বিশ্লেষণ: ভারতে হাজির ‘জ়িকা’, কী উপসর্গ? কতটা আতঙ্কের?

TV9 Explained: ভাইরাসের নাম শুনলেই এখন আতঙ্ক। এরই মধ্যে ১৪ জনের শরীরে মিলেছে জ়িকার হদিশ।

বিশ্লেষণ: ভারতে হাজির 'জ়িকা', কী উপসর্গ? কতটা আতঙ্কের?
অলংকরণ: অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 15, 2021 | 10:38 AM

কোভিড অতিমারির মধ্যেই হানা দিয়েছে নতুন ভাইরাস। যে কেরলে ভারতের প্রথম করোনা সংক্রমণের হদিশ মিলেছিল, সেখানেই এ বার মিলেছে জ়িকা ভাইরাস। বৃহস্পতিবার দক্ষিণের এই রাজ্যে মশাবাহিত এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন ২৪ বছর বয়সী এক মহিলা। পরে আরও ১৩ জনের শরীরে এই ভাইরাসের উপস্থিতির হদিশ মিলেছে। একদিকে যখন করোনার ভ্যারিয়েন্ট ডেল্টা, কাপ্পার দাপাদাপি, তার মধ্যেই নতুন আতঙ্কে নাম জ়িকা। এখনও অনেকের কাছেই অপরিচিত এই ভাইরাস। পরিণতি সম্পর্কেও সচেতন নন ভারতীয়রা।

ডেঙ্গুর জন্য দায়ী মশাই ছড়ায় জ়িকা:

আর পাঁচটা মশাবাহিত রোগের মধ্যে জ়িকাও একটি। মশার কামড় থেকেই ছড়াই এই ভাইরাস। সাধারণত এডিস মশা কামড়ালে জ়িকা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এরাই এই ভাইরাসের বাহক। দিনের বেলা কামড়ায় এডিস মশা। ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়াও ছড়ায় এই এডিস মশা থেকে।

সূদুর আফ্রিকা থেকে পাড়ি ভারতে

জ়িকা ভাইরাস নতুন নয়। ১৯৪৭-এ আফ্রিকায় প্রথম এই ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। তবে সে ভাবে বাড়বাড়ন্ত ছিল না এই ভাইরাসের। পরে ২০১৫ তে প্রথম ব্রাজিলে মহামারির আকার নেয় জ়িকা । মশা থেকে এই সংক্রমণ ছড়ায় ঠিকই তবে যৌন সংসর্গেও ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়াতে পারে। ২০১৬-তে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জ়িকা ভাইরাসকে ‘পাবলিক হেল্থ এমার্জেন্স’ তকমা দেয়। ব্রাজিলের আশেপাশে অন্যান্য দেশেও ছড়িয়ে পড়ে জিকা। আমেরিকাতেও জিকা পৌঁছে যায়।

উপসর্গও ডেঙ্গুর মতই:

জ়িকার প্রথম উপসর্গ হল জ্বর। তবে জ়িকা ভাইরাস চিহ্নিত করা কঠিন। অনেকেই সাধারণ জ্বর ভেবে গুরুত্ব দেন না। এরই মধ্যে রয়েছে কোভিড। তাই জ্বর হলেই আরটি পিসিআর টেস্টের কথা ভাবেন অনেকে। তবে জ়িকায় সাধারণত যে উপসর্গগুলি দেখা যায়, সেগুলি হল, জ্বর, নাক থেকে জল পড়া, মাথা ব্যাথা, গায়ে র‍্যাশ। এক সপ্তাহের বেশি এই উপসর্গগুলি থাকলে জ়িকা হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। অনেক রোগী ক্ষেত্রে কনজাংটিভাইটিসও দেখা যায়। পেশীতে ব্যাথাও একটি উপসর্গ।

জ়িকা থেকে বাঁচবেন কী ভাবে?

দিনের বেলাই সাধারণত এডিস মশার উপদ্রব দেখা যায়। তাই যে অঞ্চলে এই ভাইরাস ছড়াচ্ছে সেখানে দিনের বেলা সচেতন থাকতে হবে। গা, হাত-পা ঢেকে রাখার চেষ্টা করতে হবে। মসা যাতে না কামড়ায় তার জন্য রিপেলেন্ট ক্রিম মাখতে হবে। পাশাপাশি যেহেতু যৌন সংসর্গে এই ভাইরাস ছড়ায় তাই সঙ্গীকেও সচেতন থাকতে হবে।

জ়িকায় কি মৃত্যু হওয়া সম্ভব?

একটাই আশার কথা, এই ভাইরাসের মৃত্যুর সম্ভাবনা খুবই কম। ১০০ জন রোগীর মধ্যে একজনের মৃত্যুর সম্ভাবনা থাকে এই ভাইরাসে। অন্যান্য মশাবাহিত রোগের মতো এই ভাইরাসের ক্ষেত্রেও ওষুধ খেলে ও বিশ্রাম নিলে জ়িকা সেরে যায় সহজেই।

তাহলে ভয় কিসের?

মৃত্যু না হলেও জ়িকায় থাকে ভয়। নার্ভের সমস্যা দেখা দিতে পারে এই ভাইরাসে। মস্তিষ্কে বা স্পাইনাল কর্ডের নার্ভে সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভবতী মহিলা যদি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হন, তাহলে সন্তানের কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে। মাইক্রোফ্যালি নামে এক ধরনের জন্মগত সমস্যা হয়, যাতে শিশুর ব্রেন তুলনামুলকভাবে ছোট হয়। যদিও বেশি সময়ের জন্য আর কোন সমস্যা হতে পারে, তা নিয়ে এখনও গবেষণা চলছে।

মুক্তির উপায়?

না, জ়িকা ভাইরাসের কোনও ভ্যাকসিন এখনও নেই। ফ্রান্সে এই ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণা চলছে। তবে সেই গবেষণা এখনও ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে।

আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: ‘ঝলসে’ যাচ্ছে কানাডা, মৃত্যু ৫০০ ছাড়িয়ে, কারণ কী?