Mamata Banerjee: বাংলার ৪২ আসনই ‘পাখির চোখ’? খাড়্গের নাম প্রস্তাবের পিছনে কোন অঙ্ক মমতার?

Mamata Banerjee: ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর, তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেছিলেন, মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের মতো জনপ্রিয় কোনও নেতা বা নেত্রীকে জোটের নেতা করা উচিত। তারপরও এদিন মমতা কেন, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মল্লিকার্জুন খাড়্গের নাম প্রস্তাব করলেন?

Mamata Banerjee: বাংলার ৪২ আসনই 'পাখির চোখ'? খাড়্গের নাম প্রস্তাবের পিছনে কোন অঙ্ক মমতার?
অঙ্ক কষেই খাড়্গের নাম প্রস্তাব মমতারImage Credit source: PTI and ANI
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 19, 2023 | 8:02 PM

নয়া দিল্লি: আসন ভাগাভাগি, যৌথ কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হল ইন্ডিয়া জোটের চতুর্থ বৈঠকে। তবে, সব কিছু ছাপিয়ে বৈঠকের পর চর্চা শুরু হয়েছে জোটের প্রধানমন্ত্রী মুখ নিয়ে। সোমবারই, বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, লোকসভা নির্বাচনের পরই প্রধানমন্ত্রী পদ-প্রার্থী নির্ধারণ করবে ইন্ডিয়া জোট। তবে, মঙ্গলবারের বৈঠকে সেই অবস্থান থেকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়েছেন তিনি। বৈঠকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়্গেকে জোটের প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী করার প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। তাঁর এই প্রস্তাব সমর্থন করেছেন বৈঠকে যোগ দেওয়া সব দলই। এমনকি, কংগ্রেসের সঙ্গে বিরোধ থাকা অরবিন্দ কেজরীবালও এই প্রস্তাবে সায় দিয়েছেন। ৫ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর, তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেছিলেন, মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের মতো জনপ্রিয় কোনও নেতা বা নেত্রীকে জোটের নেতা করা উচিত। তারপরও এদিন মমতা কেন, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে মল্লিকার্জুন খাড়্গের নাম প্রস্তাব করলেন?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এর পিছনে জটিল রাজনৈতিক অঙ্ক রয়েছে। এক ঢিলে আসলে অনেকগুলি পাখি মেরেছেন মমতা। প্রথমত, বিজেপির যাবতীর আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যই হল গান্ধী পরিবার। মল্লিকার্জুন খাড়্গে একজন দলিত নেতা। রাহুল গান্ধীকে যেভাবে কথায় কথায় আক্রমণ করতে পারেন বিজেপি নেতারা, খাড়্গে জোটের নেতা হলে তা সম্ভব হবে না। সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনগুলিতে রাহুল গান্ধীর নেতৃত্বের দুর্বলতা আরও একবার ধরা পড়ে গিয়েছে। এই অবস্থায় খাড়্গে অনেক বেষশি গ্রহণযোগ্য মুখ। তবে শুধু বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক পরিসরে সুবিধা লাভই নয়, জোটের মধ্যেও খাড়্গেকে নেতা করলে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের লাভ রয়েছে।

আর এই লাভের গল্প লুকিয়ে আছে, জোটের বৈঠকে এদিনই গৃহীত এক প্রস্তাবে। এদিন জোট সিদ্ধান্ত নিয়েছে, রাজ্য স্তরে আসন ভাগাভাগি হবে। যে যে রাজ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে সমস্যা তৈরি হবে, সেই রাজ্যগুলির আসন ভাগাভাগির বিষয় কেন্দ্রীয় স্তরে আলোচনা করা হবে। সিপিআইএম তথা বামেরা আগেই জানিয়ে দিয়েছে, বাংলায় তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কোনও পরিস্থিতিতেই তারা আসন ভাগাভাগি করবে না। পড়ে রইল কংগ্রেস। তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়তে পারে কংগ্রেস। অধীর চৌধুরী যতই মমতা বিরোধিতা করুন, হাইকমান্ড নির্দেশ দিলে, তাঁকে জোট করতেই হবে। এদিকে, তৃণমূল কংগ্রেস চায় রাজ্যের ৪২টি আসনেই জোটের প্রতিনিধি হিসেবে লড়াই করবে তৃণমূল কংগ্রেস। এই নিয়ে কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে দর কষাকষি করতে হতে পারে মমতাকে।

মল্লিকার্জুবন খাড়্গের নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করায়, কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে সুবিধা হবে মমতার, এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই ক্ষেত্রে তৃণমূল নেত্রী বলতে পারেন, তিনিই কংগ্রেস সভাপতির নাম প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করেছেন। তার বিনিময়ে, বাংলার ৪২টি আসনেই তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থীদের সমর্থন করুক কংগ্রেস।

তাহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী করার স্বপ্ন জলাঞ্জলি দিল ঘাসফুল শিবির? রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, না। আসলে, গণতন্ত্রে সংখ্যাই শেষ কথা বলে। বাংলার ৪২টি আসনেই লড়তে পারলে, জোটের প্রতিনিধি হিসেবে লড়তে পারলে, তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন আসার সম্ভাবনা থাকবে। সেই ক্ষেত্রে তৃণমূল কংগ্রেসের দাবির জোরও বেশি হবে। তবে, এখনও পর্যন্ত আসন্ন নির্বাচনে জোটের জেতার কোনও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। কাজেই প্রধানমন্ত্রী হওয়া না হওয়াটা অনেক দূরের বিষয়। কিন্তু, জোট না জিতলেও, ৪২ আসনেই প্রার্থী দিতে পারলে, তৃণমূলের সর্বোচ্চ সংখ্যক আসন জেতার সম্ভাবনা তৈরি হবে। কাজেই আখেড়ে লাভ হবে তৃণমূল কংগ্রেসেরই।