Partha Chatterjee: ‘ED-র সাফল্যের হার খারাপ, এভাবে আর কতদিন রাখা সম্ভব?’, পার্থর জামিন-মামলায় বড় পর্যবেক্ষণ সুপ্রিম কোর্টের
Supreme Court: ধবার সুপ্রিম কোর্টে ছিল পার্থর জামিন সংক্রান্ত মামলা। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে থাকা প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন চান তিনি। সেই জামিনের আবেদনের শুনানি স্থগিত হয়ে গিয়েছে।
নয়া দিল্লি: জামিন পেতে মরিয়া পার্থ চট্টোপাধ্যায়। নিয়োগ মামলায় একের পর এক অভিযুক্ত জামিন পেয়েছেন। মঙ্গলবার জামিন পেয়েছেন শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, সোমবার জামিন পেয়েছেন অর্পিতা মুখোপাধ্য়ায়। ইতিমধ্যেই জেলের বাইরে বেরিয়েছেন তিনি। তারপরই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে পার্থর আইনজীবী মুকুল রোহতগীর স্পষ্ট বক্তব্য, অর্পিতাকে নিয়ে কোনও চিন্তাই নেই। তিনি বলেন, ‘আই হ্যাভ নো কনসার্ন ফর হার।’
আজ, বুধবার সুপ্রিম কোর্টে ছিল পার্থর জামিন সংক্রান্ত মামলা। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে থাকা প্রাথমিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় জামিন চান তিনি। সেই জামিনের আবেদনের শুনানি স্থগিত হয়ে গিয়েছে। পরবর্তী শুনানি সোমবার। পার্থ চট্টোপাধ্যায় কতদিন ইডি এবং সিবিআই হেফাজতে ছিলেন, সেই সম্পর্কিত তথ্য ইডি এবং সিবিআই-এর কাছে চাইলেন বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং উজ্জ্বল ভুঁইয়া।
শুনানি পর্বে ইডি-র পক্ষে আইনজীবী অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু বলেন, “পার্থ জামিন পেলে তথ্য-প্রমাণ লোপাট এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করবেন। অর্পিতা নিজের স্টেটমেন্টে জানিয়েছেন, অর্পিতা পার্থকে নিয়ে ভীত। (She is fearful of him)।” এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই রোহতগি বলেন, আমার ওঁকে নিয়ে কোনও চিন্তা নেই। (I (Partha) have no concern for her)।
একইসঙ্গে অর্পিতার জামিনকে হাতিয়ার করেই পার্থর জামিন নিশ্চিত করার মরিয়া চেষ্টা তাঁর আইনজীবীর। আদালতে রোহতগীর দাবি, “অর্পিতার বাড়ি থেকে টাকা উদ্ধার হয়েছে। আমার (পার্থ) বাড়ি থেকে কোনও টাকা উদ্ধার হয়নি। অর্পিতা ট্রায়াল কোর্ট থেকে জামিন পেয়েছে। তাহলে আমি কেন পাব না?”
এছাড়াও আইনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে মুকুল রোহতগী বলেন, ২৮ মাস অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছর জেলে আছেন পার্থ। আইনের সংস্থান অনুযায়ী, যদি কেউ প্রথমবারের অভিযুক্ত হয় তাহলে মোট শাস্তির এক-তৃতীয়াংশ সময়ে কেউ জেলে থাকলে তাকে জামিন দিতে হবে। তিনি উল্লেখ করেন, আর্থিক প্রতারণার মামলায় সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। অর্থাৎ পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এক তৃতীয়াংশ সময় জেলে কাটিয়ে ফেলেছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ট্রায়াল শুরু হয়নি। একইসঙ্গে উল্লেখ করা হয়েছে, পার্থর ৭৩ বছর বয়স। তিনি অসুস্থ।
অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু বলেন, “প্রায় ৫০০০০ যোগ্য ছাত্র-ছাত্রীর জীবন এই বিপর্যস্ত হয়ে গিয়েছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী ছিলেন। গ্রেফতারের পর ডাক্তারের উপর প্রভাব খাটিয়ে মিথ্যা অসুস্থতার বাহানা করেছিলেন। বৃহত্তর স্বার্থে তার জামিন হওয়া উচিত নয়।”
একই সঙ্গে এদিন পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের জামিন মামলার শুনানি চলাকালীন ইডি-র কনভিকশন রেট অর্থাৎ দোষী সাব্যস্ত করার হার কত, তা জানতে চান বিচারপতি। উত্তরে অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল এসভি রাজু জানান, এই মামলায় ১০০ শতাংশ কনভিকশন হবে। বিচারপতি বলেন, ‘এটা পুরোটাই স্পেকুলেশন (সম্ভাবনা)।’ ইডি-র সাফল্যের হার যে খারাপ, সে কথাও উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্ট।
বিচারপতি ভুঁইয়া বলেন, “এভাবে আর কতদিন রাখা সম্ভব? এটাই প্রশ্ন। এই মামলায় ২ বছর পার হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। আড়াই-তিন বছর খুব একটা কম সময় নয়। যদি উনি দোষী সাব্যস্ত না হন, তাহলে কী হবে?”
একই সঙ্গে সিবিআই-এর গ্রেফতারি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মুকুল রোহতাগী। তিনি বলেন, “২৮ মাস ধরে কেন গ্রেফতার করা হল না? সিবিআই যে সময় গ্রেফতার করল, তা সন্দেহজনক।” বিচারপতি সূর্য কান্ত বলেন, “সেদিন গ্রেফতার করলে তো বলতেন, এত তাড়া কীসের!”
এরপরই বিচারপতি সূর্যকান্ত এবং উজ্জ্বল ভুঁইয়ার বেঞ্চ পর্যবেক্ষণে বলেন, “এই মামলার তদন্ত শেষ করা যথেষ্ট সময়সাপেক্ষ। ফলে অনির্দিষ্টকাল কাউকে জেলে রাখা যায় না।” আদালত জানতে চায়, মোট কত সময় ইডি এবং সিবিআই হেফাজতে ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়। আগামী সোমবারের মধ্যে এই তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে বেঞ্চ।