Ayan Shil: স্ত্রীর হাত ধরে পরিচয় হয়ে কীভাবে অয়নের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন শ্বেতা? এই গ্ল্যামারস ইঞ্জিনিয়ারের আসল পরিচয় কী?
Ayan Shil: শ্বেতার পরিবার স্বচ্ছল। তিনি নিজেও শিক্ষিত। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন শ্বেতা। বর্তমানে কামারহাটি পৌরসভায় ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত
কলকাতা: দুর্নীতির তালিকায় তাঁর নামটা নতুন সংযোজন। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধেই যা যা কীর্তির অভিযোগ সামনে আসছে, তা জোচ্চুরির দৌড়ে পিছনে ফেলে দেবে কুন্তল-শান্তনুকে। তিনি পেশায় একজন প্রোমোটার। অথচ প্রতারণার সিঁড়ি বেয়ে কোথায় হাত নেই তাঁর। পুরসভা, স্কুল, টলিউড-সবেতেই তাঁর হাত। এতদিন পর্যন্ত দুর্নীতিতে যাঁদের নাম উঠে এসেছে, তাঁদের ‘গ্ল্যামারের’ ছটা চোখ ধাঁধিয়েছে আম জনতার। এবার নাম উঠে আসছে অয়ন শীলের বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তীর। তাঁরও গ্ল্যামারের ছটা চোখ টেনেছে সকলের। অয়ন শীলের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী শ্বেতা চক্রবর্তীর বাড়ি নৈহাটি জেলাপাড়াতে। কামারহাটি পৌরসভার ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকরি করতেন শ্বেতা। বাবা প্রাক্তন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মী।
গত ২০১৭ সাল থেকে অয়ন শীলের সঙ্গে পরিচয় শ্বেতা চক্রবর্তী। জানা যাচ্ছে, অয়ন শীলের স্ত্রীর সুবাদেই মডেল শ্বেতার সঙ্গে পরিচয় হয় অয়নের। অয়ন শীল পেশায় প্রোমোটিংয়ের ব্যবসা করেন। অয়ন শীলের প্রোমোটিংয়ের ব্যবসার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলেন শ্বেতা। ইডির তদন্তে দেখা গিয়েছে শ্বেতার একটি গাড়ি কেনার সময় বেশ কিছু টাকা দিয়েছিলেন অয়ন। সেই সূত্র অনুযায়ী ইডি আধিকারিকেরা শ্বেতাকে তলব করেছে ইডি দফতরে।
শ্বেতার বাড়ি নৈহাটির জেলাপাড়াতে। সেখানে গিয়ে দেখা গেল, বাড়ির দরজা জানালা সকাল থেকে বন্ধ। তবে অত্যুৎসাহী প্রতিবেশীদের জটলা পাড়ার গলিতে। সাংবাদিকদের দেখে অনেকেই সরে গিয়েছেন। অনেকে আবার বলেছেন, শ্বেতার চলাফেরা, হাবভাবের কথা। প্রত্যেক দিন সকাল সাড়ে নটা নাগাদ একটা এসইউভি গাড়ি এসে দাঁড়াত শ্বেতার বাড়ির সামনে। রোজই ‘ফিটফাট’ হাতে ল্যাপটপ ব্যাগ নিয়ে সেই গাড়িতে উঠে চলে যেতেন শ্বেতা।
শ্বেতার পরিবার স্বচ্ছল। তিনি নিজেও শিক্ষিত। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশোনা করেছেন শ্বেতা। বর্তমানে কামারহাটি পৌরসভায় ইঞ্জিনিয়ার পদে কর্মরত। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর কামারহাটি পৌরসভার পুরপ্রধান গোপাল সাহা বলেন, “২০১৬ সালে কামারহাটি পৌরসভার সিভিল ইঞ্জিনিয়র পদে যোগদান করেন শ্বেতা চক্রবর্তী। অফিসের কাজ ছাড়া শ্বেতার সঙ্গে কোনওরকম কোন কথাবার্তা হত না। অয়ন কাজের সূত্রে একবার কামারাহাটি পৌরসভায় এসেছিলেন,যদি আগে জানতাম এই ধরনের ঘটনা হবে তাহলে নিয়োগই করতাম না। এই ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। সরকারি পদ্ধতি মেনে যা ব্যবস্থা নেওয়ার, সেটা নাওয়া হবে।”
নৈহাটির বাড়িতে বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকেন শ্বেতা। আর তাঁর এক ভাই রয়েছে। তিনি কল্যাণীতে থাকেন। জানা যাচ্ছে, এই শ্বেতাই একপ্রকার অয়নের সমস্ত কাজ দেখভাল করতেন। প্রোমোটারির ব্যবসাও সামাল দিতেন। ইতিমধ্যেই শ্বেতার সঙ্গে অয়ন শীলের জয়েন্ট অ্যাকাউন্টের হদিশ পেয়েছেন তদন্তকারীরা। তাতে মোটা অঙ্কের লেনদেনও হয়েছে বলে খবর। এছাড়া ইডি-র তদন্তে বেশ কিছু জায়গায় ফ্ল্যাটের হদিস মিলেছে। সবথেকে উল্লেখযোগ্য, অয়ন শীলের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর আগেই সে খবর পেয়েছিলেন এক বান্ধবী। তাই আগের রাতেই অয়নকে মেসেজ করে গোটা বিষয়টি সম্পর্কে সচেতন করেছিলেন। লিখেছিলেন, “ইডি রেড করতে পারে, জিনিসপত্র সরাও…” তদন্তকারীরা মনে করছেন, এই শ্বেতারও হাত অনেক দূরই লম্বা। তবেই সেই বান্ধবীই শ্বেতা কিনা খতিয়ে দেখছে তদন্তকারীরা।
তবে শ্বেতার পাড়ার প্রতিবেশীরা ভাবতেই পারছেন না, এত সম্ভ্রান্ত পরিবারের এক মেয়ে কীভাবে এই দুর্নীতির জালে জড়িয়ে পড়লেন? এলাকাতেই চলছে কানাঘুষো, ‘লোভে পাপ আর পাপে…।’