ISRO space tourism: মন্ত্রীর দাবি মহাকাশ বেড়াতে নিয়ে যাবে ইসরো! সত্যিই কি তাই? কবে হবে এই স্বপ্নপূরণ?
ISRO space tourism: সম্প্রতি কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জিতেন্দ্র সিং দাবি করেছেন, ভারতে শীঘ্রই মহাকাশ পর্যটন চালু করবে ইসরো। সত্যিই কি তাই? স্বপ্ন সফল হওয়ার থেকে কতটা দূরে রয়েছে ভারত?
নয়া দিল্লি: হইচই ফেলে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জিতেন্দ্র সিং। সম্প্রতি তিনি দাবি করেছেন, ভারতে শীঘ্রই মহাকাশ পর্যটন চালু হবে। এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা বা ইসরো (ISRO)। সকলেই জানতেন, ‘গগনযান’ অভিযান, অর্থাৎ, প্রথমবারের মতো মহাকাশে মানুষ পাঠানোর প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত ইসরো। তার মধ্যে মন্ত্রীর মন্তব্য শোরগোল ফেলে দিয়েছে। ড. জিতেন্দ্র সিং বলেছেন, ‘ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা, লো আর্থ অরবিটে মানুষ পাঠানোর ক্ষমতা প্রদর্শন করার মাধ্যমে দেশীয় মহাকাশ পর্যটনের ক্ষমতা বিকাশ করতে চলেছে।’ সত্যিই কি তাই? শীঘ্রই কি ভার্জিন গ্যালাকটিক বা ব্লু অরিজিনের (দুই সংস্থাই বিশ্বে প্রথম মহাকাশ পর্যটনের ধারণা চালু করেছে) মতো সংস্থাকে পাল্লা দেবে ইসরো?
প্রথমে জেনে নেওয়া যাক ইসরোর উচ্চাকাঙ্খী গগনযান অভিযান সম্পর্কে। সহজ কথায় ভারতীয় সংস্থার মহাকাশ অভিযানে মানুষ পাঠানোর প্রথম ধাপ হবে এই অভিযান। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ভারতীয় নভোশ্চরদের পাঠানোর এই পরিকল্পনা সফল হতে অবশ্য এখনও অনেক দেরি রয়েছে, ২০২৪-২৫’এর আগে হবে বলে আশা করা যাচ্ছে না। কারণ, মানববাহী অভিযানের আগে, ইসরোর এখনও অনেক কাজ বাকি আছে। মহাকাশে উপগ্রহ প্রেরণ করাটা এখন ইসরোর বাঁ-হাতের খেল। দীর্ঘদিন ধরেই ইসরো তাদের যুগান্তকারী ‘কার্গো-কেরিয়ার’ বা কৃত্রিম উপগ্রহবাহী রকেট জিএসএলভি ব্যবহার করে নিজেদের এবং অন্যান্য দেশের উপগ্রহগুলিকে সফলভাবে নির্দিষ্ট কক্ষপথে স্থাপন করেছে। কিন্তু, কার্গো রকেট উৎক্ষেপণ করা এবং মহাকাশে মানুষ পাঠানো দুটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়।
সবার প্রথম ধাপ হল, ‘জিএসএলভি মার্ক থ্রি’ কার্গো রকেটকে মানব-বাহী রকেটে রূপান্তরিত করতে হবে। এই লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই কাজ করছে ইসরো। সফল হওয়ার থেকে আর মাত্র এক ধাপ দূরে রয়েছে। রকেটটিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন করে সেটিকে মহাকাশচারীদের বহন করার জন্য যথেষ্ট নির্ভরযোগ্য করে তুলতে হবে। তারপর রয়েছে একগুচ্ছ পরীক্ষা-নিরীক্ষা। কারণ, মহাকাশে মানুষ পাঠাতে গেলে নভোশ্চরদের নিরাপত্তায় অগ্রাধিকার দিতেই হবে।
Expect an #Update related to the #Gaganyaan mission tomorrow. I could not add it with today’s as I’m awaiting another confirmation, which I should have post afternoon or latest by evening tomorrow. pic.twitter.com/KfeLPGTdIU
— Chethan Kumar (@Chethan_Dash) July 19, 2022
