মমতার তদন্ত কমিশন গঠনই সার? পেগাসাস-কাণ্ডে বড় পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের
যেহেতু মামলাটি ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে, তাই আদালত চায় রাজ্য সরকার যেন বিষয়টি নিয়ে 'সংযম দেখায়'।
কলকাতা: ফোনে আড়ি পাতা ইস্যুতে তদন্ত কমিশন গড়ে রাজ্য সরকার ‘অতি-সক্রিয়তা’ দেখিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ঠিকই। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট কোনও সিদ্ধান্তের কথা না জানানো পর্যন্ত তদন্তের ভিত্তিতে কোনও পদক্ষেপ করতে পারবে না সেই কমিটি। বুধবার পেগাসাস মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকারকে জানিয়ে দিল শীর্ষ আদালত। যেহেতু মামলাটি ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন অবস্থায় রয়েছে, তাই আদালত চায় রাজ্য সরকার যেন বিষয়টি নিয়ে ‘সংযম দেখায়’। যদিও প্রাক্তন বিচারপতিদের নেতৃত্বে গড়া এই তদন্ত কমিটির কাজ করার ক্ষেত্রে কোনও স্থগিতাদেশ জারি করা হয়নি।
বুধবার সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি উঠলে রাজ্যকে ‘ধৈর্য ধরার’ পরামর্শ দেয় প্রধান বিচারপতি এনভি রামনার ডিভিশন বেঞ্চ। রাজ্যের তরফে প্রতিনিধিত্ব করা আইনজীবী, সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি জানান, আদালতের বার্তা তিনি সরকারের কাছে পৌঁছে দেবেন।
রাজ্য সরকারের স্বতঃপ্রণোদিতভাবে গঠিত এই তদন্ত কমিশনের বিরোধিতা করে সুপ্রিম কোর্টে একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিল ‘গ্লোবাল ভিলেজ ফাউন্ডেশন’ নামক একটি সংগঠন। সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি মদন লোকুর ও কলকাতা হাইকোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গঠিত এই তদন্ত কমিশনের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। মামলাকারীর আইনজীবী হরিশ সালভে দাবি করেন, যখন সুপ্রিম কোর্ট গোটা বিষয়টি নিয়ে হস্তক্ষেপ করেছে, তখন কোনও ‘সমান্তরাল তদন্ত’ চলতে পারে না। তথ্য প্রযুক্তির বিষয়টি যেহেতু কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে, তাই এমন তদন্তের নির্দেশ দেওয়ার কোনও এক্তিয়ারও রাজ্যের নেই বলেই দাবি করা হয়।
রাজ্যের প্রতিনিধি অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি পালটা যুক্তি খাড়া করতে গেলে তাঁকে থামিয়ে বিচারপতি বলেন, “আমরা অন্যান্য মামলাও শুনছি, তাই আশা করব যেন একটু সংযম দেখানো হয়। বর্তমান ইস্যুটি অন্যান্য ইস্যুর সঙ্গেও জড়িত। ফলে সবদিক বিচার করার পর আমরা আশা করতে পারি আপনি অপেক্ষা করবেন।” সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণের পর সিঙ্ঘভি আবেদন করেন, এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ যেন না দেওয়া হয়। তখন প্রধান বিচারপতি বলেন, “মিস্টার সিঙ্ঘভি আপনি আমাদের কথা শুনছেন না। আমরা বলছি যে পরের সপ্তাহে শুনব। এরপর সর্বাত্মক একটা নির্দেশ জারি হবে। এর মধ্যে যদি আপনারা তদন্ত শুরু করেন, তাহলে নির্দেশ দিয়ে দেব।”
অন্যদিকে, এই কমিশন গঠন নিয়ে রাজ্যের হলফনামা তলব করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। রাজ্যের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ফোনে আড়ি পাতা ইস্যুতে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থ জড়িয়ে আছে। তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং বিদেশি কোনও স্পাইওয়্যার যাতে ফোনে আড়ি পাততে না পারে, তা নিশ্চিত করতেই এই কমিশন গঠন করা হয়েছে। যদিও সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের পর্যবেক্ষণে রাজ্যের সেই কমিটির ক্ষমতা কার্যত ভোঁতা হয়ে গেল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহলের একাংশ। আরও পড়ুন: উপনির্বাচন করাই যাবে না! ৮ কারণ দেখিয়ে চিঠি পদ্মের, স্নায়ুর চাপ বাড়তেই কমিশনে তৃণমূলও