Narendra Modi: গেম অন! দেশের টপ গেমারদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নমো
Narendra Modi: ভারতেও অনেক গেমার উঠে আসছেন, যাঁরা গেমিং-এর দুনিয়ায় নিজেদের নাম তৈরি করে নিয়েছেন। শুধু ভারতেই নয়, গোটা বিশ্বের গেমিং দুনিয়ায় নিজেদের পরিচয় বানিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। এবার দেশের সেই প্রতিভাবান গেমারদের সঙ্গে দেখা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
নয়া দিল্লি: আধুনিক প্রযুক্তি আসার সঙ্গে সঙ্গে ভোল বদলে গিয়েছে গেমিং দুনিয়ার। আমাদের ভারতেও অনেক গেমার উঠে আসছেন, যাঁরা গেমিং-এর দুনিয়ায় নিজেদের নাম তৈরি করে নিয়েছেন। শুধু ভারতেই নয়, গোটা বিশ্বের গেমিং দুনিয়ায় নিজেদের পরিচয় বানিয়ে নিয়েছেন তাঁরা। এবার দেশের সেই প্রতিভাবান গেমারদের সঙ্গে দেখা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। লোকসভা ভোটের আগে যখন সব রাজনৈতিক নেতারা ভোটের প্রচারে ব্যস্ত, তখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ধরা দিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক রূপে। ‘গেম অন’ শীর্ষক ওই খোলামেলা আলোচনায় উঠে এল গেমিং দুনিয়ার বিভিন্ন নতুন নতুন তথ্য।
- গেমারদের সঙ্গে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী প্রথমেই জানতে চান তাঁদের অনুভূতির কথা। জানতে চান তাঁদের আজই প্রথম দেখা হল একে অপরের সঙ্গে, নাকি আগে থেকেই তাঁরা পরিচিত। খোলামেলা ওই আলোচনায় গেমাররা জানান, তাঁরা মাঝে মধ্যেই একে অন্যের সঙ্গে দেখা করেন। আর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগের কথা যখন তাঁরা প্রথম জানতে পারেন, তখন যেন বিশ্বাসই করতে পারছিলেন না তাঁরা। একজন বললেন, ‘প্রথমে ভেবেছিলাম ফেক নিউজ়’। তারপর প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে যখন সত্যি সত্যিই সাক্ষাতের সুযোগ এল, তখন তাঁদের ভুল ভাঙল।
- গেমাররা বললেন, ‘আপনার সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাওয়ায় আমরা নিশ্চিতভাবে ফ্রন্টফুটে এসে গেলাম। আমাদের লক্ষ্য আজ ভ্যালিডিটি পেল। আপনি আমাদের ডেকেছেন, এটা গেমিংয়ের জয়। আমাদের গেমিং ইন্ডাস্ট্রি জিতে গেল।’
- গেমারদের সঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী মোদী জানতে চান, তাঁরা ন্যাশনাল ক্রিয়েটরস অ্য়াওয়ার্ডের জন্য আবেদন করেছিলেন কি না। তখন অংশু বিস্ত নামে একজন গেমার জানালেন, তিনি অ্যাপ্লাই করেছিলেন এবং তিনি সেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে সামনে থেকে দেখেছেন।
