উৎপাদন ক্ষমতায় খামতি নেই, তবুও কেন দেশে অক্সিজেন যোগানে টান?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে অক্সিজেন (oxygen) সঙ্কটের নেপথ্যে শক্তিশালী পরিবহণ পরিকাঠামোর অভাব। অতিমারি পরিস্থিতিতে সরকার এবং শিল্প সংস্থাগুলি উভয়ই চেষ্টা করছে দেশের অক্সিজেন সঙ্কট হ্রাস করার।

উৎপাদন ক্ষমতায় খামতি নেই, তবুও কেন দেশে অক্সিজেন যোগানে টান?
প্রতীকী চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Apr 30, 2021 | 12:16 AM

জ্যোতির্ময় রায়: করোনাভাইরাস (Coronavirus)-এর দ্বিতীয় ঢেউয়ে ত্রস্ত সারা দেশ। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে অক্সিজেনের ঘাটতি। শুধুমাত্র অক্সিজেনের (oxygen) অভাবেই দেশজুড়ে কয়েকশো করোনা (Corona) রোগী প্রাণ হারাচ্ছেন। যদিও দেরিতে হলেও সরকার যুদ্ধকালীন তৎপরতায় অক্সিজেন উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনায় কঠোর পদক্ষেপ করছে। কিন্তু ভারত তো তার চাহিদার তুলনায় বেশি অক্সিজেন উৎপাদন করে। তাহলে অতিমারি পরিস্থিতিতে কেন অক্সিজেন সঙ্কট দেখা দিল?

প্রায় প্রতিটি রাজ্যের প্রতিটি করোনা হাসপাতাল পর্যাপ্ত অক্সিজেনের জন্য লড়াই করছে। রোগীদের জীবন বাঁচাতে অক্সিজেন প্ল্যান্ট স্থাপন থেকে শুরু করে বিদেশ থেকে অক্সিজেন আমদানি করা, সম্ভাব্য সব পদক্ষেপই করছে ভারত সরকার। তবে অক্সিজেন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন, দেশে অক্সিজেনের অভাব নেই। দেশের মোট অক্সিজেন উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র এক শতাংশ সাধারণ সময়ে চিকিৎসা ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। আর করোনা পরিস্থিতিতে মাত্র ৫ শতাংশ পর্যন্ত অক্সিজেনের ব্যবহার করা হচ্ছে!

তাঁদের অনুমান, ভারতে প্রতিদিন ১ লক্ষ টন অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। মূলত দেশের ইস্পাত সংস্থাগুলি এর ৮০ শতাংশ উৎপাদন করে। যেমন, জামনগরে রিলায়েন্স কারখানার দৈনিক অক্সিজেন উৎপাদনের পরিমাণ ২২ হাজার টন। দেশের বেশিরভাগ অক্সিজেন কারখানা অবস্থিত মুম্বাই, গুজরাট এবং কর্ণাটকে। এরা সাধারণত ৫ থেকে ১০ শতাংশ তরল অক্সিজেন উৎপাদন এবং সংরক্ষণ করে। তবুও কেন অক্সিজেনের এই হাহাকার?

সংশ্লিষ্ট শিল্পের সঙ্গে যুক্তদের মতে, এর নেপথ্যে রয়েছে স্টোরেজ ডিভাইসের অপ্রতুলতা। দেশে অক্সিজেন ট্যাঙ্কার ও সিলিন্ডারের যথেষ্ট অভাব। তার কারণ কী? ব্যয়সাপেক্ষ। একটি অক্সিজেন ট্যাঙ্কারের দাম প্রায় ৪৫ লক্ষ টাকা। আর একটি অক্সিজেন সিলিন্ডারের দাম প্রায় ১০ হাজার টাকা। এবং তাতে মেরেকেটে ৩০০ টাকার অক্সিজেন বিক্রি করা হয়। ফলতঃ অক্সিজেন ব্যাবসা যে খুব একটা লাভজনক, এমনটা কিন্তু নয়।

এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত লোকেরা আরও জানাচ্ছেন, এই মুহূর্তেও ভারতে অক্সিজেন সঙ্কটের কারণ উৎপাদন ক্ষমতা নয়, অভাব হল পরিবহণের জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামোর। দেশের বেশিরভাগ অক্সিজেন উৎপাদন কারখানা অবস্থিত প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সেখান থেকে গ্রাহকদের অক্সিজেন সরবরাহ করতে ট্যাঙ্কারগুলিকে ২০০ থেকে এক হাজার কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করতে হয়। অনেক জায়গায় আবার রাস্তা ভাল না হওয়ায় সিলিন্ডার এবং ট্যাঙ্কারগুলি গ্রাহকদের কাছে পৌঁছতেই ৭ থেকে ১০ দিন সময় নেয়। তাছাড়া, বেশিরভাগ গ্যাস সংস্থাগুলি অক্সিজেন উৎপাদনের ক্ষমতা তখনই বাড়ায়, যখন তার চাহিদা বাড়ে।

তাহলে কীভাবে এই অক্সিজেন সঙ্কটের সুরাহা হবে?

বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতে অক্সিজেন সঙ্কটের নেপথ্যে শক্তিশালী পরিবহণ পরিকাঠামোর অভাব। অতিমারি পরিস্থিতিতে সরকার এবং শিল্প সংস্থাগুলি উভয়ই চেষ্টা করছে দেশের অক্সিজেন সঙ্কট হ্রাস করার। অক্সিজেনের অভাব দূর করতে অন্যান্য দেশ থেকে অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের সঙ্গে সঙ্গে ট্যাঙ্কও আনানো হচ্ছে। দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দ্রুত অক্সিজেন সরবরাহের জন্য ভারতীয় রেল শুরু করেছে ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’ ট্রেন। শুধু তাই নয়, সময় বাঁচাতে এই ‘অক্সিজেন এক্সপ্রেস’ ট্রেনগুলিকে গ্রিন করিডোর-এর মাধ্যমে চালনা করা হচ্ছে। আরও দ্রুত অক্সিজেন পৌঁছে দিতে সাহায্য নেওয়া হচ্ছে ভারতীয় বিমান বাহিনীর।

আরও পড়ুন: করোনা কড়চা: আকালের সময় প্রাণদায়ী অক্সিজেন কনসেনট্রেটর! কীভাবে কাজ করে এই যন্ত্র? 

কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজ (CIA)-এর মতে, সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স (সিম) অক্সিজেন পরিবহণে সময় কম করার জন্য ‘সংযুক্ত যানবাহন, ট্র্যাক এবং ট্রেস’ এর মতো প্রযুক্তি প্রয়োগ করছে। তাদের আশা, এই অক্সিজেন সমস্যা দ্রুত মিটবে।