Donkey Route: মুন্ডু কাটা ছবি, চুইংগাম, ১০ টাকার কয়েন— এই ৩ জিনিসই আমেরিকা যাওয়ার টিকিট!
Donkey Route: অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়াটা খুব একটা সোজা কাজ নয়, ২টো পাসপোর্টের ব্যবহার, চুইংগাম, ১০ টাকার কয়েন এই ৩ জিনিস ব্যবহার করেই চলত অবাধে অবৈধ গমন। পুরো প্রক্রিয়া জানলে আপনিও চমকে যাবেন।

জাল নথি দেখিয়ে অবৈধভাবে বিদেশে পারি দেওয়ার চল এখনও বন্ধ হয়নি। মার্চ মাসে মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চ এক প্রাক্তন বিএমসি কর্পোরেটরের ভাই সহ ছয়জনকে এই বেআইনি চক্র চালানোর জন্য গ্রেপ্তার করে। সূত্রের খবর এই গ্যাং কমপক্ষে ৮০ জনকে অবৈধভাবে কানাডা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। কানাডায় যেতে চাওয়া কিছু লোককে ‘ডাঙ্কি’ রুটে মার্কিন মুলুকে যাওয়ার প্রস্তাব টোপ দিত। কী ভাবে চলত পুরো চক্রটা?
অবৈধভাবে বিদেশ যাওয়াটা খুব একটা সোজা কাজ নয়, ২টো পাসপোর্টের ব্যবহার, চুইংগাম, ১০ টাকার কয়েন এই ৩ জিনিস ব্যবহার করেই চলত অবাধে অবৈধ গমন। পুরো প্রক্রিয়া জানলে আপনিও চমকে যাবেন।
মার্চের প্রথম সপ্তাহে মুম্বই ক্রাইম ব্রাঞ্চ অজিত পুরি নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে। এছাড়াও এই পুরো গ্যাং চালানোর মূল পাণ্ডা ছিলেন রোশন দুধওয়াদকর, সঞ্জয় চহ্বান, সুধীর সাওয়ান্ত, আরপি সিং এবং রাজু চাচ ওরফে ইমতিয়াজ। এই ছয়জন পুলিশি হেফাজতে, পুলিশ আরও চারজনের খোঁজ করছে।
কী ভাবে চলত এই গোটা পদ্ধতি, তা ব্যাখ্যা করার সময় এক কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে এমন ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হত যাঁরা আমেরিকা যেতে চান কিন্তু তাঁদের কানাডা বা মার্কিন ভিসা একাধিকবার প্রত্যাখ্যান হয়েছে। এজেন্টরা তাঁদের স্বপ্নপূরণের প্রতিশ্রুতি দেন।
পুলিশ জানায়, অজিত পুরির বিরুদ্ধে, এই ধরনের ১৪টি কেস পরিচালনা করার অভিযোগ রয়েছে। মুম্বই থেকে গোটা গ্যাং পরিচালনা করতেন তিনি। গুজরাটের এজেন্টরাও বিদেশে পাঠানোর জন্য পুরির সঙ্গে যোগাযোগ করত।
জানা যায়, কে আমেরিকা যেতে কতটা মরিয়া, তার উপর নির্ভর করে মাথা পিছু ৩০ থেকে ৭৫ লক্ষ টাকা অবধি চার্জ করা হত। এই টাকার মধ্যে পাসপোর্ট, জাল নথি, সিম কার্ড, ফোন, ব্লুটুথ ডিভাইস এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। একবার গ্রাহক টাকা দিতে রাজি দিতে হলেই শুরু হত প্রক্রিয়া।
প্রথম ধাপে এমন এক নাগরিকের পাসপোর্ট কেনা হয় যার কাছে যেই দেশে গ্রাহক যেতে চান সেই দেশের বৈধ ভিসা রয়েছে। কানাডা বা আমেরিকার ভিসা থাকা এক একটি পাসপোর্ট প্রায় ৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয় বলে জানা গিয়েছে।
এবার সেই পাসপোর্টে আসল ব্যক্তির মুখ কেটে ফেলে, বিদেশে যেতে ইচ্ছুক গ্রাহকের মুখ বসানো হত। এই ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করতেন ডিটিপি অপারেটর সুধীর সাওয়ান্তের হাতের যাদু।
এই বিশেষ ‘মুন্ডি কাট’ পাসপোর্ট বিদেশ যেতে ইচ্ছুক ব্যক্তির বয়স এবং যার পাসপোর্ট ব্যবহার করা হবে তার কথা মাথায় রেখে ব্যবহার করা হয়। ছবি বসানো হয়ে গেলে পাসপোর্ট সেলাইয়ের কাজে পারদর্শী সঞ্জয় চহ্বান সেরে ফেলেন পরের কাজটা।
