Nitish Kumar: নীতীশের মতো রাজনীতির হাওয়া পড়তে পারে আর কে? ফিরলেন গন্ধে-গন্ধেই
Nitish Kumar: রবিবার বিহারে নবমবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন তিনি। তবে, একবারও নিজের একক ক্ষমতায় মুখ্যমন্ত্রী হননি তিনি। প্রথম থেকেই বিভিন্ন দলের সঙ্গে জোট বেঁধেই ক্ষমতায় এসেছেন এবং টিকে থেকেছেন। তবে, তাঁর একটা ক্ষমতাকে কুর্নিশ করতেই হবে। তা হল রাজনৈতিক হাওয়া পড়ে ফেলার ক্ষমতা। রাজনীতির হাওয়া কোনদিকে বইছে, তা বোঝার ক্ষমতা নীতীশের মতো সম্ভবত আর কোনও ব্যক্তির নেই।
পটনা: আরও একবার শিবির বদল করলেন নীতীশ কুমার। এই নিয়ে কতবার তিনি দল বা শিবির বদল করলেন, তা হিসেবের বাইরে চলে গিয়েছে প্রায়। এই নিয়ে ইন্টারনেটে মিমের বন্যা চলছে। নীতীশকে নিয়ে হাসাহাসির শেষ নেই। তাঁকে ‘পাল্টুরাম’ বলা যেতে পারে, তাঁর নীতি নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে, তবে তাঁর দুর্বলতাই আসলে তাঁর শক্তি। গিরগিটির মতো রঙ বদলাতে পারাই তাঁর শক্তি। নৈতিকতার প্রশ্ন উঠতেই পারে, তবে, এটাকে ‘সার্ভাইভাল ইনস্টিংক্ট’ হিসেবেও দেখা যায়। রবিবার বিহারে নবমবারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিচ্ছেন তিনি। তবে, একবারও নিজের একক ক্ষমতায় মুখ্যমন্ত্রী হননি তিনি। প্রথম থেকেই বিভিন্ন দলের সঙ্গে জোট বেঁধেই ক্ষমতায় এসেছেন এবং টিকে থেকেছেন। তবে, তাঁর একটা ক্ষমতাকে কুর্নিশ করতেই হবে। তা হল রাজনৈতিক হাওয়া পড়ে ফেলার ক্ষমতা। রাজনীতির হাওয়া কোনদিকে বইছে, তা বোঝার ক্ষমতা, নীতীশের মতো সম্ভবত আর কোনও ব্যক্তির নেই।
একই জনতা পার্টির ঘরে জন্ম হলেও, লালু প্রসাদ যাদবের মতো জনমোহিনী ক্ষমতা কোনওদিনই ছিল না নীতীশ কুমারের। তবে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাকাঙ্খা ছিল তাঁর। ২০০০ সালে এনডিএ-র সমর্থনে সমতা পার্টির হয়ে সেই আসনে বসেওছিলেন। কিন্তু, আস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে সরে যেতে হয়। ২০০৩ সালে সমতা পার্চি মিশে যায় জেডিইউ-এর সঙ্গে। ২০০৫-এ তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। ৮৮ আসনে জিতেছিল জেডিইউ। বিজেপি জিতেছিল ৫৫ আসনে। আর আরজেডি জিতেছিল ৫৪ আসনে। কংগ্রেস ৯। এনডিএ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন নীতীশ। ২০১০-এও বিপুল ভোটে জিতে ক্ষমতায় ফিরেছিল এনডিএ, ফের মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশ।
এরপরই নীতিশের ডিগবাজি দেওযার মাত্রা বাড়ে। সেটা ছিল ২০১৪ সাল। দেশজুড়ে উঠেছিল মোদীা হাওয়া। দুর্নীতির অভিযোগে কংগ্রেস ছিল কোনঠাসা। সুযোগ বুঝে জাতীয় স্তরে প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছিলেন নীতীশ। সেই প্রথম তাঁর প্রধানমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাকাঙ্খা দেখা গিয়েছিল। মোদী বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ জোট গড়ে, সেই জোটের মুখ হয়ে ওঠার চেষ্টা করেন তৎকালীন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। লোকসভায় অবশ্য জেডিইউয়ের ভরাডুবি হয়েছিল। নৈতিক দায় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন নীতীশ। আসলে সেটা ছিল মহাগঠবন্ধন গড়ার প্রথম ধাপ। রাজ্যে বিজেপির প্রভাব বাড়ছিল। সেই অবস্থায় বিজেপির সঙ্গে জোটে থেকে মুখ্যমন্ত্রীর আসন বেশিদিন টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয় বুঝেছিলেন তিনি।
