Winter in Bengal : কপাল বটে বাঙালির! বড়দিনের পর বর্ষবরণও ‘উষ্ণ’, এ বার শীতে কীসের কাঁটা?
Winter in Bengal : আবহবিদরা বলছেন, যত গোলমাল সাগরে। মঙ্গলবার পর্যন্ত পারদের যে লাফ, তার পিছনে দায়ী ঘরের পাশের বঙ্গোপসাগর।
কমলেশ চৌধুরী
কপাল বটে বাঙালির। গ্রীষ্মে পোড়া গরম, বর্ষায় ভ্যাপসা গরম, এই নিয়েই তো বছর কাটে! শীত (Winter) থাকে টেনেটুনে মাসখানেক, তাতেও কি না গরম! এ বার ৭ বছরের মধ্যে ‘উষ্ণতম’ বড়দিনের সাক্ষী হয়েছে কলকাতা। তার পর ৫৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে ডিসেম্বরের শেষ পর্বে একুশের দোরগোড়াতেও পৌঁছেছে পারদ। নতুন দুঃসংবাদ, বর্ষশেষ-বর্ষবরণও ‘উষ্ণ’ হওয়ার জোর আশঙ্কা। জাঁকিয়ে শীতের আশা? আপাতত দূর অস্তই।
কেন বারবার শীতে কাঁটা?
আবহবিদরা বলছেন, যত গোলমাল সাগরে। মঙ্গলবার পর্যন্ত পারদের যে লাফ, তার পিছনে দায়ী ঘরের পাশের বঙ্গোপসাগর। আর বর্ষবরণ ‘উষ্ণ’ হওয়ার নেপথ্যে থাকবে সুদূর ভূমধ্যসাগর। সাগরের জোলো বাতাসই শুকনো, হিমেল উত্তুরে হাওয়ার পথে কাঁটা।
উত্তুরে হাওয়া হল শীতের ভগীরথ। আমদানি ভাল হলে শীতের দাপট বাড়ে, শীতের আয়ু বাড়ে। আর আমদানি কম থাকলে কী হয়, চলতি ডিসেম্বরে তার সাক্ষী কলকাতা, দক্ষিণবঙ্গ। শুধু যে আমদানি কম তা নয়, উল্টে উত্তুরে হাওয়ার সামনে বাধার পাহাড়ও তুলেছে বঙ্গোপসাগরের জোলো বাতাস। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘বঙ্গোপসাগরের উপর একটি বিপরীত ঘূর্ণাবর্ত থাকায় একটানা দখিনা, দখিনা-পশ্চিমী বাতাস সাগর থেকে স্থলভাগে ঢুকেছে। তার ফলে জলীয় বাষ্প বেড়ে যাওয়ায় উত্তুরে হাওয়া মালুম হয়নি। তা ছাড়া, জলীয় বাষ্প বাড়লে গরমও বেশি লাগে। সেটাই হয়েছে।’
৫৩ বছরের রেকর্ডও ভেঙে চুরমার!
পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছয়, কলকাতার পারদ উঠে যায় কুড়ির উপরে। সোমবার ২০.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মঙ্গলবার ২০.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। মাঝ-পৌষে মানে ডিসেম্বরের শেষবেলায় পারদের এমন লাফ? আবহাওয়া দফতর দস্তাবেজ ঘেঁটে জানাচ্ছে, ৫৩ বছরের রেকর্ড ভেঙে চুরমার। ১৯৬৯ সালের পর ডিসেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে এই প্রথম এত বেশি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কলকাতায়। শীতে ঠান্ডার রেকর্ড ভাঙে, এটাই দস্তুর। এ বার ভাঙল উষ্ণতার রেকর্ড। কপাল বটে বাঙালির!
তবে আশার খবর, বুধবার থেকে তাপমাত্রা কমবে। আগামী ২-৩ দিনে ৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে তাপমাত্রা। অর্থাত্, শীত ফিরবে। তবে মৃদু শীত। এবং সাময়িক। এই সাময়িক শব্দটার মধ্যেই লুকিয়ে অন্য দুঃসংবাদ। বর্ষবরণ নিয়ে দুঃসংবাদ। বর্ষশেষের ঠিক আগের দিন থেকেই পারদ আবার উষ্ণতার মইয়ে পা রাখবে। বর্ষবরণের দিন কলকাতার পারদ পৌঁছে যেতে পারে ১৬-১৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এ বার কাঁটা হবে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। ভূমধ্যসাগরের পশ্চিমী ঝঞ্ঝা।
এমনিতে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা দেশে শীতের ভগীরথ। সুদূর ভূমধ্যসাগর থেকে ইরান, আফগানিস্তান, পাকিস্তান হয়ে কাশ্মীরে ঢোকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা। তার প্রভাবেই তুষারপাত হয় কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে। সেই বরফছোঁয়া হিমেল হাওয়া সমতলে নেমে কাঁপুনি ধরায় উত্তর ভারতে। শর্ত অনুকূল হলে মধ্য ভারতের উপর তৈরি হওয়া উচ্চচাপ বলয় সেই হাওয়াকে ঠেলে দেয় পূর্ব ভারতের দিকে। কনকনে বাতাসে কাঁপে বিহার, ঝাড়খণ্ড, বাংলাও।
তবে ঝঞ্ঝার একটা ঝঞ্ঝাটও আছে। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা যখন আসে, তখন নিজেই ভূমধ্যসাগর থেকে জলীয় বাষ্প বয়ে আনে। শক্তিশালী হলে জলীয় বাষ্প টানে আরব সাগর, এমনকী বঙ্গোপসাগর থেকেও। ফলে উত্তর ভারতেই অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে উত্তুরে হাওয়া। বছর-শেষে ঠিক সেটাই হবে। উত্তর, উত্তর-পশ্চিম ভারতে এখন হাড়-হিম ঠান্ডা। শূন্যের কাছে রাজস্থানের তাপমাত্রা, পাঁচের আশপাশে রাজধানী। কিন্তু ঝঞ্ঝার পূর্বাভাস মাথায় রেখে সেখানে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ইঙ্গিত দিয়েছে মৌসম ভবন। বর্ষশেষ-বর্ষবরণে তার প্রভাব পড়বে বাংলাতেও। তাহলে জাঁকিয়ে শীত কবে? ঝঞ্ঝা চলে যাওয়ার পর কি কপাল খুলবে? উত্তর খুঁজছে হাওয়া অফিসও। শীতের মতিগতি তো এ বার মোটে ভাল নয়!