প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না: সুপ্রিম কোর্ট

উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের অভাবে মামলার নিষ্পত্তি ঘোষণা করা হলেও ষড়যন্ত্রের বিষয়টি উড়িয়ে দিতে অস্বীকার করে শীর্ষ আদালত।

প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের বিষয়টি উড়িয়ে দেওয়া যায় না: সুপ্রিম কোর্ট
Follow Us:
| Updated on: Feb 18, 2021 | 2:49 PM

নয়া দিল্লি: সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের কথা উড়িয়ে দিল না সুপ্রিম কোর্ট। প্রাক্তন বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগের ভিত্তিতে যে তদন্ত চলছিল, সেই মামলায় নিষ্পত্তি করে এই কথাই জানাল দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ষড়যন্ত্রের বিষয়টিকে উড়িয়ে না দিয়ে শীর্ষ আদালতের তরফে জানানো হয়, এনআরসি (NRC) নিয়ে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির মতামত ও রায়ঘোষণা এই ষড়যন্ত্র সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে বলে অনুমান।

প্রধান বিচারপতি থাকাকালীনই রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে যে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনা হয়েছিল, তার পিছনে বড় কোনও ষড়যন্ত্র এবং বিচারপতিদের রায়কে প্রভাবিত করতে কোনও ‘মিডলম্যান’ বা চক্রীর হাত রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখতে শীর্ষ আদালতের তরফে প্রাক্তন বিচারপতি একে পটনায়েককে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ২০১৯ সালে।

পটনায়েকের রিপোর্টের ভিত্তিতে আজ শীর্ষ আদালতের বিচারপতি সঞ্জয় কিষাণ কৌল, বিচারপতি এএস বোপান্না ও বিচারপতি ভি রামাসুব্রহ্মণ্যনের বেঞ্চের তরফে বলা হয়, “প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যে চক্রান্তের বিষয়টি বিচারপতি পটনায়েকের রিপোর্টেও উঠে এসেছে। সুতরাং এই বিষয়টিকে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।” অসমের নাগরিকপঞ্জি সংক্রান্ত মামলাগুলিতে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ যে পর্যবেক্ষণ জানিয়েছিলেন, তা নিয়ে অনেকেই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন। এই বিষয়টি ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর রিপোর্টেও তুলে ধরা হয়েছিল বলে উল্লেখ করে আদালত। প্রধান বিচারপতি তাঁর পদে থাকাকালীন যে সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছিলেন, তাতে ক্ষুব্ধ হয়েই এই ষড়যন্ত্র করা হতে পারে বলেও অনুমান শীর্ষ আদালতের।

আরও পড়ুন: করোনার নয়া স্ট্রেনের হানায় চিন্তিত কেন্দ্র, বিদেশ থেকে আগত যাত্রীদের জন্য জারি নয়া নির্দেশিকা

মামলার দুই বছর কেটে য়াওয়ায় ইলেকট্রনিক প্রমাণ সংগ্রহ করা কঠিন কাজ বলে উল্লেখ করে শীর্ষ আদালত। বিচারপতি পটনায়েকের জমা দেওয়া রিপোর্টের প্রেক্ষিতে আদালতের তরফে বলা হয়, “সীমিত সংখ্যক রেকর্ড ও তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে আইনজীবী উৎসব সিং বেইনের অভিযোগ সম্পূর্ণভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। এর প্রেক্ষিতেই মামলাটি চালু রাখার কোনও প্রয়োজন নেই।”

স্বতঃপ্রণোদিত মামলার কারণ হিসাবে বিচারপতি সঞ্জয় কৌলের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ জানায়, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আনা যৌন হেনস্থার অভিযোগ প্রমাণের জন্য নয়, এই অভিযোগের পিছনে বড় কোনও চক্রান্ত রয়েছে কিনা, সে বিষয়ে তদন্তের জন্যই কমিটিটি তৈরি করা হয়েছিল।

২০১৯ সালে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনেন সুপ্রিম কোর্টেরই এক প্রাক্তন কর্মচারী। এই অভিযোগের ভিত্তিতেই সুপ্রিম কোর্টের তিন সদস্যের বেঞ্চ একটি বিশেষ শুনানির আয়োজন করা হয়। সেই সময়ই রঞ্জন গগৈ দাবি করেছিলেন যে, তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের পিছনে বড় কোনও চক্রান্ত রয়েছে।

সেই বছরই এপ্রিল মাসে বিচারপতি অরুণ মিশ্র, বিচারপতি আরএফ নারিম্যান ও বিচারপতি দীপক গুপ্ত এই অভিযোগের পিছনে কোনও চক্রান্ত রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখার জন্য স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করে প্রাক্তন বিচারপতি একে পটনায়েককে তদন্তের নির্দেশ দেন। মামলা চলাকালীন আইনজীবী উৎসব বেইন দাবি করেন, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযোগ আনার জন্য দেড় কোটি টাকার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। এরপরই চক্রান্তের বিষয়টি নিয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। এক সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয়। পটনায়েকের জমা দেওয়া রিপোর্ট প্রকাশিত না হলেও আজ সুপ্রিম কোর্ট ষড়যন্ত্রের বিষয়টিকে প্রমাণিত না হলেও তা সম্পূর্ণ খারিজ করতে অস্বীকার করে।

আরও পড়ুন: দিনের আলোয় খুন আইনজীবী দম্পতি, মৃত্যুর আগে বললেন আততায়ীর নাম