- অনিমেষ আগরওয়াল নামে বছর আঠাশের এক গেমার প্রধানমন্ত্রীকে জানালেন, তিনি উচ্চশিক্ষার পড়াশোনা চলাকালীনই বাবা-মাকে জানিয়েছিলেন, গেমিংয়ে কেরিয়ার বানানোর জন্য তিনি এক বছরের ‘ব্রেক’ নিতে চান। তখন প্রধানমন্ত্রী জানতে চান, সেই সময় বাড়ির সকলের কী প্রতিক্রিয়া ছিল। অনিমেষ জানান, তাঁর অ্যাকাডেমিক রেকর্ড যেহেতু ভাল ছিল, তাই তিনি নিশ্চিত ছিলেন যদি গেমিংয়ে কেরিয়ার তৈরি না করতে পারেন, তাহলে আবার পড়াশোনায় ফিরে আসতে পারবেন। তাই বাড়ি থেকেই সাপোর্ট পেয়েছিলেন।
- প্রত্যেক গেমারের কথা খুব মন দিয়ে শুনলেন প্রধানমন্ত্রী। অংশু জানালেন, তাঁর পরিবারের সংগ্রামের কথা। এক নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে, আজ গেমার হিসেবে দেশে নিজের নাম করে নিয়েছেন অংশু। তাঁর বাবা একটি বেসরকারি স্কুল বাসে দীর্ঘদিন কন্ডাকটরের কাজ করেছেন। সেই পরিশ্রমের টাকা দিয়েও অংশু ও তাঁর দিদির পড়াশোনা করিয়েছেন। পরিবারের উপর থেকে চাপ কমাতে কিছুদিন টিউশন পড়িয়েছিল অংশু, কিছু কাজও করেছিল, তারপর গেমিংয়ের দিকে মন দেয়।
- অংশু প্রধানমন্ত্রীকে বললেন, ‘আপনি যেমন দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চান, যেমন একটি উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান… আমিও এমন কিছু করতে চাই, যাতে গোটা বিশ্ব সেটার প্রশংসা করে।’
- ভারতের গেমিং দুনিয়ার অন্যতম পরিচিত গেমার মর্টাল ওরফে নমন মাথুরও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পেয়েছিলেন। মাত্র চার বছর বয়সে বাবাকে হারিয়েছিলেন নমন। তারপর নভি মুম্বইয়েক পিতৃহারা ছোট্ট ছেলেটা কীভাবে দেশের প্রথম সারির গেমারদের মধ্যে একজন হয়ে উঠল, সেই কাহিনি প্রধানমন্ত্রীকে শোনান তিনি। জানালেন তাঁর মায়ের সংগ্রামের কথা। ২০১৫ সাল যখন হাতে মোবাইল পান, তখন থেকে গেমিং শুরু করেন। কলেজে বি.কম চলাকালীন নমন একটি জিনিস খেয়াল করেছিলেন। ইউটিউবে যত বিদেশি গেমার রয়েছেন, তাঁদের কমেন্ট সেকশনে বেশিরভাগ কমেন্টই ভারতীয়দের। সেখান থেকেই ইউটিউবে গেমিং ভিডিয়ো আপলোড করার ভাবনা আসে তাঁর মনে।
- প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপচারিতায় ছিলেন পায়েল ধারেও। পায়েল দেশের অন্যতম প্রথম সারির মহিলা গেমার। দেশের একটি ছোট্ট গ্রাম থেকে উঠে আসা পায়েল আজ ভারতের অন্যতম প্রতিভাবান গেমার। মধ্য প্রদেশের ইন্দোরের কাছে একটি ছোট গ্রামে বেড়ে ওঠা পায়েলের। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি জানান, গেমিংয়ের প্রতি বরাবরই টান ছিল, কিন্তু দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত তাঁর কাছে কোনও মোবাইল ছিল না। বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি গেমিংয়ের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে থাকেন। তাঁর বন্ধুদের ভাইরা ক্যাফেতে গিয়ে গেম খেলত, সেই থেকেই প্রথম গেমিংয়ের বিষয়ে জানতে পারেন পায়েল।
