Midday Meal: ‘মিড ডে মিলে ৬ মাসে ১০০ কোটির দুর্নীতি’, কেন্দ্রের রিপোর্ট নিয়ে তরজায় দুই ফুল
Midday Meal scam in West Bengal: মিড ডে মিল বা অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত স্কুলশিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের প্রকল্পেও ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি? কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের নিযুক্ত এক প্যানেলের রিপোর্টে এমনটাই বলা হয়েছে। এই রিপোর্ট নিয়ে নতুন করে তরজায় বিজেপি-তৃণমূল।
নয়া দিল্লি/কলকাতা: মিড ডে মিল বা অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত স্কুলশিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পুষ্টিকর খাবার সরবরাহের প্রকল্পেও ১০০ কোটি টাকার দুর্নীতি। কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের নিযুক্ত এক প্যানেলের রিপোর্টে এমনটাই বলা হয়েছে। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, গত বছরের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১৬ কোটি অতিরিক্ত মিড ডে মিল পরিবেশনের রিপোর্ট করেছে পশ্চিমবঙ্গের স্থানীয় প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট খাবারের মূল্য ১০০ কোটি টাকারও বেশি। মিড ডে মিল প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার পর, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে পিএম পোষণ (PM POSHAN) প্রকল্পের বাস্তবায়ন পর্যালোচনা করার জন্য একটি ‘যৌথ পর্যালোচনা মিশন’ বা জেআরএম (JRM) গঠন করা হয়েছিল। সেই মিশনের রিপোর্টেই এই কেন্দ্রীয় প্রকল্পে অনিয়ম ধরা পড়েছে। রিপোর্টটি কেন্দ্র করে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার এবং বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে নতুন করে দ্বন্দ্বের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে এই রিপোর্ট সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। উল্টো দিকে, এই রিপোর্ট নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিজেপি।
শিক্ষামন্ত্রক নিযুক্ত জেআরএম-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবর্ষের প্রথম এবং দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে ভারত সরকারের কাছে যে অগ্রগতি রিপোর্ট জমা দিয়েছিল বাংলার সরকার, তা অনুসারে ২০২২ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পিএম পোষণ প্রকল্পের অধীনে ১৪০.২৫ কোটি খাবার পরিবেশন করা হয়েছিল। কিন্তু, জেলাগুলি থেকে রাজ্য সরকারকে যে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছিল, তার সঙ্গে এই হিসেব মিলছে না। জেলাগুলির রিপোর্ট অনুসারে, উপরোক্ত সময়কালে পরিবেশিত খাবারের সংখ্যা ছিল ১২৪.২২ কোটি। রিপোর্টে বলা হয়েছে, “এইভাবে, ১৬ কোটিরও বেশি অতিরিক্ত খাবারের প্রতিবেদন করা হয়েছে। এটি একটি গুরুতর সমস্যা। সংশ্লিষ্ট উপাদান খরচ ছিল ১০০ কোটি টাকা। রাজ্য দাবি করে যে গড়ে ৯৫ শতাংশের বেশি শিশু মিড ডে মিলের খাবার গ্রহণ করে। তবে, পরিদর্শনের সময় দেখা গিয়েছে, এই সময়ের মধ্যে মিড ডে মিলের খাবার গ্রহণ করেছে ৬০ থেকে ৮৫ শতাংশ শিশু।” এই রিপোর্টে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণ প্রদানের এই প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ করা, খাদ্যশস্যের ভুল বরাদ্দ, নির্ধারিত পরিমাণ থেকে ৭০ শতাংশ কম চাল, ডাল এবং শাকসবজি রান্না করা এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ মশলা ব্যবহার নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে।
তবে, এই রিপোর্ট মানতে নারাজ রাজ্য সরকার। তাদের অভিযোগ প্রকল্প পরিচালককে না জানিয়েই এই রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু টুইট করেছেন, “যৌথ পর্যালোচনা মিশন হল কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ উদ্যোগের প্রকল্পের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এতে উভয় সরকারের প্রতিনিধিরাই রয়েছেন। ১৩তম জেআরএম ২০২৩ সালের জানুয়ারি এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে রাজ্যের সমস্ত স্কুলে রান্না করা মিড-ডে মিল স্কিম (CMDM) পরিদর্শন করেছে। দলে রাজ্যের প্রতিনিধি, সিএমডিএম-এর প্রকল্প পরিচালককে না জানিয়েই, তারা এখন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। রিপোর্টে তাঁর স্বাক্ষরও নেওয়া হয়নি।”
এদিকে, এই রিপোর্ট নিয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছে বিজেপি। রাজ্য বিজেপির নেতা তথা কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী সুভাষ সরকার বলেছেন, “শুধু মিড ডে মিলের অতিরিক্ত রিপোর্ট করাই নয়, পর্যালোচনার সময় জেআরএম-এর প্রতিনিধিরা দেখেছেন, শিক্ষার্থীদের বডি মাস ইনডেক্স অত্যন্ত কম। অর্থাৎ, তারা সঠিক পুষ্টি পাচ্ছে না। তারা রক্তাল্পতায় ভুগছে। শুধু তাই নয়, খাদ্য উপকরণ সঠিকভাবে রাখাও হচ্ছে না। বীরভূম থেকে আরও গুরুতর অভিযোগ এসেছে। বগটুই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিপূরণের জন্য মিড ডে মিল প্রকল্পের টাকা ব্যবহার করা হয়েছে। তারা বলেছিল ২০২২ সালের ২৮ মার্চ ওই টাকা ফিরিয়ে দিয়েছে রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থা। কিন্তু কোনও রসিদ বা কোনও নথি দেখাতে পারেনি রাজ্য। এটা অত্যন্ত গুরুতর অভিযোগ।
আবাস যোজনা, ১০০ দিনের কাজ থেকে শুরু করে বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের বকেয়া তহবিল আটকে রেখেছে কেন্দ্র, অভিযোগ রাজ্যের। এর ফলে পশ্চিমবঙ্গের জনগণ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির সুবিধার পাচ্ছেন না বলে দাবি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শহিদ মিনারের সভা থেকে বলেছিলেন, ২০২১ সালে বিধানসবা নির্বাচনে পরাজয়ের কারণেই বাংলার মানুষকে বঞ্চিত করছে বিজেপির নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার। অন্যদিকে, বিজেপির যুক্তি, এই সব প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান নিশ্চয়তা আইনের ২৭ নম্বর ধারায় প্রয়োগ করে তহবিল আটকে দিয়েছে কেন্দ্র। এবার সেই তহবিল বন্ধ প্রকল্পের তালিকায় কি পিএম পোষণ প্রকল্পের নামও জুড়বে, সেটাই এখন দেখার।