Siachen hero: ৩৮ বছরের অপেক্ষার অবসান, তুষার-সমাধি থেকে ঘরে ফিরছেন সিয়াচেন যুদ্ধের নায়ক

Siachen war hero: ৩৮ বছর পর সিয়াচেন হিমবাহ এলাকার এক পুরনো বাঙ্কারে মিলল উত্তরাখণ্ডের হলদওয়ানির এক সেনা জওয়ানের দেহাবশেষ। ১৯৮৪ সালে 'অপারেশন মেঘদূত'এর সময়ে নিখোঁজ হয়েছিলেন তিনি।

Siachen hero: ৩৮ বছরের অপেক্ষার অবসান, তুষার-সমাধি থেকে ঘরে ফিরছেন সিয়াচেন যুদ্ধের নায়ক
৩৮ বছর আগে 'অপারেশন মেঘদূত'এর মাধ্যমে সিয়াচেন হিমবাহ দখল করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 14, 2022 | 11:31 PM

দেহরাদুন: দেশ এখন ‘আজাদির অমৃতকাল’ পালন করছে। স্বাধীনতার ৭৫তম বছরে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের আত্মত্যাগের কথা স্মরণ করছে জাতি। আর সেই সময়ই ৩৮ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষা শেষ হল উত্তরাখণ্ডের হলদওয়ানির এক পরিবারের। খোঁজ মিলল দেশকে সুরক্ষিত করতে নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করা এক নায়কের। ১৯৮৪ সালে ‘অপারেশন মেঘদূত’এর মাধ্যমে কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাশ্মীরের সিয়াচেন হিমবাহ দখল করেছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী। তবে, অভিযানে গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন ল্যান্স নায়েক চন্দ্র শেখর। গত ১৩ অগস্ট, এই হিমবাহের একটি পুরোনো বাঙ্কার থেকে মিলল তাঁর দেহাবশেষ।

চন্দ্র শেখরের স্ত্রীয়ের বয়স এখন ৬৫ বছর। তাঁর দুই কন্যাও আছে। ১৯৮৪ সালে যখন পাহড়ের বুকে হারিয়ে গিয়েছিলেন ল্যান্সনায়েক তখন তাঁদের বয়স খুব কম ছিল। ছোট মেয়ের বয়স ছিল মাত্র চার, বড় মেয়ের আট বছর। বাবার হারিয়ে যাওয়ার কথা তাদের সেভাবে মনে না থাকলেও মায়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁরাও বাবার জন্য গত ৩৮ বছর ধরে অপেক্ষা করছিলেন। আর অপেক্ষায় ছিলেন চন্দ্র শেখরের ইউনিটের আরও বেশ কয়েকজন সঙ্গী। অবশেষে এখন তাঁরা সকলে ল্যান্স নায়েককে বিদায় জানাতে চলেছেন। এর জন্য হলদওয়ানিতে তাঁর বাসভবনে একটি বড় সমাবেশের আয়োজন করা হচ্ছে। সেখানেই ল্যান্সনায়েকের দেহাবশেষ আনা হবে।

কী ঘটেছিল ল্যান্স নায়েক চন্দ্র শেখরের সঙ্গে? পাক-অধিকৃত-কাশ্মীর এবং চিন-অধিকৃত-কাশ্মীর – দুই জায়গার উপরেই নজরদারির জন্য কৌশলগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হল সিয়াচেন হিমবাহ। চিন-পাকিস্তানের অর্থনৈতিক করিডোরও এই হিমবাহের কাছ দিয়েই গিয়েছে। সিয়াচেন দখলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল পয়েন্ট ৫৯৬৫। পাকিস্তানিদের নজর ছিল এই এলাকাটির উপর। পাকিস্তানিদের আগে ওই এলাকাটি দখল করার জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১৯ কুমায়ুন রেজিমেন্টের একটি দলকে অবিলম্বে সেখানে পাঠানো হয়েছিল। এই দলেরই অংশ ছিল ল্যান্সনায়েক চন্দ্র শেখর। ‘অপারেশন মেঘদূত’এর অন্যতম প্রথম পদক্ষেপ ছিল এই অভিযান।

১৯৮৪ সালের ২৯ মে তাদের সেখানে পাঠানো হয়েছিল। পয়েন্টটি দখল করার পর রাতের তাঁরা সেখানে ছিলেন। কিন্তু, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সেই বীর সেনানীরা ওই রাতে প্রবল তুষারধসের মুখে পড়েছিলেন। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পিএস পুন্ডির-সহ মোট ১৮ জন ভারতীয় সেনা জওয়ান ওই ঘটনায় শহিদ হয়েছিলেন। ১৪ জনের মৃতদেহ পাওয়া গেলেও, ৪ জন নিখোঁজ ছিলেন। তাঁদেরই একজন ছিলেন ল্যান্স নায়েক চন্দ্র শেখর।

গ্রীষ্মকালে তুষাড় গলে যায়। এই সময়ে অনেক হারিয়ে যাওয়া সেনাদেরই খোঁজ চলে সুউচ্চ পার্বত্য এলাকায়। গত ১৩ অগস্ট সিয়াচেনে ১৬,০০০ ফুটেরও বেশি উচ্চতাও অনুসন্ধান অভিযান চালানো সম্ভব হয়েছিল। সেই সুযোগেই একটি পুরোনো বাঙ্কারে এক ভারতীয় সেনার কঙ্কালের দেহাবশেষ পাওয়া যায়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক পদস্থ কর্তা বলেছেন, “গ্রীষ্মের মাসগুলিতে, তুষার গলে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে, নিখোঁজ সৈন্যদের সনাক্ত করার জন্য টহলদার বাহিনীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিয়াচেন হিমবাহের একটি পুরানো বাঙ্কারের ভিতরে একটি কঙ্কালের দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছে।” দেহাবশেষের সঙ্গে, সেনাবাহিনীর নম্বর দেওয়া একটি ধাতব চাকতিও পাওয়া গিয়েছে। ওই নম্বর দেখেই সনাক্ত করা গিয়েছে ওই দেহাবশেষ আর কারোর নয়, ৩৮ বছর ধরে নিখোঁজ থাকা ল্যান্স নায়েক চন্দ্র শেখরের।