Morbi cable bridge collapse: ‘ইচ্ছাকৃতভাবে নাড়ানো হচ্ছিল সেতুটাকে’, ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন প্রত্যক্ষদর্শীরা

Morbi cable bridge collapse: রবিবার সন্ধ্যায় ভেঙে পড়ে মাচ্ছু নদীর উপর ঝুলন্ত সেতু। এই ঘটনায় মৃত বেড়ে হয়েছে অন্তত ১০০। এখনও চলছে তল্লাশি অভিযান।

Morbi cable bridge collapse: 'ইচ্ছাকৃতভাবে নাড়ানো হচ্ছিল সেতুটাকে', ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা শোনালেন প্রত্যক্ষদর্শীরা
ছবি সৌজন্যে: PTI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 31, 2022 | 6:24 AM

গান্ধীনগর: দেশের বিভিন্ন রাজ্যের ঘাটে ঘাটে চলছে ছট পুজো (Chhat Puja)। এরকমই এক ছট পুজোর সন্ধ্যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনার সাক্ষী থাকল গুজরাট (Gujarat)। রবিবরা সন্ধেবেলা গুজরাটের মোরবি জেলায় (Morbi District) মাচ্ছু নদীর উপর একটি কেবল ব্রিজ ভেঙে পড়ে। প্রায় শতাধিক মানুষ সেখানে আটকে পড়েছিলেন বলে জানা গিয়েছিল। মৃতের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু হয় উদ্ধারকাজ। পুলিশ, স্থানীয় প্রশাসন, রাজ্য় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী, ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনী, দমকল বিভাগ উদ্ধারকাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে। রাতভর সেই তল্লাশি অভিযান চলেছে। বর্তমানে এই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০০-র বেশি।

দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-মন্ত্রীরা এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন। রাজ্যসরকারের তরফে নিহতদের পরিবারকে ৪ লক্ষ টাকা করে সহায়তার ঘোষণা করা হয়েছে। আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সমবেদনা জানিয়ে নিহতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার ভিডিয়ো ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ভেঙে পড়ে মাচ্ছু নদীর উপর এই ঝুলন্ত কেবল ব্রিজ। এই দুর্ঘটনার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত এই ব্রিজের উপর ছিলেন কয়েকশো সাধারণ নাগরিক।

ব্রিজ ভেঙে পড়তেই কয়েকশো মানুষকে নিয়ে জলে ডুবে যায় ব্রিজের একাংশ। সংবাদ সংস্থা এএনআই-র একটি ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, প্রাণ বাঁচাতে মানুষ সেখানে সাঁতার কাটছে। ভেঙে পড়া ব্রিজের কেবল ধরে ভেসে থাকার চেষ্টা করছিলেন বেশ কয়েকজন। সেই ভিডিয়োতে অসহায় অবস্থায় শিশু ও মহিলাদেরও দেখা গিয়েছে। জানা গিয়েছে, এই ব্রিজ ভেঙে পড়ার আগে এর ধারণ ক্ষমতার বেশি মানুষ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সংস্থা রয়টার্স অনুযায়ী, সেখানে প্রায় ৪০০ জন মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়েছে সেই ব্রিজ। তিনি জানিয়েছেন, প্রথম কেবলগুলি ভেঙে পড়ে এবং এক সেকেন্ডের মধ্যে ছিটকে সেতুটি নীচে নেমে আসে। মানুষ একে অপরের উপর নদীতে পড়ে যান। কেউ কেউ সেতুর পাশের বারগুলি ধরে থাকতে পেরেছিলেন বলে জানিয়েছেন তিনি।

আরেকজন স্থানীয় বাসিন্দা রঞ্জনভাই প্যাটেল এক স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘যতজনকে সম্ভব আমরা বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলাম। যাঁরা সাঁতরে পাড়ে আসার চেষ্টা করছিলেন তাঁদের আমরা টেনে তুলতে সক্ষম হয়েছি। যেহেতু বেশিরভাগ মানুষই মাঝ নদীতে পড়েছিলেন আমরা তাঁদের বাঁচাতে পারিনি।’ এদিকে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, ‘অফিসের পর আমি বন্ধুদের সঙ্গে এই নদীর তীরে এসেছিলাম। সেই সময়ই ব্রিজ ভেঙে পড়ার শব্দ শুনতে পাই। সেখানে গিয়ে জলে ঝাঁপ দিই এবং মানুষদের উদ্ধার করি। আমরা বেশ কয়েকজন শিশু ও মহিলাকে উদ্ধার করতে পেরেছিলাম।’

এদিকে পরিবার নিয়ে এই ঝুলন্ত ব্রিজে ঘুরতে এসেছিলেন আহমেদাবাদের বাসিন্দা বিজয় গোস্বামী। কিন্তু ব্রিজ ভেঙে পড়ার আগেই তাঁরা সেখান থেকে চলে যান। তিনি বলেছেন, ‘ব্রিজের উপর খুব ভিড় ছিল। আমি ও আমার পরিবার ব্রিজের উপরই ছিলাম। সেই সময় কিছু অল্প বয়সী ছেলেরা ইচ্ছাকৃতভাবে ব্রিজটি নাড়াতে থাকে। কোনও ঠেস ছাড়া সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা অসাধ্য ছিল। আমার মনে হচ্ছিল এটি বিপজ্জনক হতে পারে, তাই ব্রিজের কিছুটা গিয়েই সেখান থেকে আমি পরিবার নিয়ে ফিরে আসি।’ তিনি আরও জানিয়েছেন,’তবে সেখান থেকে আসার আগে সেখানকার কর্মীদের সতর্ক করেছিলাম যে কিছু মানুষ সেখানে ব্রিজটি নাড়াচ্ছে।’ তবে তিনি করেছেন বিস্ফোরক অভিযোগও। তিনি জানিয়েছেন, কর্মীরা তাঁর কথায় কোনো কর্ণপাত করেননি। তাঁরা টিকিট বিক্রি করতে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, ‘কর্মীরা জানিয়েছিলেন, ভিড় নিয়ন্ত্রণ করার কোনও উপায় নেই।’

কিছুক্ষণের জন্য হাহাকার ভেসে আসে মাচ্ছু নদী থেকে। সেখানে অনেকেই নিজের পরিবার-পরিজনদের হারিয়েছেন। নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে উঠতে পারলেও কাছের মানুষের খোঁজে তখনও দুর্বল শরীরে চলছে তল্লাশি। ১০ বছরের এক ছেলে জানিয়েছেন, ব্রিজ ভেঙে পড়ার সময় সে একটি দড়ি ধরেছিল। সেটি ধরেই উঠে এসে নিজে প্রাণে বেঁচেছেন। কিন্তু তার বাবা-মার খোঁজে ১০ বছরের ছেলেটির চোখ ঘুরছে এদিক ওদিক। ইতিমধ্যেই মৃতের সংখ্যা বেড়ে প্রায় ১০০ হয়েছে। তল্লাশি ও উদ্ধারকাজ চলছে এখনও। আর কত নিথর দেহ উদ্ধার হবে তা এখনও অজানা। মাচ্ছু নদীরে আশেপাশে এখন স্বজনহারাদের আর্তনাদ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে কেবল।