Omicron: বিশ্লেষণ: দাঁত-নখ বের করছে ওমিক্রন, কতটা ভয়ের কারণ হতে পারে?
TV9 Explained: এখন বাজারে করোনার যে টিকাগুলি পাওয়া যাচ্ছে, অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ওমিক্রনকে ঠেকাতে এই টিকা যথেষ্ট কার্যকর নাও হতে পারে।
নয়া দিল্লি : করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ধাক্কা একটু একটু করে কাটিয়ে উঠছিল ভারত। আর ঠিক সেই সময়েই আবার করোনার এক নতুন স্ট্রেনের হদিশ। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের আতঙ্ক এখন থরহরিকম্প গোটা বিশ্ব। শুক্রবারই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওমিক্রনকে ‘উদ্বেগজনক ভ্যারিয়েন্ট’ তালিকাভুক্ত করেছে।
গত সোমবার দক্ষিণ আফ্রিকার নেটওয়ার্ক ফর জিনোমিকস সারভিল্যান্স (NGA-SA) এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের হদিশ পায়। তারা সার্স কোভ-২ ভাইরাসের এই নতুন ভ্যারিয়েন্টকে খুঁজে পান। এই নতুন ভ্যারিয়েন্টের লাইনেজ বি.১.১.৫২৯।
প্রাথমিকভাবে বিশেষজ্ঞরা মনে করেছেন, নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের থেকেও অনেক দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আর এখন বাজারে করোনার যে টিকাগুলি পাওয়া যাচ্ছে, অনেকেই আশঙ্কা করছেন, ওমিক্রনকে ঠেকাতে এই টিকা যথেষ্ট কার্যকর নাও হতে পারে।
এখনও পর্যন্ত ওমিক্রন সম্পর্ক আমরা যা জানি…
করোনা অতিমারি ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাসের নতুন নতুন ভ্যারিয়েন্ট আবির্ভূত হচ্ছে। এই প্রতিটি মিউটেশনের তাৎপর্য কী, তা একটি নির্দিষ্ট সময়ের পরে জানা যায়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী সমস্ত স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষগুলিকে এখন সর্বক্ষণ নজর রাখতে হয় কোন পরিবর্তগুলি বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা খেয়াল রাখার জন্য। এইভাবেই দক্ষিণ আফ্রিকার নেটওয়ার্ক ফর জিনোমিকস সারভিল্যান্স ভাইরাসের নতুন ভ্য়ারিয়েন্টকে শনাক্ত করেছে।
এখনও পর্যন্ত এই ওমিক্রন সম্পর্কে যা জানা গিয়েছে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বি.১.১.৫২৯-এর একাধিক স্পাইক প্রোটিন মিউটেশন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, নতুন এই ভ্যারিয়েন্ট অত্যন্ত সংক্রামক। দক্ষিণ আফ্রিকা বি.১.১.৫২৯-এর হদিশ পাওয়ার পর থেকে সে দেশে শেষ দুই সপ্তাহে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার, নেটওয়ার্ক ফর জিনোমিকস সারভিল্যান্স জানিয়েছিল বি.১.১.৫২৯ জোহানেসবার্গ এবং প্রিটোরিয়া সহ গাউতেং প্রদেশে দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকার বেশিরভাগ প্রদেশে ইতিমধ্যেই এই নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়ে থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকায় যেভাবে হঠাৎ সংক্রমণ লাগাম ছাড়া হয়ে গিয়েছে, তার কারণ ওমিক্রন হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
নতুন ভ্যারিয়েন্টে কী কী পরিবর্তন রয়েছে?
নতুন ভ্যারিয়েন্টের মিউটেশন প্রোফাইলে, নেটওয়ার্ক ফর জিনোমিকস সারভিল্যান্স বলেছে যে বি.১.১.৫২৯-এ “খুব অস্বাভাবিক ধরনের মিউটেশন” রয়েছে। এর মধ্যে স্পাইক প্রোটিনে ৩০ টি পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। এই স্পাইক প্রোটিনগুলির মাধ্যমেই ভাইরাস মানবদেহে প্রবেশ করে।
ওমিক্রনের মধ্যে যে মিউটেশনগুলি লক্ষ্য করা গিয়েছে, তার মধ্যে এক ধরনের ফেনোটাইপিক প্রভাব চিহ্নিত করা হয়েছে। এই ফেনোটাইপিক প্রভাবের মাধ্যমে মানব শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এর মধ্যে কিছু মিউটেশন ইতিমধ্যেই আলফা এবং ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের মধ্য শনাক্ত করা গিয়েছে। কিন্তু অন্যান্য অনেক মিউটেশনও রয়েছে যেগুলি এখন পর্যন্ত খুব কমই দেখা গিয়েছে এবং এই পরিবর্তনগুলির চারিত্রিক বৈশিষ্ট সম্পর্কেও বিশেষ জানা যায়নি এখনও পর্যন্ত। সুতরাং, এই মিউটেশনগুলি কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তা এই মুহূর্তে আমাদের কাছে পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। আফ্রিকার সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের তরফে জানানো হয়েছে, “ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে আরও গবেষণা চলছে। নতুন ভ্যারিয়েন্টে যে মিউটেশনগুলি দেখা গিয়েছে, সেগুলি কতটা প্রভাব ফেলতে পারে, বা কতটা ভয়াবহ হতে পারে সেই সব দিকগুলি নিয়ে আরও বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন গবেষকরা।
কোন কোন মিউটেশনগুলি বেশি উদ্বেগজনক?
