‘মমতা সেদিন এয়ার হোস্টেজ় সেজে যেতে চেয়েছিলেন…’

বঙ্গে ভোটের আগে দলবদলের হিড়িক। সংখ্যার বিচারে অবশ্য জোড়াফুল ছেড়ে পদ্মফুলে যাওয়ার প্রবণতাই বেশি। তবে শনিবার চমক দেখাল তৃণমূল ভবন।

'মমতা সেদিন এয়ার হোস্টেজ় সেজে যেতে চেয়েছিলেন...'
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Mar 13, 2021 | 7:20 PM

কলকাতা: ১৯৯৯ সাল। কেন্দ্রে ক্ষমতায় অটল বিহারী বাজপেয়ীর (Atal Bihari Vajpayee) সরকার। রাজ্যের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) তখন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী। সেই সময় ২৪ ডিসেম্বর নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে দিল্লিগামী একটি এয়ার ইন্ডিয়া বিমান অপহরণ করে জঙ্গিরা। নাম উঠে আসে মুম্বই হামলার অন্যতম অভিযুক্ত মাসুদ আজ়হারের ভাই মহম্মদ রউফ আর দাদা ইব্রাহিম আজ়হারের। বিমানটিকে অপহরণ করে আফগানিস্তানের কান্দাহারে নিয়ে যায় দুই ভাই। তারপর সেখান থেকে বিমান সেবিকা ও যাত্রীদের পণবন্দি করে মাসুদ আজ়হারের মুক্তির দাবি করে ইব্রাহিম। শনিবার তৃণমূলে যোগ দিয়ে প্রায় ২১ বছরের ধুলো ঝেড়ে অতীত স্মরণ করালেন তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী তথা প্রবাদপ্রতিম বিজেপি নেতা যশবন্ত সিং। কান্দাহারের সেই বিমান অপহরণের ঘটনায় ‘লড়াকু নেত্রীর’ সাহসিকতার প্রসঙ্গ টেনে কার্যত ‘নায়ক’ বানালেন মমতাকে। যশবন্তের দাবি, সে দিন নিজেকে পণবন্দী করে সকলকে মুক্ত করতে চেয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

বঙ্গে ভোটের আগে দলবদলের হিড়িক। সংখ্যার বিচারে অবশ্য জোড়াফুল ছেড়ে পদ্মফুলে যাওয়ার প্রবণতাই বেশি। তবে শনিবার চমক দেখাল তৃণমূল ভবন। ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিলেন বাজপেয়ী আমলের অন্যতম শীর্ষ নেতা যশবন্ত সিনহা। এ দিন ডেরেক ও’ব্রায়েন, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে জোড়াফুল পতাকা তুলে নেন যশবন্ত। ২০১৮ সালে মোদী-শাহদের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে বিজেপি ছেড়েছিলেন বাজপেয়ী আমলের এই দাপুটে নেতা। এদিন দলীয় রাজনীতিতে ফিরে বিজেপির বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে কান্দাহারের প্রসঙ্গ টেনে মমতা ঠিক কতটা সাহসী তা বোঝানোর চেষ্টা করলেন যশবন্ত। তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর যশবন্ত বলেন, “মমতা একজন ফাইটার। একবার ক্যাবিনেটে বিমান অপহরণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। মমতাজি বলেছিলেন, উনি নিজেই হোস্টেজ় হয়ে যাবেন। শর্ত একটাই। যাতে আতঙ্কবাদীরা বাকিদের ছেড়ে দেয়।”

মোদী-শাহর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েই বিজেপি ছেড়েছিলেন যশবন্ত। তৃণমূল যোগের পর সেই সুর যেন আরও কড়া ভাষায় প্রতিফলিত হল। দিল্লির প্রসঙ্গ টেনে এনে বিঁধলেন কেন্দ্রকে। যশবন্ত বলেন, “কৃষকরা আজ বিপন্ন। যাঁরা আমাদের মুখে খাবার দেন, আজ তাঁরা রাজধানীর রাস্তায় বসে। যে শ্রমিকরা রুটিরুজি খুঁজতে গিয়েছিলেন, আমরা দেখেছি তাঁরা কী ভাবে খালি পায়ে হেঁটে বাড়ি ফিরেছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সবই আজ বিপন্ন। অথচ কেন্দ্রীয় সরকারের এ সব নিয়ে চিন্তা নেই। শাসকদলের একটাই লক্ষ্য, ভোট জেতা। সে যে ভোটই হোক।” তবে বারবার যশবন্ত বুঝিয়ে দিলেন অটলজির বিজেপি আর এই বিজেপি এক নয়।

২০০৮ সালের মুম্বই হামলা ও সাংবাদিক ডেনেল পার্লসের মৃত্যুর অপরাধে অন্যতম অভিযুক্ত ছিল মাসুদ আজ়হার ও সাইদ শেইখ। দু’জনকেই গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। কিন্তু কাঠমাণ্ডু থেকে দিল্লিগামী আইসি ৮১৪ বিমান অপহরণ মামলায় পণবন্দিদের ফেরাতে দু’জনকেই ছেড়ে দিতে বাধ্য হন বাজপেয়ী। এর ফলে কংগ্রেস শিবিরের চরম কটাক্ষের মুখে পড়তে হয়েছিল কেন্দ্রের শাসক দলকে। অটলবিহারী বাজপেয়ীকে ‘সবচেয়ে দুর্বল প্রধানমন্ত্রী’ বলে আক্রমণ করেছিল কংগ্রেস। যশবন্তের দাবি অনুযায়ী, তখন খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পণবন্দীদের মুক্তির জন্য কান্দাহারে এয়ার হস্টেজ সেজে যেতে চেয়েছিলেন। প্রসঙ্গত, মাসুদ আজ়হার ছাড়া পাওয়ার পর গড়ে ওঠে জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি সংগঠন। তবে বালাকোটের এয়ার স্ট্রাইকে মাসুদের দাদা ইব্রাহিম আজ়হারের মৃত্যু হয়েছে বলেই খবর প্রকাশিত হয়েছিল বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে।

আরও পড়ুন: বড় চমক! তৃণমূলে এককালের প্রবাদপ্রতিম বিজেপি নেতা