AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

‘একাধিক পুরুষকে দেখেছি, যারা বুকের দিকে তাকিয়ে কথা বলে’, আদালতের পর্যবেক্ষণে ক্ষুব্ধ সমাজের একাংশ

নাগপুর বেঞ্চ জানিয়েছে, যেহেতু শারীরিক সংস্পর্শ হয়নি, তাই এই অপরাধ পকসো আইনের অন্তর্ভুক্ত নয়। গানেদিওয়ালার বেঞ্চ এই অপরাধকে ৩৫৪ ধারায় দণ্ডিত করেছে।

'একাধিক পুরুষকে দেখেছি, যারা বুকের দিকে তাকিয়ে কথা বলে', আদালতের পর্যবেক্ষণে ক্ষুব্ধ সমাজের একাংশ
অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস
| Edited By: | Updated on: Jan 25, 2021 | 10:04 PM
Share

নয়া দিল্লি: নাবালিকা যৌন নিগ্রহ মামলায় তাৎপর্যপূর্ণ পর্যবেক্ষণ বম্বে হাইকোর্টের (High Court of Bombay)। আদালতের নাগপুর বেঞ্চ জানিয়েছে, ত্বক স্পর্শ না করে নাবালিকার বুকে চাপ দেওয়াকে পকসো আইনের আওতায় আনা যাবে না। যার অর্থ ত্বকে-ত্বকে সংস্পর্শ না হলে সেই ঘটনাকে পকসো আইন অর্থাৎ দ্য প্রোটেকশন অব চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস আইনে ফেলা যাবে না। আদালতের পর্যবেক্ষণের পর নিম্ন আদালতের রায় সংশোধন করে সাজা কমানোর নির্দেশ দেন বিচারপতি পুষ্প গানেদিওয়ালা।

কোন মামলার প্রেক্ষিতে এই পর্যবেক্ষণ?

২ বছরের এক নাবালিকাকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগে ৩৯ বছরের এক ব্যক্তিকে পকসো আইন ও ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ ধারায় ৩ বছরের সশ্রম করাদণ্ড দিয়েছিল নিম্ন আদালত। তার সঙ্গে ৫০০ টাকা জরিমানাও ধার্য হয়েছিল। যদি সেই জরিমানা দিতে অক্ষম হলে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দেন বিচারক।

কিন্তু সেই রায় খারিজ করে দিয়ে নাগপুর বেঞ্চ জানিয়েছে, যেহেতু শারীরিক সংস্পর্শ হয়নি, তাই এই অপরাধ পকসো আইনের অন্তর্ভুক্ত নয়। গানেদিওয়ালার বেঞ্চ এই অপরাধকে ৩৫৪ ধারায় দণ্ডিত করেছে। তাই ১ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০০ টাকা জরিমানা ধার্য হয়েছে। অনাদায়ে এক্ষেত্রেও ১ মাসের অতিরিক্ত সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।

আদালতের পর্যবেক্ষণে প্রতিক্রিয়া মনোবিদের

মনোবিদ অনুত্তমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “এই রায়টি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও লজ্জাজনক।” তাঁর মতে, এই রায় প্রমাণ করে দেয় যৌন নিগ্রহ নিয়ে কতখানি ভুল ধারণা রয়েছে সমাজের মধ্যে। তিনি বলেন, “এটা আমার মনে হয় না কাউকে যুক্তি দিয়ে বোঝানোর প্রয়োজন থাকার কথা যে পোশাকের উপর দিয়েও নির্যাতন বা নিগ্রহ হতেই পারে। নির্যাতন বা নিগ্রহের প্রাথমিক মাপকাঠি হওয়া উচিত সম্মতি ছিল কি ছিল না। বাকিটা এক্ষেত্রে অবান্তর হওয়ার কথা ছিল। বহু সময় কোনও স্পর্শ ছাড়াই যৌন নির্যাতন বা যৌন নিগ্রহ সম্ভব।” এখনও যৌন নিগ্রহকে কতটা লঘু করে দেখা হয় তার প্রতিফলন এটা, একথাও বলেন অনুত্তমা। সর্বস্তরের প্রতিবাদ চেয়ে তাঁর বক্তব্য, “এই ধরনের রায় নিগ্রহকারীদের মান্যতা দিয়ে দেয়।”

কী প্রতিক্রিয়া সচেতন মহলের?

হাইকোর্টের রায়ের তীব্র নিন্দা করেন অভিনেত্রী সুদীপ্তা চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “এই রায় খুবই দুর্ভাগ্যজনক। যৌন লিপসা নিয়ে তাকানোও তো যৌন হেনস্থার মধ্যে পড়ে। আমি আমার জীবনে একাধিক পুরুষকে দেখেছি, যারা মহিলাদের মুখের দিকে না তাকিয়ে বুকের দিকে তাকিয়ে কথা বলে। সেটাও এক ধরনের যৌন নিগ্রহ। যদি গায়ে জামা পরা থাকে আর জামার উপর দিয়ে গায়ে হাত বোলানো হয়, তাতে আমার ত্বকে স্পর্শ হল না এবং সেটা নিগ্রহ হল না এটা দুর্ভাগ্যের এবং ব্যথার।”

পশ্চিমবঙ্গ শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তীর সমালোচনা করেন এই রায়ের। যে বিচারপতি এই পর্যবেক্ষণ করেছেন, তাঁকে সম্মান জানিয়েই তিনি বলেন, “উনি পকসো আইনটাই জানেন না।” পকসো আইনের বিভিন্ন দিক তুলে এই পর্যবেক্ষণের কড়া নিন্দা করেন তিনি।

অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতে, পকসো আইনে যারা বিচারাধীন রয়েছে। তাঁরা এই আইনের মাধ্যমে সুবিধা পাবে। তবে এই আইনের সমর্থনে কিংবা অসমর্থনে না গিয়ে আইন যাচাই করে কাউকে শাস্তি দেওয়ার পক্ষে তিনি।