২০১৫ সালে লালুপ্রসাদের আরজেডি এবং বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে মিলে মহাগঠবন্ধন তৈরি করেন নীতীশ। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, মরে যাবেন, কিন্তু এনডিএ-তে আর কখনও ফিরবেন না। বিধানসভা নির্বাচনে বিপুল সাফল্য পায় মহাগঠবন্ধন। তবে ৮০ আসন জিতে আরজেডি হয় এক নম্বর দল, জেডিইউ ছিল দ্বিতীয় স্থানে। পেয়েছিল ৭১টি আসন। জোটের শর্ত মেনে মুখ্যমন্ত্রী করা হয় নীতীশকেই। কিন্তু দেশে যে মোদী হাওয়া বইছে, তা অল্প সময়ের মধ্য়েই বুঝতে পেরেছিলেন নীতীশ। সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন তিনি। ২০১৭-য় উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠতেই তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে বরখাস্ত করার দাবি তোলেন তিনি। আরজেডি মানেনি। পদত্যাগ করে এনডিএ-তে ফিরে এসেছিলেন নীতীশ এবং কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ফের মুখ্যমন্ত্রী হন।
২০২০ বিধানসভা নির্বাচনে, ভরাডুবি হয় জেডিইউয়ের। মাত্র ৪৩ আসনে জিততে পারে নীতীশের দল। শরিক দল বিজেপি তাদের ছাপিয়ে যায়। তারা জিতেছিল ৭৪ আসনে। সবথেকে বড়দল হয় আরজেডি, জেতে ৭৫ আসনে। এনডিএ সরকারগঠন করে। জোটের শর্ত মেনে নীতীশকেই মুখ্যমন্ত্রী করা হয়। তবে, সরকারের উপর বিজেপির চাপ ছিল যথেষ্ট। নীতীশ বুঝতে পারছিলেন, রাজ্যে বিজেপির প্রভাব ক্রমে বাড়ছে। তাঁর দল আর বেশিদিন টিকবে না। ফলে, আরও একবার শিবির বদলের সিদ্ধান্ত নেন তিনি। ২০২২-এ ফের একবার হাত মেলান আরজেডি এবং মহাগঠবন্ধনের শরিকদের সঙ্গে। নতুন সরকার তৈরি হয়। তিনি মুখ্যমন্ত্রী, তেজস্বী উপমুখ্যমন্ত্রী। এরপর, আরও একবার প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন নীতীশ।
সেটা অমূলকও ছিল না। গত লোকসভা নির্বাচনেও ইন্ডিয়া জোটের শরিক দলগুলি সম্মিলিতভাবে ৩৮ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। বিজেপির প্রাপ্ত ভোট ছিল ৩৭ শতাংশ। আর সেই কারণেই ইন্ডিয়া জোট গঠন হওয়ার পর, সামান্য হলেও ঘাবড়ে গিয়েছিল বিজেপি। নীতীশ সরা দেশে ঘুরে বিরোধী দলগুলির সঙ্গে কথা বলেন। মমতা, কেজরীবাল-সহ অনেকের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলেন নীতীশ ও তেজস্বী। কিন্তু বাধ সাধে কংগ্রেস। ইন্ডিয়া জোটের বৈঠক শুরু হতেই তারা পরিষ্কার করে দেয়, রাহুল গান্ধী ব্যাকসটে থাকবেন না। সেখানেই নীতীশের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্নের সমাধি হয়েছিল।
তবে, তারপরও ইন্ডিয়া জোট এনডিএ-কে বড় লড়াই ছুড়ে দিতে পারত। কিন্তু, জোটের পক্ষ থেকে গত কয়েক মাসে প্রায় কোনও কাজই করা হয়নি। না হয়েছে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত। না হয়েছে লড়াইয়ের কোনও সম্মিলিত স্ট্র্যাটেজি তৈরি। মিডিয়া কীভাবে সামলানো হবে, সোশ্যাল মিডিয়া কীভাবে ব্যবহার করা হবে, এই সব বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি জোটের নেতারা। কাজেই ইন্ডিয়া জোটের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকা, তা ভালই পড়তে পেরেছেন নীতীশ। অন্যদিকে, রাম মন্দিরের প্রাণ প্রতিষ্ঠা, নরেন্দ্র মোদীর তৃতীয়বার ক্ষমতায় ফেরার বিষয়ে প্রায় সিলমোহর দিয়ে দিয়েছে। তাই ফের একবার হাওয়া ঘুরছে বুঝে, এনডিএ-তে ফিরে এলেন নীতীশ কুমার। টিকে থাকল তাঁর কুর্সিও। আর নির্ভুলভাবে রাজনৈতিক হাওয়া বোঝার ক্ষেত্রে তাঁর যা ক্ষমতা, তাতে, নীতীশের এই পদক্ষেপ কিন্তু, ইন্ডিয়া জোটের জন্য দুঃসংবাদ। বার্তা দিচ্ছে একটাই, “আয়েগা তো মোদীহি…।”