Women reservation bill: মহিলা সংরক্ষণ বিল: বদলেছে ভোটদানের ধরন, ‘নীরব ভোটব্যাঙ্ক’ই মোদীর পাখির চোখ?

Women reservation bill: রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত কয়েক বছরে দেশে মহিলাদের ভোটদানের প্রবণতায় যে পরিবর্তন এসেছে, তা উপলব্ধি করেই এই বিল পেশ করল মোদী সরকার। তাঁদের মতে, মহিলা সংরক্ষণের অছিলায় দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার ভোট গেরুয়া শিবিরে টানার চেষ্টা করছে মোদী সরকার। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিপুল জয়ের পিছনেও এই 'নীরব' ভোটারদের বড় ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়।

Women reservation bill: মহিলা সংরক্ষণ বিল: বদলেছে ভোটদানের ধরন, 'নীরব ভোটব্যাঙ্ক'ই মোদীর পাখির চোখ?
মহিলাদের ক্ষমতায়নে প্রথম থেকেই জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী Image Credit source: Twitter
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 19, 2023 | 4:58 PM

নয়া দিল্লি: ভারতের রাজনীতিতে মহিলাদের অধিকার বৃদ্ধিতে বড় পদক্ষেপ মোদী সরকারের। গত পাঁচ দশক ধরেই সংসদ ও বিধানসভায় মহিলাদের সংরক্ষণের দাবি উঠেছে। এইচডি দেবগৌড়া থেকে অটলবিহারী বাজপেয়ী, সনিয়া গান্ধী – সকলেই দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণের পক্ষে পদক্ষেপ করেছিলেন। কিন্তু, তাঁরা কেউই এই বিষয়ে আইন প্রণয়ন করাতে পারেননি। এই বিষয়ে দীর্ঘ অপেক্ষার পর, মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) লোকসভায় নারীশক্তি বন্ধন অধিনিয়ম পেশ করেছে মোদী সরকার।কংগ্রেস থেকে শুরু করে বিআরএস এবং অকালি দলও মহিলা সংরক্ষণ বিলের পক্ষে রয়েছে। তাই সরকার খুব সহজেই এই বিল সংসদে পাশ করাতে পারবে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, গত কয়েক বছরে দেশে মহিলাদের ভোটদানের প্রবণতায় যে পরিবর্তন এসেছে, তা উপলব্ধি করেই এই বিল পেশ করল মোদী সরকার। তাঁদের মতে, মহিলা সংরক্ষণের অছিলায় দেশের অর্ধেক জনসংখ্যার ভোট গেরুয়া শিবিরে টানার চেষ্টা করছে মোদী সরকার। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির বিপুল জয়ের পিছনেও এই ‘নীরব’ ভোটারদের বড় ভূমিকা ছিল বলে মনে করা হয়।

মহিলাদের ভোটদানের ধরনে বদল

গত কয়েক বছরে ভারতে মহিলাদের ভোটদানে বড় ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা গিয়েছে। পুরুষের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভোট কেন্দ্রে উপস্থিত হচ্ছেন বিপুল সংখ্যক মহিলা ভোটার। অনেক ক্ষেত্রে পুরুষের থেকে বেশি ভোট দিচ্ছেন মহিলারাই। মহিলাদের ভোটদানের হার অনেক বেড়েছে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে, পুরুষদের তুলনায় এক শতাংশ ভোট বেশি ছিল মহিলাদের। লোকসভা নির্বাচনে মহিলাদের ভোটদানের হার ছিল ৬৭ শতাংশ। এর মধ্যে বিজেপি পেয়েছিল ৩৫ শতাংশ আর কংগ্রেস পেয়েছিল ২০ শতাংশ মহিলা ভোট। স্বাধীন ভারতে শুরু থেকেই মহিলাদের ভোটাধিকার ছিল। কিন্তু, বাংলা, কেরলের মতো কয়েকটি রাজ্য ছাড়া, মহিলাদের ভোটদানের হার ছিল সীমিত। এখন এই প্রবণতায় বড় পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকেও মহিলাদের ভোটদানে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মহিলাদের জন্য পৃথক গোলাপী বুথ তৈরি করা হচ্ছে।