সম্প্রতি, ইসরোর চেয়ারম্যান ড. এস. সোমনাথ জানিয়েছেন, ২০২২ সালে ‘ক্রু এস্কেপ সিস্টেম’ পরীক্ষা করা হবে। অর্থাৎ, রকেটটিতে কোনও বিপদ ঘটলে নভোশ্চররা যাতে নিরাপদে অন্য একটি ক্যাপসুলের মাধ্যমে রকেটটি থেকে বিচ্ছিন্ন হতে পারেন, সেই ব্যবস্থার পরীক্ষা করা হবে। তারপর, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি হবে প্রথম মানববিহীন অভিযান। অর্থাৎ, নভোশ্চর ছাড়াই রকেটটিকে মহাকাশে পাঠিয়ে পরীক্ষা করা হবে। তারপরও আরও দু’বার ‘ক্রু এস্কেপ সিস্টেম’ এবং আরও একবার মানবহীন অভিযানে বিভিন্ন সিস্টেমগুলি পরীক্ষা করে নভোশ্চরদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। তারপর হবে মানববাহী গগনযান অভিযান। কাজেই ২০২৪ সালের আগে এই অভিয়ান হওয়া কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।
তবে, গগনযান অভিযান সফল হলেই যে ভারত মহাকাশ পর্যটনের দিকে এগিয়ে যাবে, এমনটাও বলা যাবে না। কারণ গগনযান অভিযানকে কোনওভাবেই মহাকাশ পর্যটনের সঙ্গে তুলনা করা যায় না। এই অভিযান হল একটি বৈজ্ঞানিক অভিযান। এর উদ্দেশ্য হল মহাকাশে নভোশ্চর পাঠানোর সক্ষমতা পরীক্ষা করা। একবার মানুষ পাঠাতে সক্ষম হলে, অদূর ভবিষ্যতে মহাকাশে নিজস্ব স্পেস স্টেশন তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর। অন্যদিকে, মহাকাশ পর্যটনের ক্ষেত্রে ভার্জিন গ্যালাক্টিকের স্পেস প্লেন, ব্লু অরিজিনের নিউ শেপার্ড রকেট, কিংবা, স্পেসএক্স সংস্থার ড্রাগন ক্যাপসুলগুলির উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ বাণিজ্যিক।
এই সংস্থাগুলির রকেট ও ক্যাপসুল ইতিমধ্যেই তাদের উড়ান ক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। অন্যদিকে, ভারতের গগনযান এখনও তার নির্ভরযোগ্যতা প্রমাণ করতে পারেনি। এই ক্ষেত্রে ভারত এখনও শিশু পর্যায়ে রয়েছে বলা যেতে পারে। প্রশিক্ষিত মহাকাশচারীদের পৃথিবীর নিম্ন কক্ষ পথে পাঠিয়ে তাঁদের ফের নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে কাজ চলছে। যেভাবে কৃত্রিম মহাকাশযান মহাকাশে পাঠানো আয়ত্ত করেছে ভারত, সেভাবেই ধাপে ধাপে মহাকাশে মানুষ পাঠানোটাও জলভাত করে ফেলতে হবে ভারতকে। তারপরই মহাকাশ পর্যটনের কথা ভাবা যেতে পারে।
এই ক্ষেত্রে বিদেশী সংস্থাগুলির বাড়তি সুবিধা রয়েছে। তাদের দেশীয় মহাকাশ সংস্থাগুলি গত কয়েক দশকে মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে বিপুল অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। তাকে কাজে লাগাচ্ছে বেসরকারি সংস্থাগুলি। ভারতকে সেখানে সবটাই করতে হবে নতুন অভিজ্ঞতার মাধ্যমে। কাজেই সময় লাগতে পারে অনেক বেশি। তাছাড়া, মহাকাশ পর্যটনের ক্ষেত্রে অপরিহার্য হল পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট। এখনও পর্যন্ত মহাকাশ পর্যটনে পা বাড়ানো প্রতিটি সংস্থাই তাদের ক্যাপসুলগুলিকে মহাকাশে পাঠায় পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট ব্যবহার করে। এই রকেটগুলি বারবার ব্যবহার করা যায়। প্রতিবার নতুন রকেট ব্যবহার করতে গেলে খরচ অনেক বেড়ে যেত। অপর পক্ষে ভারতের ‘জিএসএলভি মার্ক থ্রি’ রকেট একবারই ব্যবহার করা যায়। তারপর, সেটি পুড়তে পুড়তে সমুদ্রে পড়ার কথা।
কাজেই, ড. জিতেন্দ্র সিং যাই বলুন না কেন, ভারতে দেশীয় মহাকাশ পর্যটন বাস্তবে হতে গেলে এখনও অনেক পথ যেতে হবে। মহাকাশ পর্যটনের ক্ষেত্রে অন্তত কয়েক দশক পিছিয়ে আছে ইসরো। এর জন্য সবার আগে গগনযান কর্মসূচির ত্রুটিহীন সাফল্য প্রয়োজন। তারপর দরকার একই রকম সফল একাধিক অভিযান, যাতে মহাকাশে মানুষ পাঠানোর ক্ষেত্রে, কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর মতোই আত্মবিশ্বাস লাভ করতে পারে ইসরো। আর তারপর দরকার পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট। তারপরই দেশীয় মহাকাশ পর্যটনের কথা ভাবা যেতে পারে।