এক ডোজ়েই কামাল নয়, ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া আবশ্যক, কেন জানেন?
ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও কিছু মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে সময় লাগতে পারে। আর সেই সময়ে তিনি করোনা আক্রান্তও হতে পারেন। তবে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ় নেওয়ার ফলে সংক্রমণ প্রাণঘাতী রূপ ধারণ না করার সম্ভাবনাই বেশী। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ়টি সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হওয়ার পরে অবশ্যই নেওয়া উচিত।
জ্যোতির্ময় রায় : ১ মে থেকে দেশে করোনা টিকাকরণের তৃতীয় পর্ব শুরু হয়েছে। এই পর্বে ১৮ ঊর্ধ্ব যুব সম্প্রদায়দের টিকাকরণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, এই পর্বে ৪৫ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিরাও অনেকেই টিকা নিচ্ছেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে বহু মানুষেরই দুটি ডোজ় নেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। দেশে এখনও পর্যন্ত ১৫ কোটি ৬৮ লক্ষ ১৬ হাজার ৩১ জনকে করোনার ভ্যাকসিন ৪৪ হাজারদেোয়ৈ হয়েছে। তার মধ্যে ১২ কোটি ৮১ লক্ষ ৭১ হাজার ১৫৩ জনকে টিকার প্রথম ডোজ় দেওয়া হয়েছে এবং ২ কোটি ৮৬ লক্ষ ৪৪ হাজার ৮৭৮ জনকে করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ় দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজটি আপনাকে কল্পনাতীত সুরক্ষা দেয়, তাই ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ় নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিতে যদি দেরি হয়
বর্তমান পরিস্থিতিতে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ় নিতে দেরি হতেই পারে। এমনও হতে পারে, নির্ধারিত দিনে আপনি টিকা নিতে গেলেও যদি ডোজ় না থাকে বা অন্য কোনও কারণে নির্দিষ্ট তারিখে আপনি যদি ভ্যাকসিনে নিতে না পারেন, তবে ছয় থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে আপনি দ্বিতীয় ডোজ় নিতে পারেন। যুক্তরাজ্যেও দ্বিতীয় ডোজ় দিতে প্রায় দুই-তিন মাস দেরি হচ্ছে। এই ক্ষেত্রে, দুটি ডোজে়র মধ্যে কতটা ব্যবধান তা বিবেচনা করা উচিত নয়, সর্বাধিক সুরক্ষার জন্য উভয় ডোজ় নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
দ্বিতীয় ডোজ়ের আবশ্যকতা
যে কোন ভ্যাকসিন আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। করোনার নতুন রূপ বা ভ্যারিয়েন্ট আসার পরে ভ্যাকসিন নেওয়া আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও কিছু মানুষের দেহে অ্যান্টিবডি তৈরি হতে সময় লাগতে পারে। আর সেই সময়ে তিনি করোনা আক্রান্তও হতে পারেন। তবে ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ় নেওয়ার ফলে সংক্রমণ প্রাণঘাতী রূপ ধারণ না করার সম্ভাবনাই বেশী। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় ডোজ়টি সম্পূর্ণরূপে সুস্থ হওয়ার পরে অবশ্যই নেওয়া উচিত, তবে এর জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নেওয়া উচিত। তবে মনে রাখতে হবে, ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ় অবশ্যই নিতে হবে, কারণ ভ্যাকসিনের সম্পূর্ণ কার্যকারিতার জন্য দুটি টিকা নিতেই হবে।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে ক্লান্তি, মাথা ব্যথা, পেশি ব্যথা ও জ্বর- এইধরনের সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়, যা যে কোনও টিকা দেওয়ার পরেই ঘটে থাকে। যদিও এইসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী নয়, তবে প্রতিক্রিয়া দেখা দিলেও যদি তা দীর্ঘ না হয়, তবে মনে করতে হবে যে আপনার শরীর ভ্যাকসিনটিকে ভালভাবে গ্রহণ করছে।
আরেকটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, আপনি প্রথম ডোজ়টি যে সংস্থার নিয়েছেন, দ্বিতীয় ডোজ়টিও সেই সংস্থার ভ্যাকসিনেরই নিতে হবে। অন্য সংস্থার ভ্যাকসিন নিলে চলবে না। যদি কোন কারণে প্রথম ডোজ় নেওয়ার পরেও কেউ করোনা পজিটিভ হন, সেক্ষেত্রে নেগেটিভ রিপোর্ট আসার ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পরে আপনি ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ়টি নিতে পারেন। ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে যদি কেউ সংক্রমিত হন, যদিও তার সম্ভাবনা খুব কম, তাহলে এতে ঘাবড়ে যাওয়ার কিছু নেই। খুব বিরল ক্ষেত্রেই করোনার নতুন রূপ বা ভ্যারিয়েন্টের জন্য এরকম দেখা যেতে পারে। এইসব ক্ষেত্রে আপনি অনেকটা সুরক্ষিত, কারণ টিকা নেওয়ার কারণে সংক্রমণ প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে না।
কোভিড -১৯ থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষার জন্য ভ্যাকসিনের উভয় ডোজ় নেওয়া প্রয়োজন। এটি আপনাকে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সুরক্ষা দেবে। যেহেতু করোনা সংক্রমণ বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে, এমন পরিস্থিতিতে, অফিস, কলেজ ক্যাম্পাস, বিমানে চেপে অন্য কোথাও যেতে গেলে আপনাকে পুরো ভ্যাকসিনের শংসাপত্র দেখানোর প্রয়োজন হতে পারে। এটি যদি না থাকে তবে সমস্যা হতে পারে।
ভ্যাকসিন নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়াতে নানা গুজব রটানো হচ্ছে। দয়া করে গুজবে কান দেবেন না। সরকারের দেওয়া নীতি-নির্দেশ পালন করবেন। মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব পালন আর হাত ধোয়ার অভ্যাস এখনও বেশ কিছুদিন মেনে চলতে হবে। সরকার সাধ্যমতো প্রচেষ্টা করছে, এখন সময় আমাদের নিজেকে সংযত করা। মনে রাখবেন, জীবনটা আপনার, আর আপনার মৃত্যু সরকারেরকাছে একটি সংখ্যা মাত্র। সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে, নিজেই নিয়ম পালন করুন আর অন্যদেরকেও নিয়ম পালন করতে উৎসাহিত করুন।