চিনের সঙ্গে যুঝতেই কি ভারত-আমেরিকার সামরিক চুক্তি! ‘বেকায়’ বেকায়দায় পড়বে বেজিং?
চুক্তি স্বাক্ষর করে রাজনাথ সিং বলেন, "আমরা খুশি যে বেকা চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। এখন বিভিন্ন তথ্য একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যাবে। আমরা ভবিষ্যতেও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে কথা বলতে রাজি।"
TV9 বাংলা ডিজিটাল: সোমবারই নয়া দিল্লি (New Delhi) এসে পৌঁছন মার্কিন বিদেশ সচিব মাইক পম্পেও (Mike Pompeo) এবং প্রতিরক্ষা সচিব মার্ক এসপার। ওয়াশিংটন (Washington) থেকে আসার সময়ই টুইটে পম্পেও সাফ জানিয়ে দেন, ভারতে আসার একমাত্র লক্ষ্যই হল “মুক্ত ও অবাধ ভারত-প্রশান্তমহাসাগরীয় অঞ্চল।” সেই মতোই আজ ভারত ও আমেরিকার মন্ত্রী পর্যায়ে ‘টু প্লাস টু’ আলোচনায় স্বাক্ষরিত হল ‘বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কোঅপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট’ বা ‘বেকা’ (BECA) চুক্তি।
Wheels up for my trip to India, Sri Lanka, Maldives, and Indonesia. Grateful for the opportunity to connect with our partners to promote a shared vision for a free and open #IndoPacific composed of independent, strong, and prosperous nations. pic.twitter.com/IoaJvtsHZC
— Secretary Pompeo (@SecPompeo) October 25, 2020
আজ দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং (Rajnath Sing) ও বিদেশমন্ত্রী সুব্রহ্মণ্যম জয়শঙ্কর সঙ্গে দেখা করেন মাইক পম্পেও ও মার্ক এসপার। সেখানেই চুক্তি স্বাক্ষর করে রাজনাথ সিং বলেন, “আমরা খুশি যে বেকা চুক্তি স্বাক্ষরিত হল। এখন বিভিন্ন তথ্য একে অন্যের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যাবে। আমরা ভবিষ্যতেও বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে কথা বলতে রাজি।” চুক্তি সই করেই টুইটে রাজনাথ লেখেন, “আজকের আলোচনা ভারত ও আমেরিকার সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করবে।”
Wheels up for my trip to India, Sri Lanka, Maldives, and Indonesia. Grateful for the opportunity to connect with our partners to promote a shared vision for a free and open #IndoPacific composed of independent, strong, and prosperous nations. pic.twitter.com/IoaJvtsHZC
— Secretary Pompeo (@SecPompeo) October 25, 2020
কী এই ‘বেকা’ (BECA) চুক্তি?
‘বেকা’-র সম্পূর্ণ কথা হল বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কোঅপারেশন অ্যাগ্রিমেন্ট। যার মাধ্যমে গোপন উপগ্রহ ও সেন্সরের মাধ্যমে তথ্য আদান প্রদান করা হবে দুই দেশের মধ্যে। ভারত ও আমেরিকার মধ্যে এর আগে তিনটি তথ্য আদান প্রদানের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। ২০০২ সালে স্বাক্ষরিত হয়েছিল ‘জেনারেল সিক্যুরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন’ চুক্তি। পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালে স্বাক্ষরিত হয় ‘লজিস্টিকস এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব এগ্রিমেন্ট’। তৃতীয় ‘কমিউনিকেশন অ্যান্ড সিকিউরিটি’ চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয় ২০১৮ সালে। বেকা চুক্তি হল দুই দেশের মধ্যে চতূর্থ মৌলিক চুক্তি।
চুক্তির (BECA) ফলে ভারতের কী লাভ?
এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে গোপনীয় ভৌগলিক তথ্য বিনিময় করা হবে। মানচিত্র, বিভিন্ন গোপনীয় চার্ট ছাড়াও ভূ চৌম্বকত্বের মতো একাধিক বিষয়ে তথ্য ভাগ করে নেবে ভারত ও আমেরিকা। বেকা চুক্তির মাধ্যমে ভারতের হাতে আমেরিকা তুলে দেবে সীমান্তের উপগ্রহ চিত্র। যার মাধ্যমে সীমান্তে আরও শক্তিশালী হবে ভারত। মহাসাগরে চিনের যুদ্ধ জাহাজের গতিবিধি থাকবে সম্পূর্ণ নজরদারির মধ্যে।
পাকিস্তানের উপরও আরও শক্ত নিয়ন্ত্রণ কায়েম হবে ভারতীয় সেনার। ভবিষ্যতে বালাকোটের মতো সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হলে আমেরিকা থেকে প্রাপ্ত উপগ্রহ চিত্রের মাধ্যমে সাফল্যের প্রমাণ থাকবে ভারতের হাতে।
চুক্তির (BECA) ভবিষ্যত কী?
আমেরিকায় নির্বাচনে বাকি এক সপ্তাহেরও কম সময়। সেক্ষেত্রে নির্বাচনের কয়েক দিন আগে স্বাক্ষরিত এই চুক্তির ভবিষ্যত নিয়ে তৈরি হয়েছে গভীর ধোঁয়াশা। তবে বিশ্লেষকদের কথা অনুযায়ী, আমেরিকা আগে জাপান, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি করত রাশিয়ার কথা মাথায় রেখে। এখন রাশিয়ার থেকেও আমেরিকার কঠোর প্রতিদ্বন্দ্বী চিন। তাই ভারত-চিন বিবাদের আবহকে কাজে লাগিয়ে চিনকে চাপে রাখতেই এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার। এছাড়াও ভারতের সঙ্গে চুক্তি করে চিন বিরোধিতায় ফের স্পষ্ট বার্তা দিতে চাইছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। জাতীয়তাবাদী মনোভাব নিয়ে চলা ট্রাম্পের এ হেন সামরিক কৌশল নির্বাচনে তাঁকে মদত দিলেও দিতে পারে বলে মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের।
এর আগে ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump) ক্ষমতায় এসে বারাক ওবামার ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বাতিল করে দিয়েছিলেন। তবে এবার সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হলেও হতে পারে। বাইডেন ক্ষমতায় এলেও বহাল থাকতে পারে ‘বেকা’ চুক্তি। এমনটাও মত বিশেষজ্ঞদের একাংশের। মার্কিন নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর ভারতীয় অনাবাসীদের ভোট। চুক্তি করে ভারতীয়দের মন জয় করতে চাইছেন না তো ট্রাম্প! বাতিল করা যাচ্ছে না এমন সম্ভাবনাও।
এর আগেও ইউপিএ জমানায় ভারতের সঙ্গে ‘বেকা’ চুক্তি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছিল আমেরিকা (USA)। কিন্তু গোপনীয় তথ্য দ্বিপাক্ষিক ভাবে বিনিময় হলে আমেরিকার কাছেও চলে যাবে ভারতের তথ্য। তাই ভারতের জাতীয় সুরক্ষার স্বার্থে এই চুক্তি করতে রাজি হয়নি মনমোহনের সরকার। এছাড়াও কংগ্রেস আমলে ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক ছিল রাশিয়ার সঙ্গে। মোদী ক্ষমতায় আসার পর ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হয় আমেরিকার সম্পর্ক। তারই ফলস্বরূপ রাজনাথ সিং ও এস জয়শঙ্করের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত হল এই চুক্তি। স্বাভাবিক ভাবে এবারও তথ্য সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে কংগ্রেস।