Indian rail: এই বাঙালির ধুতি খুলে না গেলে, ট্রেনে তৈরিই হত না শৌচাগার
Indian rail: ১৯০৯ সাল পর্যন্ত ভারতীয় ট্রেনগুলিতে কোনও শৌচাগার থাকত না। স্টেশনে নেমে শৌচাগারে যেতে হত যাত্রীদের। কিন্তু অবস্থা বদলে দিয়েছিল এক বাঙালির চিঠি। তার আগে অবশ্য তাঁকে চরম নাকাল হতে হয়। স্টেশনে সকলের সামনে খুলে গিয়েছিল তাঁর ধুতি।
কলকাতা: ভারতীয় রেলের শৌচাগার নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের শেষ নেই। শৌচাগার নোংরা, সেখানে জল নেই, জল আছে তো মগ নেই। অভিযোগের তালিকাটা দীর্ঘ। এমনকি বন্দে ভারত ট্রেন চালু হওয়ার পরও, শৌচাগার নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগ বন্ধ হয়নি। কিন্তু, অনেকেরই হয়তো জানা নেই, ভারতীয় রেলে শুরুতে ট্রেনে কোনও শৌচাগারই থাকত না। স্টেশনের শৌচাগারই ছিল যাত্রীদের প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওযার একমাত্র ভরসা। কিন্তু, পরিস্থিতিটা বদলে গিয়েছিল এক বাঙালির সৌজন্যে।
ভারতীয় রেলের পথ চলা শুরু হয়েছিল সেই ব্রিটিশ আমলে, ১৮৫৩ সালে। তারপর ধীরে ধীরে বিভিন্ন রুটে ছড়িয়ে পড়েছিল রেলপথ। গোটা ভারতকে ঘিরেছিল রেলপথের জাল। দূরপাল্লার যাত্রায় দীর্ঘদিন পর্যন্ত এই রেল যোগাযোগই ছিল একমাত্র ভরসা। কিন্ত, শুরুতে ট্রেনে কোনও শৌচাগার থাকত না। ট্রেনে মল বা মূত্র ত্যাগের প্রয়োজন হলে, যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হত পরবর্তী স্টেশন আসার জন্য। আবার, তা করতে গিয়ে অনেকের ট্রেন স্টেশন ছেড়ে চলেও যেত।
১৯০৯ সালে, এই রকমই এক ঘটনা ঘটেছিল অখিলচন্দ্র সেন নামে এক বাঙালী যাত্রীর সঙ্গেও। তিনি কোথা থেকে কোথায় যাচ্ছিলেন জানা নেই। কিন্তু, বীরভুমের আহমদপুর স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ানোর পর, তিনি স্টেশনে মলত্যাগ করতে গিয়েছিলেন। আসলে ট্রেনে ওঠার আগে লোভে পড়ে অনেক কাঁঠাল খেয়ে ফেলেছিলেন অখিল। যার জন্য তাঁর পেট কামড়াচ্ছিল। তিনি মলত্যাগ করার সময়ই, গার্ড ট্রেন চালুর হুইসল বাজিয়েছিল।
ট্রেন ছেড়ে যাচ্ছে, তাই মলত্যাগের মাঝেই কোনওমতে এক হাতে মগ আর আরেক হাতে ধুতির কাছা ধরে ছুটতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু, স্টেশনেই ধুতিতে পা জড়িয়ে পড়ে গিয়েছিলেন। ট্রেন তো চলে গিয়েছিলই, উপরন্ত সকলের সামনে তাঁর ধুতি খুলে গিয়েছিল। চরম অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়েছিলেন অখিলচন্দ্র। আর এরপরই রেলকর্তাদের করেছিলেন পত্রাঘাত।
ভাল করে ইংরাজি জানা ছিল না। ব্যাকরণ ও বানানে বিস্তর ভুল ছিল। তবে, তাঁর সেই চিঠিতে রেলকর্তাদের, রেলের শৌচাগার সংক্রান্ত সমসল্যাটি বোঝাতে পেরেছিলেন অখিলচন্দ্র সেন। তাঁকে কোন ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে, তা খুলে জানিয়েছিলেন তিনি। প্রশ্ন তোলেন, তাঁর জন্য কি ট্রেনটা ৫ মিনিট দাঁড় করিয়ে রাখা যেত না? ওই গার্ডকে বড় অঙ্কের জরিমানা করার দাবি জানান তিনি। না-হলে পুরো ঘটনাটা সংবাদপত্রে ছাপিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।
অখিলচন্দ্রের সেই চিঠি পেয়েই টনক নড়েছিল রেলকর্তাদের। তাঁরা সমস্যাটির গুরুত্ব উপলব্ধি করেন। আর, তারপরই ভারতীয় ট্রেনে শুরু হয় শৌচাগার তৈরির কাজ। তাই আজ ট্রেনের শৌচাগার নিয়ে প্রশ্ন করার সময়, একবার অন্তত অখিলচন্দ্রের কথা ভাবুন। নিশ্চিন্তে শৌচাগার ব্যবহার করার সময়, একবার অন্তত ধন্যবাদ জানান এই বাঙালি মানুষটিকে।