Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Alipur Zoo: লক্ষ মানুষের ভিড়ে চুলোয় চিড়িয়াখানার পরিবেশ, প্রশ্ন উঠছে বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তা নিয়েও

Christmas Celebration: সকাল থেকেই চিড়িয়াখানা ঢোকার জন্য টিকিট কাউন্টারে বিশাল লাইন দেখা যায়। দর্শকদের সুবিধার্থে অতিরিক্ত টিকিট কাউন্টার খোলা হয়।

Alipur Zoo: লক্ষ মানুষের ভিড়ে চুলোয় চিড়িয়াখানার পরিবেশ, প্রশ্ন উঠছে বন্যপ্রাণীদের নিরাপত্তা নিয়েও
আলিপুর চিড়িয়াখানায় মানুষের ঢল
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Dec 25, 2022 | 4:37 PM

কলকাতা: বড়দিন মানেই উৎসব। ছুটির আমেজ। শীতের রোদ গায়ে মেখে রকমারি খাবারের ঝোলা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাঙালি। কলকাতামুখী বাঙালিদের ভিক্টোরিয়া, জাদুঘরের মতো অন্যতম ডেস্টিনেশন আলিপুর চিড়িয়াখানা। ২৫ ডিসেম্বর প্রচুর মানুষের সমাগম সেখানে। রবিবার প্রায় এক লক্ষ লোকের ভিড় হবে বলে আশা করেছিল কর্তৃপক্ষ। বিকেল গড়াতেই সেই আশা কার্যত পূরণের পথে। তবে, সারাদিন চিড়িয়াখানায় যে সব দৃশ্য ফুটে উঠল, বন্যপ্রাণীদের জন্য আদৌ তা পরিবেশবান্ধব কিনা, ইতিমধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

একে রবিবার, তার উপর বড়দিন। আলিপুর চিড়িয়াখানা কার্যত পিকনিক স্পটে পরিণত হয় এদিন। ঘুরতে এসে প্রচুর মানুষ চিড়িয়াখানা চত্বরে বসেই মধ্যাহ্নভোজন সারেন। নিষেধাজ্ঞা না থাকায় বাইরে থেকেই খাবার আনতে দেখা গিয়েছে তাদের। এর ফলে ইতিউতি পড়ে থাকতে দেখা যায় উচ্ছিষ্ট খাবার, থার্মোকলের প্লেট, প্লাস্টিকের বোতল। চিড়িয়াখানার ভিতর খাবার খাওয়া, প্লাস্টিকের ব্যবহারে চিড়িয়াখানার পরিবেশ দূষিত তো হয়ই, তার সঙ্গে বন্যপ্রাণীরাও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। চিড়িয়াখানায় থার্মোকল-প্ল্যাস্টিক নিয়ে প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও, দর্শনার্থীরা কীভাবে তা নিয়ে ঢুকলেন প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

এই বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে নিজেদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও তুলে ধরেছেন আলিপুর চিড়িয়াখানার ডিরেক্টর তাপস রায়। তিনি বলেন, “খাবারের বিষয়ে কোনও কড়াকড়ি ওই ভাবে করা এখনই সম্ভব নয়। বহু দূর থেকে মানুষ আসে। অনেকেই বাড়ি থেকে খাবার বানিয়ে নিয়ে আসে। আমাদের এখানে ভিতরের খাবারের ব্যবস্থা নেই।” তিনি আরও জানান, “যতক্ষণ না আমরা ফুডকোর্টের মতো বিকল্প খাবারের ব্যবস্থা করতে পারছি। ততক্ষণ খাবারে নিষেধাজ্ঞা করাটা সম্ভব নয়। যদিও এ নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করছি। ফেসটিভ সিজন শেষ হলে এ নিয়ে বিকল্প ব্যবস্থা করার ভাবনা রয়েছে।”