এবার আসে টিকিট কাটার পরে বিদেশ পাড়ি দেওয়ার পালা। গ্রাহকের কাছে ব্যাগে থাকে দুটি পাসপোর্ট। একটি তাঁর নিজের আসল পাসপোর্ট। অপরটি জাল পাসপোর্ট।
জাল ‘মুন্ডি কাট’ পাসপোর্টে থাকে আসল ভিসা। আবার উলটো দিকে আসল পাসপোর্টে থাকে জাল ভিসা। প্রথমে নিজের আসল পাসপোর্ট থাকে ব্যাগের ভিতরে।
এই ক্ষেত্রে আগেই এজেন্টরা গ্রাহকরা প্রশিক্ষণ দিয়ে দেয় যাতে যার পাসপোর্ট ব্যবহার করা হচ্ছে তার নাম, ঠিকানা সব মনে থাকে, এবং প্রয়োজনে বলতে পারেন।
এজেন্টদের মধ্যে একজন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে প্রাক্তন কর্পোরেটরের ভাই, বিমানবন্দরে উপস্থিত থাকতেন। বিমানবন্দরে প্রবেশ থেকে বাকি পদ্ধতি পুরোটাই গাইড করতে থাকেন সেই এজেন্ট। এখানেই ব্যবহার করা হয় একটি ব্লু টুথ ডিভাইস, নতুন ফোন এবং সিম কার্ড।
জাল পাসপোর্ট দেখিয়ে বিমান বন্দরে প্রবেশ করতেন গ্রাহকরা। সিআইএসএফ নিরাপত্তা বাহিনী এবং চেক-ইন কাউন্টারে ‘মুন্ডি-কাট’পাসপোর্টটি দেখাতে বলা হয়। কারণ বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলির কাউন্টারে পাসপোর্টের বিবরণ দেখার সুযোগ নেই। তাই পাসপোর্টটি কার নামে নিবন্ধিত তা পরীক্ষা করতে পারে না।
এবার লাগেজ চেক ইন এবং বোর্ডিং পাস পাওয়ার পর, সিকিউরিটি চেক করার পালা। কাছাকাছি থেকেই সমগ্র পদ্ধতি ব্লুটুথ ডিভাইসের মাধ্যমে গাইড করতে থাকেন এজেন্ট।
সিকিউরিটি চেকের পরে অভিবাসন বা ইমিগ্রেশনের পালা। এই সময় হয় আসল যাদু। ইমিগ্রেশন কাউন্টারে যাওয়ার আগে আসল পাসপোর্ট বার করে জাল পাসপোর্ট ঢুকিয়ে নেওয়া হয় ব্যাগে। পুলিশ জানায়, ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের পাসপোর্টের বিবরণ জানার সুযোগ রয়েছে, সেখানে যদি ‘মুন্ডি-কাট’ পাসপোর্ট ব্যবহার করা হয়, তাহলে তা সঙ্গে সঙ্গে বাতিল হয়ে যাবে। তবে ইমিগ্রেশন ডিউটিতে থাকা অফিসাররা ভিসা বোর্ডিং পাসের বিবরণ জানতে পারেন না।
এখানে অভিবাসন কর্মকর্তাদের প্রশ্নের কীভাবে উত্তর দিতে হবে, তাও প্রশিক্ষণ দিয়ে শিখিয়ে দেওয়া হয় আগে থেকেই। আসলে অভিবাসন কর্মকর্তাদের প্রশ্নের উত্তর সঠিক ভাবে দিতে না পারলেই ফেঁসে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ইমিগ্রেশন হয়ে গেলে, গ্রাহককে বাথরুমে গিয়ে একটা ভাঁজযোগ্য রবার স্ট্যাম্প ব্যবহার করে জাল পাসপোর্ট এবং বোর্ডিং পাসেও জাল ইমিগ্রেশন স্ট্যাম্প লাগানো হয়। এবার আগে থেকেই দেওয়া চুইংগাম চিবিয়ে তাতে একটা ১০ টাকার কয়েন আর ওই রবার স্ট্যাম্প লাগিয়ে সেটাকে ফ্লাশ করে দেওয়া হয় যাতে কোনও ভাবে তা ভেসে না আসে।
ওই জাল পাসপোর্ট এবং ভিসা বিমান সংস্থার কর্মীদের দেখিয়ে প্লেনে চড়ে বসেন গ্রাহকরা। বিদেশের মাটিতে অবতরণের পরে তল্লাশি আরও কঠোর হয়। তবে সেখানেও গাইড করার জন্য তৈরি থাকে আরেক গ্যাং।
এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতে এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা পদ্ধতির ফাঁকফোকর দূর করার জন্য পুলিশ এবং বিমানবন্দর কর্মকর্তারা পদক্ষেপ নিচ্ছেন।





