AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Buddhadeb Bhattacharjee: ‘দেশ তো আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসবে…’, চোখেই থেকে গেল কারখানার স্বপ্ন

Buddhadeb Bhattacharjee: স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। রাজ্যে শিল্প আনতে হবে। নাহলে রাজ্যের উচ্চশিক্ষিত যুব সমাজের ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাবে। সে কথা রাজ্যবাসীকে বোঝানোর চেষ্টাও কম করেননি। কিন্তু বামফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রীর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। নিজের জীবদ্দশায় এই স্বপ্ন পূরণ হতেও দেখে যেতে পারলেন না তিনি।

Buddhadeb Bhattacharjee: 'দেশ তো আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসবে...', চোখেই থেকে গেল কারখানার স্বপ্ন
স্বপ্ন দেখেছিলেন, পূরণ হল নাImage Credit: TV9 Bangla
| Updated on: Aug 08, 2024 | 4:50 PM
Share

কলকাতা: কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ। এ কথা বার বার শোনা গিয়েছে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর গলায়। তখন তিনি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্যে নতুন শিল্প স্থাপনের গুরুত্বের বিষয়টি ঘুরে ফিরে উঠে আসত তাঁর বক্তব্যে। ২০০৬ সালে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সপ্তম বামফ্রন্ট ক্ষমতায় আসার পর থেকেই শিল্পস্থাপনে উদ্যোগী হন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব। সিঙ্গুরে টাটার গাড়ি কারখানা, নয়াচরে কেমিক্যাল হাব-সহ একাধিক কারখানা গড়তে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তিনি। ভবিষ্যতদ্রষ্টা এই বামনেতা বুঝতেন, উচ্চশিক্ষিত যুব সমাজের ভবিষ্যতের জন্য শিল্পের গুরুত্ব। সে কথা রাজ্যবাসীকে বোঝানোর চেষ্টাও কম করেননি। নতুন শিল্প রাজ্যে কর্মসংস্থানের জোয়ার আনবে বলেও আশাবাদী ছিলেন। কিন্তু বামফ্রন্টের মুখ্যমন্ত্রীর সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। নিজের জীবদ্দশায় এই স্বপ্ন পূরণ হতেও দেখে যেতে পারলেন না তিনি। বিশেষজ্ঞরা বলেন, শিল্প নিয়ে উদ্যোগী হলেও তা বাস্তবায়নে বেশ কিছু ভুল ছিল রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর।

১৯৭৭ সালে প্রথম বার বিধায়ক নির্বাচিত হন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দীর্ঘ দিন তিনি জ্যোতি বসুর মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ২০০০ সালে জ্যোতি বসুর অবসরের পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হন। ২০১১ সাল অবধি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই রাজ্যে শিল্পস্থাপনে উদ্যোগী হন তিনি। রাজ্যে শিল্প আনতে গেলে শিল্পপতি, ব্যবসায়ীদের থেকে দূরত্ব রাখতে চলবে না, এই বিষয়টিও বামফ্রন্টের অন্দরে ছড়িয়ে দিতে পেরেছিলেন বু্দ্ধদেব। ২০০৬ সালে বিপুল আসন নিয়ে ক্ষমতায় আসার পর টাটার ন্যানো কারখানা তৈরির ঘোষণা করেন। এর জন্য বেছে নেওয়া হয় হুগলি জেলার সিঙ্গুরকে। সিঙ্গুরের পাশাপাশি নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব তৈরির ঘোষণা করেছিলেন। এর পাশাপাশি শালবনিতে ইস্পাত কারখানা, কাটোয়ায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার উদ্যোগও নেয় বুদ্ধদেবের সরকার। কলকাতার উপকণ্ঠে তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্র গড়তেও প্রথম সারির অনেক তথ্য প্রযুক্তি সংস্থার সঙ্গেও আলোচনায় বসেছিলেন।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করেন, শিল্পস্থাপন নিয়ে আগ্রহী থাকলেও তার বাস্তবায়ন করতে গিয়ে বেশ কিছু ভুল করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, তাঁর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার। সিঙ্গুরের বহুফসলি জমি নিয়ে স্থানীয়দের একাংশের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই সমস্যা সমাধানে দূরদর্শিতা দেখাতে পারেনি বুদ্ধদেবের প্রশাসন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেই পরিস্থিতিতে যে ‘ঔদ্ধত্য’ বুদ্ধদেব দেখিয়েছিলেন, তাতে হিতে বিপরীত হয়। বিরোধীদের আন্দোলনে শেষমেশ রাজ্য থেকে পাততাড়ি গুটিয়ে গুজরাটে চলে যায় টাটা গোষ্ঠী। নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাব নিয়েও একই পরিস্থিতি। সেখানেও একাংশ বাম নেতাদের উস্কানিমূলক কথাবার্তায় পরিস্থিতি জটিল হয়। নন্দীগ্রামে পুলিশের গুলিতে বেশ কয়েক জনের প্রাণ হারানোর অভিযোগও ওঠে। এত কিছু ঘটে গেলেও নিজেদের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করেননি তিনি। জমি সংক্রান্ত আন্দোলন থেকেই দুর্বল হতে থাকে বামফ্রন্টের আগল। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ৩৪ বছরের বাম সরকারের অবসান হয়।

বুদ্ধদেবের সরকারের পতনের পর থেকেই রাজ্যে নতুন শিল্প তৈরির যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তা নিশ্চিত ভাবে ধাক্কা খেয়েছে। একে একে বিভিন্ন শিল্প তৈরির গতি স্তব্ধ হতে থাকে। ক্ষমতা থেকে সরে যাওয়ার পরও সেই আক্ষেপ একাধিক বার শোনা গিয়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর কথায়। সিপিএমের জনসভা হোক বা সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার। বিভিন্ন জায়গায় রাজ্যের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হচ্ছে বলে দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন তিনি। ২০১৩ সালে রাজারহাটের একটি জনসভা থেকে বলেছিলেন, “সিঙ্গুর, রাজারহাট, হলদিয়া সর্বত্র এখন শুধুই অন্ধকার।” টাটা গোষ্ঠী নয়, কাজের পিছনে তাঁর সরকার ছুটেছিল বলেও ওই জনসভা থেকে দাবি করেন রাজ্যের প্রাক্তন বাম মুখ্যমন্ত্রী।

ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত ছিলেন তিনি। বিভিন্ন সময় সেই উদ্বেগ ধরা পড়েছিল তাঁর কথায়। সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বুদ্ধদেব বলেছিলেন, “এই রাজ্যের ছেলে-মেয়েরা কোথায় যাবে? ইনফোসিস, উইপ্রো এল না। এর মানেটা কী? আমার তো দুঃশ্চিতা হচ্ছে পাঁচ বছর পর কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। কলকারখানা নেই, বিদ্যুৎ নেই, রাস্তাঘাট নেই। সারা দেশ তো আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসবে।”