প্লাস্টিক বন্ধের ব্যাপারে তাপসবাবু বলেন, “এটা তো সরকারের নিয়মই রয়েছে। আমরাও তা না আনতে প্রচার করি। এ জন্য চিড়িয়াখানার ভিতরে আমরা কাগজের প্লেট, গ্লাসের ব্যবস্থা রেখেছি, যাতে লোকে প্লাস্টিক ব্যবহার না করে। কিন্তু তা সত্ত্বেও নজর এড়িয়ে কেউ কেউ প্লাস্টিক বা থার্মোকল নিয়ে লুকিয়ে ঢুকে পড়তে পারেন। আমাদের লোকবল কম।” এ নিয়ে পরিবেশবিদদের আশঙ্কা, “মানুষের ফেলে আসা বর্জ্য এবং নোংরা অনেক ক্ষেত্রেই প্রাণীদের পেটে চলে যায়। তা থেকে প্রাণীদের শরীরেও ব্যাপক ক্ষতি হয়।”

এ দিন সকাল থেকেই চিড়িয়াখানা ঢোকার জন্য টিকিট কাউন্টারে বিশাল লাইন দেখা যায়। দর্শকদের সুবিধার্থে অতিরিক্ত টিকিট কাউন্টার খোলা হয়। ভিড় সামলাতে অতিরিক্ত নিরাপত্তারক্ষীও মোতায়েন করা হয়। কিন্তু যে সংখ্যক লোক এসেছে তার তুলনায় নিরাপত্তারক্ষীর সংখ্যা যথেষ্ট কম। এর ফলে লক্ষাধিক দর্শককে নিয়ন্ত্রণ করতে যে হিমশিম খেতে হবে মনে নিচ্ছেন । এ দিন TV9 বাংলাকে তিনি জানান, এই সময় চিড়িয়াখানায় প্রতিদিনই ভিড় হচ্ছে। স্থায়ী কর্মচারি একশোর মতো। আরও একশো লোক নেওয়া হয়েছে। তবে এত কম সংখ্যক লোক দিয়ে এই ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা যায় কিনা, তা নিয়েও উঠছে প্রশ্ন।

পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, এই বিপুল ভিড় বন্যপ্রাণের পক্ষে কতটা অস্বস্তির? তাপস বাবুর কথায়, “চিড়িয়াখানার প্রাণীরা সারা বছরই জনগণ দেখে। কিন্তু বিশেষ দিনে ভিড় হয়। এর জেরে নিশ্চিতভাবেই চিৎকার চেঁচামিচি হয় বেশি। ওদের তো স্ট্রেস পড়েই। যদিও এই স্ট্রেস কাটানোর কোনও উপায় আমাদের হাতে নেই। মানুষের আসাতে তো আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না।” একই মত পরিবেশবিদদের একাংশের। তাঁরা বলেছেন, “বিপুল ভিড়ের জেরে শব্দদূষণ সহ্য করতে হয়। ভিড়ের জেরে ওদের সমস্যা হয়। আমরা শিম্পাঞ্জি দেখে লাফাচ্ছি মানেই, শিম্পাঞ্জি যে খুশি হচ্ছে এর তো কোনও মানে নেই।”

হাওড়া জেলা পরিবেশ মঞ্চের সদস্য সৌরেন্দুশেখর বিশ্বাস এক ধাপ এগিয়ে চিড়িয়াখানার উপর এই ‘অত্যাচার’ বন্ধের পক্ষে সওয়াল করেছেন, ” এখন উৎসব হয়ে দাঁড়িয়েছে আশপাশের মানুষ, পশু-পাখি, জীব-জন্তুকে উত্যক্ত করে পরিবেশকে বিষিয়ে দিয়ে, দলবদ্ধভাবে উৎকট আনন্দ প্রকাশ করা। পরিবেশের পক্ষে ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক প্লাস্টিক থার্মোকলের থালা বাটি গ্লাস ও উচ্ছিষ্ট যেখানে সেখানে ছড়ানো, নেশাগ্ৰস্ত হয়ে কুৎসিত আচরণ করা এবং সবাইকে অসুস্থ করে তোলা, উৎকট শব্দ উদ্গীরণকারী নিষিদ্ধ বাজি ও ডিজে বাজানো – বিশেষ করে বনভোজন তথা পিকনিক-ফিস্টের নাম করে যে সর্বৈব দূষণ চলছে, তা অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন। “