দক্ষিণ আফ্রিকার নেটওয়ার্ক ফর জিনোমিকস সারভিল্যান্স বলেছে, বেশ কয়েকটি মিউটেশন রয়েছে যা থেকে ভাইরাসের দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার ক্ষমতা সম্পর্কে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে এইচ৬৫৫ওয়াই + এন৬৭৯কে + পি৬৮১এইচ।
এর পাশাপাশি এনএসপি৬-এর বৈশিষ্টটিও ওমিক্রনে দেখা যাচ্ছে না। করোনার আলফা, বিটা, গামা এবং ল্যাম্বডা ভ্যারিয়েন্টেও এই পরিবর্তনটি দেখা গিয়েছিল। দক্ষিণ আফ্রিকার নেটওয়ার্ক ফর জিনোমিকস সারভিল্যান্স জানিয়েছে, এটি সহজাত অনাক্রম্যতাকে ভেদ করে ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়াতে পারে।
আবার, নতুন ভ্যারিয়েন্টটিতে আর২০৩কে + জি২০৪আর মিউটেশনগুলি দেখা গিয়েছে। এছাড়াও আলফা, গামা এবং ল্যাম্বডাতেও এই বৈশিষ্টগুলি দেখা যায়। এই মিউটেশনগুলির কারণে, ভাইরাসের সংক্রমণ ক্ষমতা আরও বেড়ে যায়।
কী বলছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা শুক্রবার জানিয়েছে যে তাদের প্রযুক্তিগত উপদেষ্টা মণ্ডলী নতুন ভ্যারিয়েন্টটি পর্যালোচনা করতে বৈঠকে বসেছিল এটিকে উদ্বেগের কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছে। এর অর্থ হল যে ওমিক্রনে নিম্নলিখিত এক বা একাধিক পরিবর্তনের হতে দেখা গেছে – সংক্রমণ ক্ষমতা বৃদ্ধি; এবং চিকিৎসা, ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে কার্যকারিতা হ্রাস।
উল্লেখ্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রযুক্তিগত বিভাগের প্রধান মারিয়া ভ্যান কেরকোহোভ একটি বিবৃতিতে বলেছিলেন: “এই ভ্যারিয়েন্টটি দক্ষিণ আফ্রিকায় আমাদের সহকর্মীরা শনাক্ত করেছে এবং আমাদের কাছে রিপোর্ট করেছে। ১০০-র থেকে কিছু কম কম পুরো-জিনোম সিকোয়েন্স পাওয়া গিয়েছে। এ বিষয়ে আমরা এখনও খুব একটা জানি না। আমরা যা জানি তা হল এই ভ্যারিয়েন্টটিতে প্রচুর পরিমাণে মিউটেশন রয়েছে। উদ্বেগের বিষয় হল যে যখন এই ধরনের অনেকগুলি মিউটেশন থাকে, তখন একটি ভাইরাস কীভাবে আচরণ করে তার উপর প্রভাব ফেলতে পারে।”
ওমিক্রনের উপসর্গে কি কোনও পার্থক্য রয়েছে?
দক্ষিণ আফ্রিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর কমিউনিকেবল ডিজিজেস (NICD) বলেছে যে বর্তমানে বি.১.১.৫২৯ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণের পরে “কোন অস্বাভাবিক উপসর্গ” পাওয়া যায়নি। এর থেকে অনেকেই অনুমান করছেন, ডেল্টার মতো ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও, কিছু ব্যক্তি উপসর্গহীন থাকতে পারেন।
কীভাবে বিজ্ঞানীরা ওমিক্রনের উপর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নির্ধারণ করবেন?
ওমিক্রনের ক্ষেত্রে এর সংক্রমণের তীব্রতা ও তার চিকিৎসার বিষয়টি এখনও সম্পূর্ণরূপে প্রতিষ্ঠিত নয়। এটি ছাড়া বিজ্ঞানীরা কোনও একটি ঢেউয়ের সঙ্গে ওমিক্রের সরাসরি যোগসূত্র স্থাপন করতে পারবেন না। দক্ষিণ আফ্রিকা একটি পরীক্ষাগার ইতিমধ্যেই বি.১.১.৫২৯-এর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর প্রভাব পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। এর থেকেই বোঝা যাবে বাজারে চলতি বর্তমান ভ্যাকসিনগুলি ওমিক্রনের ক্ষেত্রে কার্যকার হবে কিনা। এর পাশাপাশি, হাসপাতালে ভরতি করা কিংবা এই ভ্যারিয়েন্ট কতটা ভয়াবহ হতে পারে, সেই সংক্রান্ত তথ্যও পাওয়া যেতে পারে বিজ্ঞানীদের এই গবেষণার মাধ্যমে।
আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় ওমিক্রনের হদিশ পাওয়া যাবে?
দক্ষিণ আফ্রিকার এনআইসিডি বলেছে যে বি.১.১.৫২৯-এর এস (S) জিনটি বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে যা এর মিউটেশনকে দ্রুত শনাক্ত করতে সাহায্য় করে। এনআইসিডি জানিয়েছে “তবে, অন্যান্য লক্ষ্যণগুলি- যেমন (N এবং RdRp জিন) খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। তাই আরটিপিসিআর পরীক্ষার রিপোর্ট প্রভাবিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই পিসিআর পরীক্ষাগুলিতে সাধারণত কমপক্ষে দুটি ভিন্ন SARS-CoV-2-কে শনাক্ত করে। যদি একটিতে কোনওরকম মিউটেশন দেখা যায়, তাহলে অন্যটি এ ক্ষেত্রে ব্যাকআপ হিসাবে কাজ করে।”