- পায়েল বললেন, ‘আমি চেষ্টা করেছিলাম গেমিংয়ে কেরিয়ার বানানো যায় কি না, সেটা দেখতে। যাতে আরও মেয়েদের কাছে কেরিয়ারের জন্য একটি অপশন খুলে যায়।’ প্রধানমন্ত্রী পায়েলের থেকে জানতে চান, গেমিংয়ে মেয়েদের কেরিয়ার তৈরির সুযোগ কতটা রয়েছে। উত্তরে পায়েল জানান, অনেক ক্ষেত্রেই বাবা-মায়েরা ভয় পান মেয়েদের বাড়ির বাইরে পাঠাতে। তাঁদের জন্য এটা একটি বড় কেরিয়ার অপশন।
- অপর এক গেমার মিথিলেশ পাটনকর জানান, ‘আমি সবসময় চেষ্টা করেছি ইউনিক কিছু কনটেন্ট দেওয়ার জন্য। সেখানে গেমিং, মিমিক্রি ও বিনোদনের মিশেল থাকে। সেই জন্যই লোকে আমার ভিডিয়ো পছন্দ করে বলে আমার মনে হয়।’
- গুজরাটের কচ্ছ এলাকার ভূজ থেকে উঠে আসা তীর্থ মেহতাও গেমিংয়ের দুনিয়ায় জায়গা বানিয়ে নিয়েছেন। ২০১৪ সাল থেকে হার্থস্টোন নামে এক গেমিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিচ্ছেন তিনি। বেশ কিছু মেডেলও রয়েছে তাঁর। সে কথাও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে জানালেন তিনি।
- আজকের দিনে গোটা বিশ্বের গেমিং দুনিয়ায় ছাপ ফেলছেন ভারতীয় গেমাররা। বেঙ্গালুরুর গণেশ গঙ্গাধর জানালেন, আন্তর্জাতিক স্তরের প্রতিযোগিতায় তাঁর সাফল্য়ের কথা। মাত্র ১৭ বছর বয়সেই ইন্দোনেশিয়ায় এক গেমিং প্রতিযোগিতায় ভারতের প্রতিনিধিত্ব করেন।
- প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁদের থেকে জানতে চান, একটানা তাঁরা কতক্ষণ গেম খেলেন। জবাবে তাঁরা জানালেন, যাঁরা ই-স্পোর্টস খেলেন, তাঁদের দিনে ৬-৭ ঘণ্টা সময় দিতে হয়। আবার যাঁরা কনটেন্ট বানান, তাঁরা দিনে ১২ ঘণ্টা শুধু ভেবেই যাচ্ছেন। তারপর দেখা যায়, ভিডিয়ো বানানোর সময় কখনও তা ২ মিনিটে হয়ে যায়, আবার কখনও ১০ দিনেও হয়ে ওঠে না।
- দেশে ক্রিয়েটিভিটির দিক থেকে গেমিংয়ের অবদান কতটা? গেমারদের থেকে জানতে চান মোদী। তাঁরা বলেন, ‘দেশে এত ভাল ভাল কনটেন্ট তৈরি হচ্ছে, তা এক কথায় নেক্সট লেভেল। এখন সবার কাছে ইন্টারনেট আছে, আমরা এখন এত নতুন নতুন কনটেন্ট দেখছি, যা হয়ত গোটা বিশ্বে কেউ বানায়নি।’
- গেমাররা প্রধানমন্ত্রীকে জানান, দেশে বর্তমানে প্রায় ১৫ হাজার গেম ডেভেলপার রয়েছেন এবং ১৪০০-১৫০০ গেমিং স্টুডিও রয়েছে। তাঁরা জানান, এই গেমিং ইন্ডাস্ট্রি গত ৫-৬ বছরেই সেজে উঠেছে। ২০১৯ সাল থেকে গেমিং ইন্ডাস্ট্রি গতি পেয়েছে দেশে।
- গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে কোনও নিয়ন্ত্রক সংস্থা আনার কোনও সম্ভাবনা রয়েছে কি? প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান গেমাররা। তাঁদের মোদী বলেন, রেগুলেট শব্দটি এক্ষেত্রে ঠিক নয়। বরং, বিষয়টিকে বুঝে কীভাবে দেশের বিকাশের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয়তা মতো মডিফাই করা বেশি দরকার।