উদয়পুর প্রাসাদের গেটে মারামারি মেবারের রাজাদের! সিনেমাও ডাহা ফেল করছে রাজপরিবারের এই কেচ্ছার সামনে
Udaipur Royal Family Clash: মঙ্গলবার মহারাণা পদে অভিষেক হয় ছেলে লক্ষ্যরাজের। আঙুল কেটে সেই রক্ত দিয়ে কপালে রক্তটিকা আঁকা, তারপর প্রজাদের হাত থেকে প্রতীকি তরোয়াল নিয়ে মেবারকে রক্ষা করার শপথ নেন লক্ষ্যরাজ। নিয়ম মতো তাঁর সিটি প্যালেসে বসে দরবার চালানোর কথা।
জয়পুর: ১৪ বছর আগে একটা সিনেমা বলিউডকে কিছুটা হলেও নাড়িয়ে দিয়েছিল। দিবাকর ব্যানার্জীর পরিচালনায় মুক্তি পেয়েছিল “লাভ, সেক্স ঔর ধোঁকা”। কম বাজেটে, কোনও বড় মুখ ছাড়াই সিনেমাটা তৈরি হয়েছিল। প্রেম, যৌনতা, বিশ্বাসভঙ্গ, খুন – সেসব নিয়েই টানটান গল্প। এই মুহুর্তে রাজস্থানের মেবারে যা ঘটেছে, সেটা ওই লাভ, সেক্স আর ধোঁকার থেকে টানটান, জমজমাট। এখানেও প্রেম আছে, যৌনতা আছে। বিশ্বাসভঙ্গ এমনকি একই পরিবারে মধ্যে চরম শক্রতাও রয়েছে। আর এর কেন্দ্রে রয়েছে উদয়পুর সিটি প্যালেস।
রাজস্থানের সবচেয়ে বড় প্রাসাদ। ট্র্যাভেল ওয়ার্ল্ড পত্রিকার বিচারে দুনিয়ার সেরা হেরিটেজ বির্ল্ডিংয়ের তকমা পেয়েছে এই প্রসাদ। এর একটি অংশ নিয়ে হোটেল হয়েছে। সেই হোটেলও দুনিয়ার সেরা হোটেল হিসাবে পুরস্কৃত হয়েছে। সাড়ে ৫ একর জুড়ে ছড়িয়ে থাকা প্রাসাদের আনুমানিক দাম ১৫ হাজার কোটি টাকা। এই রাজপ্রাসাদে হঠাৎ কী হল?
মহারাণা হিসাবে রাজ্যাভিষেকের পর উদয়পুর সিটি প্যালেসে ঢোকার চেষ্টা করেন বিশ্বরাজ সিং মেবার। তিনি আবার রাজস্থানের বিজেপি বিধায়কও বটে। কিন্তু প্যালেসের গেট বন্ধ। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করলেন সদ্য অভিষেক হওয়া মহারাণা। দাবি করলেন, মহারাণা পদে অভিষেকের পর প্রাসাদে ধুনি মাতা ও একলিঙ্গ শিবের পুজো দেওয়াটাই মেবার রাজপরিবারের রীতি। তিনি সেই প্রথা পালন করতেই এসেছেন। তারপরেও প্যালেসের গেট খুলল না। উল্টে প্রাসাদ থেকে বেরিয়ে বিশ্বরাজের তুতো ভাই, লক্ষ্যরাজ সিং মেবার জানিয়ে দিলেন, বিশ্বরাজকে প্রাসাদে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
তারপর যা হওয়ার ছিল, তাই হল। পাথর ছোড়াছুড়ি, মারামারি ও সংঘর্ষ। যার জেরে ১০ জনকে হাসপাতালে যেতে হয়েছে। গোটা শহরে কার্ফু জারি রয়েছে। তবুও সংঘর্ষ থামছে না। বিশ্বরাজ ও লক্ষ্যরাজের সমর্থকরা একে অন্যকে দেখলেই মারামারি করছেন। মঙ্গলবার রাত থেকে শুরু হওয়া সেই সংঘর্ষ এখনও চলছে।
এটা কিন্তু আর পাঁচটা রাজপরিবারের অন্দরের ঝগড়া-ঝামেলা নয়। বরং এর পিছনে রয়েছে টানটান গল্প। তা হল “লাভ, সেক্স আর ধোঁকা”র। মেবারের প্রয়াত মহারাণা অভিষেক সিং মেবারের দুই ছেলে। মহেন্দ্র প্রতাপ মেবার ও শ্রীজি অরবিন্দ সিং মেবার। অভিষেক সিংয়ের মৃত্যুর পর মহারাণা হন তাঁর বড়ছেলে মহেন্দ্র প্রতাপ। দুই সপ্তাহ আগে মহেন্দ্র প্রতাপ প্রয়াত হয়েছেন। তারপর মঙ্গলবার মহারাণা পদে অভিষেক হয় ছেলে লক্ষ্যরাজের। আঙুল কেটে সেই রক্ত দিয়ে কপালে রক্তটিকা আঁকা, তারপর প্রজাদের হাত থেকে প্রতীকি তরোয়াল নিয়ে মেবারকে রক্ষা করার শপথ নেন লক্ষ্যরাজ। নিয়ম মতো তাঁর সিটি প্যালেসে বসে দরবার চালানোর কথা।
অবাক লাগলেও, এখনও এই রাজারা দরবার বসান। নাম-কা ওয়াস্তে হলেও প্রজাদের অভিযোগ শোনেন। কিন্তু উদয়পুর সিটি প্যালেসের ভার এখন তাঁর কাকা শ্রীজি অরবিন্দের হাতে। প্রাসাদের রক্ষণাবেক্ষণ থেকে নিরাপত্তার ভারও শ্রীজির-ই হাতে। আর শ্রীজির দাদা মহেন্দ্র প্রতাপই লিখিতভাবে ভাইকে সেই অধিকার দিয়ে গিয়েছেন। ছেলেকে দায়িত্ব না দিয়ে কেন ভাইয়ের হাতে প্রাসাদের ভার দিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত মহারাণা? এখানেই সবচেয়ে বড় চমক।
রাজপরিবার সূত্রে খবর, মহারাণা ভাইয়ের হাতে প্রাসাদ ছাড়েননি, ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। কোনও এক কেলেঙ্কারিকে চাপা দিতে। আসলে নিজের ভাইয়ের স্ত্রী ও তাঁর বোনের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন মহেন্দ্র। শ্রীজি কোনওভাবে সেটা জেনে যান। এবং ভাইকে চাপ দিয়ে প্রাসাদের অধিকার ছাড়তে বাধ্য করেন। রাজ পরিবারের একটা সূত্র দাবি করছে, ‘টপ সিক্রেট’ সেই উইলও নাকি শ্রীজির কাছে রয়েছে। সেটা প্রকাশ্যে এলে রাজপরিবারের অন্দরের কেচ্ছা একেবারে খুল্লম-খুল্লা হয়ে যাবে। তাই সব বুঝেই বেশি জোর ফলাতে পারছেন না বিশ্বরাজ।
বিশ্বরাজের অভিযোগ, মেবারবাসীর আরাধ্য ধুনিমাতা ও একলিঙ্গ শিবের মন্দির বন্ধ করে দিয়েছে তাঁর কাকা ও তুতো ভাই। মেবারের ইতিহাসে কখনও মন্দির বন্ধ হয়নি। তাঁর প্রাসাদে ঢোকা বন্ধ করতে নাকি সেটাই হচ্ছে। যদিও শ্রীজি ও লক্ষ্যরাজের দাবি, মন্দির খোলাই রয়েছে।