মোদীর বাসভবনে শাহ-রাজনাথ-ডোভাল, তৈরি হচ্ছে ভারত-তালিব সম্পর্কের নীল নকশা
Narendra Modi : কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে নিজ বাসভবনে ডেকে পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
নয়াদিল্লি : আফগানিস্তানে নতুন সরকার গঠন সময়ের অপেক্ষা। যে কোনও সময়ে তালিবান সরকারের ঘোষণা হতে পারে। তালিবানের সঙ্গে ভারতের আগামী দিনে সম্পর্ক কোন পথে এগোবে? দ্রুত সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছে দিল্লি। আজ এই সংক্রান্ত বৈঠকের জন্য কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালকে নিজ বাসভবনে ডেকে পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ইতিমধ্যেই একটি উচ্চ পর্যায়ের দল গঠন করেছেন আফগানিস্তানের পরিস্থিতির উপর নজর রাখার জন্য। তাঁদের দায়িত্ব প্রতি মুহূর্তে পরিবর্তনশীল এই পরিস্থিতির মধ্যে ভারতের জন্য যে বিষয়গুলি সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেগুলি নির্ধারণ করা। সূত্রের খবর, এই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল সহ অন্যান্য শীর্ষ আধিকারিকরা। আফগানিস্তানের পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিচ্ছে, তার দিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছে এই প্রতিনিধি দল। নজর রাখা হচ্ছে, অন্যান্য দেশগুলির আফগানিস্তান প্রসঙ্গে কী ভাবছে, তার উপরেও।
তালিবান দাবি করছে, তারা গোটা আফগানিস্তানের দখল নিয়ে নিয়েছে। প্রতিরোধ বাহিনীর গড় পঞ্জশীরও এখন পুরোপুরি নিজেদের দখলে বলে দাবি করেছে তালিবরা। আর ঠিক এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তান ইস্যুতে এই উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা।
পঞ্জশীরের পাহাড়ি ঘেরাটোপে প্রতিরোধ বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রাক্তন উপরাষ্ট্রপতি আমরুল্লাহ সালেহ এবং প্রাক্তন আফগান গেরিলা কমান্ডার আহমেদ শাহ মাসুদের ছেলে আমহেদ মাসুদ। কিন্তু তালিবদের দাবি, প্রতিরোধ বাহিনীর হাত থেকে পঞ্জশীরকে ছিনিয়ে নিয়েছে তারা। তালিবান মুখপাত্র জ়াবিহুল্লাহ মুজাহিদ কাবুলে এক সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ আফগানিস্তান এখন তাদের দখলে। যদিও তালিবানের এই দাবি একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছে প্রতিরোধ বাহিনী।
উল্লেখ্য, ভারতের সভাপতিত্বে রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ অগাস্ট মাসে চারটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। তার মধ্যে অন্যতম রয়েছে আফগানিস্তান প্রস্তাব। সোমবার আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সেখানে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানের মাটিকে জঙ্গিদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য অথবা অন্য দেশকে ভয় দেখানোর জন্য ব্যবহার করা যাবে না।
সম্প্রতি কাতারের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তাল তালিবানের সঙ্গে কূটনৈতিক বৈঠক করেছেন বলেও খবর প্রকাশ্যে এসেছে। দোহায় ভারতীয় দূতাবাসে তালিবান নেতা শের মহম্মদ আব্বাস স্ট্যানিকজ়াইয়ের সঙ্গে দীপক মিত্তাল বৈঠক করেছেন বলে গুঞ্জন ছড়িয়েছে। সেই প্রসঙ্গে আজ শ্রীংলা জানান, তালিবানের সঙ্গে ভারতের এখনও পর্যন্ত খুব বেশি কিছু আলোচনা হয়নি। তবে যেটুকু আলোচনা হয়েছে, তাতে এখনও পর্যন্ত নেতিবাচক কিছু দেখা যায়নি।
১৫ অগস্ট কাবুলের দখল নিয়েছিল তালিবান। ভেঙে পড়েছিল আফগান সরকার। ক্ষমতা হস্তান্তরের কাজ শেষ করার আগেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান প্রেসিডেন্ট আসরাফ ঘানি। ভাইস প্রেসিডেন্ট আমিরুল্লাহ সালেহ পালিয়ে গিয়ে পঞ্জশীরে আশ্রয় নেন। তালিবানরা সেই সময় থেকেই পঞ্জশীরের দখল নিতে চাইলেও প্রতিরোধ বাহিনীর সঙ্গে ক্ষমতায় এঁটে উড়তে পারছিল না। আহমেদ মাসুদের নেতৃত্বে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছিল প্রতিরোধ বাহিনী। কিন্তু এখন আফগানিস্তানে যা পরিস্থিতি, তাতে যে কোনও সময়ে সরকারে বসতে পারে তালিবরা। আর তালিবদের সঙ্গে চিন-পাকিস্তানের সখ্যতা দিন দিন আরও বাড়ছে। এই পরিস্থিতি দ্রুত আফগানিস্তান ইস্যুতে ভারত সিদ্ধান্তে আসতে চাইছে বলেই মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। আরও পড়ুন : তালিবানকে পুষেছে ইসলামাবাদ ! দায় এড়াতে পারে না পাকিস্তান