কৃষকদের প্রতিবাদে যেন অন্যের ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় প্রভাব না পড়ে: সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ
সুপ্রিম কোর্ট এ দিন প্রস্তাব দেয় একটি নিরপেক্ষ কমিটি তৈরি করার। যেখানে উভয় পক্ষ আলোচনা করে আন্দোলনের ধরন নির্ধারণ করবে। কমিটির সেই সিদ্ধান্ত সব পক্ষ মানবে বলে আশাবাদী প্রধান বিচারপতি বোবদে।
নয়া দিল্লি: শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ করার অধিকার সবার আছে। কিন্তু সেই অধিকার অন্য কারোর জীবনে নেতিবাচক প্রভাব যেন না পড়ে। সুপ্রিম কোর্টে (Supreme Court of India) কৃষক আন্দোলন নিয়ে একাধিক দায়ের করা মামলার শুনানিতে বৃহস্পতিবার এমনই কথা জানান প্রধান বিচারপতি এসএ বোবদে। এদিন শুরুতেই প্রধান বিচারপতি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, আজকের শুনানি হবে শুধুমাত্র কৃষক বিক্ষোভ এবং তাঁদের অন্যত্র সরানোর অধিকার আছে কিনা। কৃষি আইনের বৈধতার বিষয়ে শুনানি হবে পরে।
কেন্দ্রের তরফে অভিযোগ, কৃষক আন্দোলনের (Farmer Protest) জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে রাজধানীর সীমান্তের প্রধান রাস্তাগুলি। এর জন্য কৃষকদেরই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন আইনজীবী সালভে। তাঁর অভিযোগ, সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভিন রাজ্য থেকে ফল, সবজি-সহ অন্যান্য পণ্য সামগ্রী আসা ব্যাহত হচ্ছে। জিনিস পত্রের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। পরোক্ষ প্রভাব পড়ছে দিল্লির ২০ লক্ষ নাগরিকের জীবনে। এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি জানান, আইনের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ দেখানোয় ব্যক্তি স্বাধীনতা রয়েছে কৃষকদের। কিন্তু অন্যের জীবনের ব্যক্তি স্বাধীনতায় তা যেন প্রভাব না পড়ে। এ দিন সুপ্রিম কোর্ট আরও স্পষ্ট করে যে, আলোচনা চেয়ে প্রতিবাদ করা যেতেই পারে কিন্তু বছরভর সেটা সম্ভব নয়।
এ দিন সুপ্রিম কোর্ট কৃষক সংগঠনকে জিজ্ঞাসা করে, কৃষক আন্দোলন অন্যভাবে কি করা যায়, যেখানে অন্যান্যদের ব্যক্তি স্বাধীনতায় ব্যাঘাত না ঘটে। এ সময় আইনজীবী সালভে জানান, সরকারের উচিত এমন নিয়ম করা যেখানে যিনি আন্দোলন সংগঠন করবে, তাঁকে জরিমানা করা হবে। এ প্রসঙ্গে বম্বে হাইকোর্টের একটি রায় উদহারণ দিয়ে সালভে জানান সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের জন্য শিবসেনাকে জরিমানা করা হয়। প্রধান বিচারপতি সালভেকে প্রশ্ন করেন, জরিমানা কি শিবসেনা দিয়েছে? সালভে জানান, যতদূর সম্ভব এখনও সেই জরিমানা মেটিয়ানি। তৎক্ষণাৎ সালভের এই প্রস্তব খারিজ করে সিএজি বলেন, আদালত বলতে পারে না প্রতিবাদ করার আগে টাকা জমা দিতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট এ দিন প্রস্তাব দেয় একটি নিরপেক্ষ কমিটি তৈরি করার। যেখানে উভয় পক্ষ আলোচনা করে আন্দোলনের ধরন নির্ধারণ করবে। কমিটির সেই সিদ্ধান্ত সব পক্ষ মানবে বলে আশাবাদী প্রধান বিচারপতি বোবদে। অহিংস পথে আন্দোলন হওয়ার আবেদন জানান প্রধান বিচারপতি। অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল বলেন, “আইন প্রত্যাহারে অনড় কৃষকরা। যেটা হ্যাঁ বা না-এ সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। টেবিলে বসে আলোচনার প্রয়োজন।” তাঁদের আলোচনায় বসতে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিক বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল। এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা এ বিষয়ে বলতে পারি না। কমিটিই সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা দেখতে চাই, আপনারা কতটা সমঝোতা করতে পারেন।”
আরও পড়ুন- বহুত্ববাদের উপর তৈরি হবে অযোধ্যার মসজিদ, শিলান্যাস প্রজাতন্ত্র দিবসে
পঞ্জাব সরকারের হয়ে আইনজীবী পি চিদম্বরমের সওয়াল, কমিটির সঙ্গে কেন্দ্র ও কৃষক সংগঠনের আলোচনায় তাদের কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু প্রশ্ন, যখন প্রচুর মানুষ মনে করছেন এই আইন যথার্থ নয়, সেখানে এ ধরনের আন্দোলন হবেই। ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে আমেরিকার অবস্থান এবং তার জেরে আন্দোলন আদালতকে স্মরণ করান পি চিদম্বরম। তাঁর দাবি, সড়ক কৃষক বন্ধ করেনি। কৃষকরা চেয়েছিলেন দিল্লির অভিমুখে মিছিল করে যেতে কিন্তু কীভাবে পুলিস ব্য়ারিকেড করে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে, তা ছবিতে সবাই দেখেছে। পুলিস এভাবে রাস্তা আটকাতে পারে না কৃষকদের। উল্লেখ্য এদিন সুপ্রিম কোর্ট অবকাশকালীন বেঞ্চে মামলা স্থানান্তরিত করে এবং সরকারকে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, যতদিন না আদালত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, আন্দোলনকারী কৃষকদের বিরুদ্ধে সরকার যেন কোনও অপ্রীতিকর পদক্ষেপ না করে।