‘বোনটা মরে যাবে কিছু করুন স্যর…’, অফিসারের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েও হল না শেষ রক্ষা
Dengue Outbreak: ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি ছিল উত্তর প্রদেশের (Uttar Pradesh) ১১ বছরের কিশোরী। এই ঘটনার কয়েক ঘণ্টার পরই তার মৃত্যু হয়।
ফিরোজাবাদ: বোন তখন হাসপাতালে ধুঁকছে। তরুণী হয়ত জানতেন না ১১ বছরের বোন তার জীবনের শেষ কয়েক ঘণ্টার লড়াই লড়ছে। তবু তার প্রাণের আশঙ্কায় শেষ চেষ্টা করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন উত্তর প্রদেশের এই তরুণী। ডেঙ্গি (Dengue) আক্রান্ত বোনকে যাতে চিকিৎসাটুকু দেওয়া হয়, সেই আর্জি নিয়েই সরকারি আধিকারিকের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েছিলন নিকিতা কুশওয়াহা। পুলিশের টানাটানিতেও নাছোড়াবান্দা তিনি। আশা ছিল চিকিৎসার ব্যবস্থা করে বোনকে সুস্থ করে তুলবেন। কিন্তু এত কিছুর পরও শেষ রক্ষা হল না। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পরই মৃত্যু হয় ১১ বছরের কিশোরীর। যদিও হাসপাতালের (Hospital) দাবি, সবরকম চেষ্টা করেও বাঁচানো যায়নি ওই কিশোরীকে।
ফিরোজাবাদের একটি হাসপাতালে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে ভর্তি ছিল ১১ বছরের কিশোরী বৈষ্ণবী কুশওয়াহা। ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, নিকিতা একটি গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েছেন। তাঁকে টেনে তোলার চেষ্টা করছে মহিলা পুলিশ। নিকিতাকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘স্যার প্লিজ স্যর, কিছু করুন, নাহলে আমার বোন মারা যাবে। ওকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন।’ পুলিশ মহিলাকে ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করেও পারছে না। নিকিতার অভিযোগ, তাঁর বোনকে সঠিক চিকিৎসা দেওয়া হয়নি। যদিও এই সব চেষ্টা অর্থহীন হয়ে যায় কিছুক্ষণের মধ্যেই। যখন হাসপাতালের বেডে শেষ হয়ে যায় বৈষ্ণবীর লড়াই।
নিকিতা এই অভিযোগে তদন্তের আর্জি জানিয়েছেন। চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে যাতে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, সেই দাবিও জানিয়েছেন তিনি। তবে হাসপাতালের দাবি, কিশোরীকে বাঁচাতে সব চেষ্টাই করা হয়েছিল। ফিরোজাবাদ মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ ড. সঙ্গীতা আনেজা বলেন, ‘এটা একটা জটিল কেস ছিল। লিভার নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিল কিশোরীর। পেটে তরল জমতে শুরু করেছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ভেন্টিলেটরেও রাখা হয়। আমরা যা যা সম্ভব, সবই করেছি কিন্ত ওকে বাঁচাতে পারিনি।
ফিরোজাবাদে গত কয়েকদিনে ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা বেড়েছে। শুধু সোমবারই ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়ে এই শহরে মৃত্যু হয়েছে ৬০ জনের। তাদের মধ্যেই বৈষ্ণবী একজন। মৃত্যু হয়েছে ৫ বছরের এক শিশুরও। তার বাবা-মা সন্তানকে নিয়ে অনেক ছুটোছুটি করেছেন। সকাল ৮ টায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসা শুরু হয়নি। চিকিৎসা শুরু হতে হতে সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে যায়। আর তার কিছুক্ষণের মধ্যে মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়ে পাঁচ বছরের সাবন্যা গুপ্তা। ওই শিশুর দাদাও দাবি করেছেন, তার বোনকে যদি চিকিৎসা দেওয়া হত, তাহলে এমনটা হত না। শিশুর শারীরিক অবস্থার কথা হাসপাতালে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি। কোনও অনুরোধই শোনা হয়নি বলে দাবি দাদার।
ডেঙ্গি নিয়ে এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় যোগী সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছে বিরোধীরা। সামনেই উত্তর প্রদেশের বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অবনতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছন মায়াবতী, অখিলেশ যাদবেরা। শুধু ফিরোজাবাদ নয়, মথুরা, কানপুরেও ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা অনেকটাই বেশি।
আরও পড়ুন: অকারণে বারবার স্বামী-স্ত্রীর মামলায় ডিভোর্স হওয়া সম্ভব, জানাল সুপ্রিম কোর্ট