ভারতে বিভিন্ন ভোট ব্যাঙ্ক

ভারতীয় রাজনীতিতে জাতি, ধর্ম, বয়স ও পেশার ভিত্তিতে বেশ কয়েকটি ‘ভোট ব্যাঙ্ক’ রয়েছে। অর্থাৎ, যারা গোষ্ঠী হিসেবে বিশেষ একটি দলকে সমর্থন করে। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলগুলি মহিলাদেরও ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবেই দেখে। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিরাট জয়ের কৃতিত্ব ‘নীরব ভোটার’দের দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিনি জানিয়েছিলেন, এই নীরব ভোটাররা হলেন দেশের মা-বোন অর্থাৎ মহিলারা। পশ্চিমবঙ্গের সর্বশেষ বিধানসভা নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দুর্দান্ত জয়ের পিছনেও মহিলা ভোটারদের বড় ভূমিকা ছিল। এই বিষয়টি উপলব্ধি করেই, মহিলা ভোটারদের নিজেদের দিকে টানতে, সব দলই বিভিন্ন পদক্ষেপ করছে। নয় বছরে মোদী সরকার যেমন উজ্জ্বলা যোজনার মতো মহিলাকেন্দ্রীক বিভিন্ন প্রকল্প এনেছে, তেমনই বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্প এনেছে। তেলঙ্গানায় সদ্য কংগ্রেসের পক্ষ থেকে মহালক্ষ্মী প্রকল্পেরল প্রতিশ্রতি দেওয়া হয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পটভূমির এই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মহিলাদের সমর্থন আরও বাড়াতে চাইছে মোদী সরকার। আর, এই কারণেই এত বছর ধরে ঝুলে থাকা মহিলা সংরক্ষণ বিল বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিচ্ছে মোদী সরকার। এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

ব্যর্থ হয়েছে বহু সরকার

এখনও পর্যন্ত তিনজন প্রধানমন্ত্রী মহিলা সংরক্ষণ বিলকে আইনে পরিণত করতে চেয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। ১৯৯৬ সালে, দেবগৌড়ার যুক্তফ্রন্ট সরকার মহিলা সংরক্ষণের জন্য পদক্ষেপ করেছিল। কিন্তু, বেশ কয়েকটি দল এর বিরোধিতা করেছিল। বিলটি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগেই পড়ে গিয়েছিল দেবগৌড়া সরকার। ক্রমে, বিলে এসসি-এসটি-ওবিসি সংরক্ষণের দাবি বাড়ে। আইকে গুজরাল সরকার বিলটি আটকে দিয়েছিল। এরপর, অটলবিহারী বাজপেয়ীর এনডিএ সরকারও এই বিল বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু, রাজনৈতিক বিরোধিতার কারণে তাঁকেও পিছিয়ে আসতে হয়েছিল। মনমোহন সিং-এর ইউপিএ সরকারও এই বিল পাশের অনেক চেষ্টা করেছিল। কিন্তু, সেই কোটার দাবির ফাঁসেই এটিকে আইনি রূপ দিতে পারেনি। ২০১০-এ বিলটি রাজ্যসভায় পাশ হওয়ার পরও লোকসভায় আটকে গিয়েছিল।

মোদি সরকার এদিন নারীশক্তি বন্ধন অধিনিয়ম এনেছে। এই বিশেষ অধিবেশনেই সম্ভবত বিলটি পাশ হবে। তবে, তার আগেই এই বিলের কৃতিত্ব নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে বিজেপি-কংগ্রেসের মধ্যে। ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে মহিলা ভোট টানতে এই বিল কি বিজেপির সহায়ক হবে? এখন সেটাই দেখার।