঙ্গে শুরু হয়েছে বজ্রপাতের আতঙ্ক। বিশেষ করে বিহার-ঝাড়খণ্ড-উত্তর প্রদেশের মতো উত্তর ভারতের রাজ্যগুলিতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে মৃত্যু। বিহারে গত সপ্তাহেই বজ্রপাত সম্পর্কিত বিভিন্ন দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ১৭ জনের। ঘুর্ণিঝড় বা বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সামনে, বজ্রপাতের বিপদ খুব বড় নাই মনে হতে পারে। কোনও বড় মাপের সাইক্লোন বা বন্যায় শয়ে শয়ে মানুষের মৃত্যুও হতে পারে। সেখানে একটি বজ্রপাতে মৃত্যু হয়, খুব বেশি হলে এক ডজন। তবে, সরকারি তথ্য বলছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে বজ্রপাতেই ভারতে প্রতি বছর সবথেকে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। ২০২০ সালে বজ্রপাতে মৃত্যু হয়েছিল ২,৮৬২ জনের। একই সময়ে ঘুর্ণীঝড়ে মৃত্যু হয়েছিল ৩৭ জনের, হিট স্ট্রোকে ৫৩০ জনের এবং বন্যায় ৯৫৯ জনের। আর এই সংখ্যা বছর-বছর বাড়ছে। ক্রমে ভয়ঙ্কর রূপ নিচ্ছে বজ্রপাত।

সম্প্রতি ভারত সরকারের ভূ-বিজ্ঞান মন্ত্রক, ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ এবং ভারত সরকারের আরও কয়েকটি বিভাগের পক্ষ থেকে ‘বার্ষিক বজ্রপাত প্রতিবেদন ২০২০-২০২১’ প্রকাশ করা হয়েছে। এই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২১ সালে ভারতে বজ্রপাত সম্পর্কিত ঘটনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ১৬৯৭ জনের। অধিকাংশই উত্তর ভাব়তে। বিশেষ করে, উত্তর প্রদেশ, বিহার এবং মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের অবস্থা গুরুতর। এই তিন রাজ্যেই বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যাটা সর্বোচ্চ। রিপোর্ট অনুযায়ী বিহারে মৃত্যু হয়েছে ৪০১ জনের, উত্তরপ্রদেশে ২৩৮ জনের, মধ্যপ্রদেশে ২২৮ এবং ওড়িশায় ১৫৬ জনের। এটা সরকারি তথ্য। বজ্রপাতে মৃত্যুর কারণে যারা সরকারি সহায়তা পেয়েছেন, তাঁদের মৃত্যু নথিবদ্ধ করা হয়েছে। বজ্রপাতে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যাটা অনেক বেশি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ, ভারতে বজ্রপাতে মৃত্যু নথিবদ্ধ করার কোনও সরকারি ব্যবস্থা নেই। এই অবস্থায় প্রতি বছর ভারতে বজ্রপাতে গড়ে অন্তত ২০০০ থেকে ৩০০০ মানুষের মৃত্যু হয় বলেই জানাচ্ছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা।

বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির মূল কারণ বজ্রপাতের সংখ্যা বৃদ্ধি। এমনটাই বলছেন আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা। সরকারি পরিসংখ্যানেও, বজ্রপাতের সংখ্যা বৃদ্ধির এই বিষয়টি ধরা পড়েছে। ২০১৯-২০ সালে যেখানে ভারতে বজ্রপাতের সংখ্যা ছিল ১.৩৮ কোটি, পরের বছরই সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৮৫ কোটিতে। অর্থাৎ, ১ বছরে বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়েছে ৪৬.৮৩ লক্ষ বা ৩৪ শতাংশ। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্যই বজ্রপাতের সংখ্যা ক্রমে বাড়ছে। তাঁরা বলেছেন, বজ্রপাত হওয়ার জন্য মূল আবহাওয়াগত উপকরণ হল, গরম ভূপৃষ্ঠ এবং বাতাসে অতিরিক্ত জলীয় বাষ্প। বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা দিন-দিন বাড়ছে। একই সঙ্গে গলে যাচ্ছে বিশ্বের হিমবাহগুলিও। এতে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে যত দিন যাচ্ছে, ততই বজ্রপাতের সহায়ক পরিবেশ তৈরি হচ্ছে।

তবে, শহুরে এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যুর সম্ভাবনা, গ্রামীণ এলাকার তুলনায় অনেকটাই কম। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বজ্রপাতে মৃত্যুর প্রায় ৯০ শতাংশই হয়েছে গ্রামীন এলাকায়। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, শহুরে এলাকায় বহুতল বাড়ির কারণে বজ্রপাতের প্রভাব সেই ভাবে পড়ে না। কিন্তু, গ্রামীন এলাকায় পাহাড়, গাছ, বা ডোবা-পুকুর-নদীর উপস্থিতির কারণে বজ্রপাতের বিপদ বেশি। অনেক সময় সরাসরি মাটিতেও বজ্রপাত হয়। সেই বিদ্যুত একটা বড় এলাকা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। পাশপাশি, গ্রামীন এলাকায় কাজের প্রয়োজনে খোলা জায়গাতেই মানুষের উপস্থিতি বেশি থাকে। সেটাও গ্রামীন এলাকায় বজ্রপাতে মৃত্যু বেশি হওয়ার অন্য়তম কারণ।