প্রশাসনের ‘হোমওয়ার্কে’ সন্তুষ্ট নন জৈন, বেঁধে দিলেন শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের টার্গেট
কলকাতা পুলিসের এলাকায় রাজনৈতিক অশান্তি বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন জৈন। পাশাপাশি গত লোকসভা ভোটের সময় উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক অশান্তির ঘটনার কেন বিহিত হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
কলকাতা: ছাত্রদের হোমওর্য়াকে মোটেই সন্তুষ্ট নন সুদীপ জৈন (Sudip Jain)। রাজ্যের উচ্চপদস্থ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসে পরতে পরতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ইস্যুতে অসন্তোষ প্রকাশ করলেন ডেপুটি কমিশনার (Deputy Election Commissioner)। এদিন সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত রাজ্যের সমস্ত পুলিস কমিশনার, এসপি ও জেলাশাসকদের নিয়ে ভিডিয়ো কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠক করেন তিনি। পুরো বৈঠকই ছিল রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা ইস্যুকে কেন্দ্র করে। সূত্রের খবর, সেই বৈঠকে কলকাতা পুলিসের এলাকায় রাজনৈতিক অশান্তি বৃদ্ধি পাওয়া নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন জৈন। পাশাপাশি গত লোকসভা ভোটের সময় উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক অশান্তির ঘটনার কেন বিহিত হয়নি, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে বসেই সুদীপ জৈন জানতে চান, কলকাতা পুলিস এলাকায় রাজনৈতিক অশান্তির ঘটনায় লাগাম দেওয়া যাচ্ছে না কেন। গ্রেফতারির সংখ্যা এত কম কেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। গত লোকসভা ভোটের সময় উত্তর ২৪ পরগনার একাধিক এলাকায় রাজনৈতিক সংঘর্ষের বিস্তারিত তথ্য আগেই চেয়েছিলেন তিনি। সেই সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্য তো আসেইনি, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন কী পদক্ষেপ করেছিল সেই বিষয়েও কোনও রিপোর্ট দেওয়া হয়নি তাঁকে। যা নিয়েও সুদীপ জৈন নাখোশ ছিলেন। কয়েকজন এসপিকে তিনি বলেন, “এলাকা শান্তিপূর্ণ রাখার দায়িত্ব আপনাদের। কীভাবে রাখবেন তা আপনাদের বিষয়।” এমনটাই খবর সূত্রের। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন যাতে ১০০ শতাংশ শান্তিপূর্ণভাবে করা যায় সেই টার্গেট এদিন এসপি, কমিশনার ও জেলাশাসকদের বেঁধে দিয়েছেন জৈন।
আরও একটি বিষয় স্পষ্টভাবে এদিনের বৈঠকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় কর্তব্যে গাফিলতি দেখলে এবার সোজা সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে অপসারণ করবে কমিশন। শোকজের উত্তরের অপেক্ষা না করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয় হতে পারে। জেলা শাসকদের এই বার্তা দেওয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে। একই সঙ্গে ডেপুটি কমিশনারের নির্দেশ, ‘সব গ্রেফতার যত দ্রুত সম্ভব করে রিপোর্ট দিন।’ আগামী সময় কমিশনের ফুল বেঞ্চ এলে যেন অজামিনযোগ্য অপরাধীদের গ্রেফতারের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন না ওঠে।
ডেপুটি নির্বাচন কমিশনারের দ্বিতীয় দফার বৈঠক শুরু হয়েছে দুপুর আড়াইটা থেকে। চলবে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। সেখানে শুধুমাত্র জেলাশাসকরা উপস্থিত রয়েছেন। ভোটের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে সেই বৈঠকে আলোচনা হচ্ছে বলে খবর। ইভিএম সংক্রান্ত খুঁটিনাটি-সহ কোভিড আবহে কীভাবে পোলিং অফিসারদের ব্যবহার করা হবে তা নিয়ে এই বৈঠক।
আরও পড়ুন: একুশের ‘হোমওয়ার্ক’ কদ্দুর, পরখ করতে শহরে কড়া ‘হেড স্যর’ সুদীপ জৈন
আগামী ১৫ জানুয়ারি আবার প্রকাশ পাবে সংশোধিত ভোটার তালিকা। তা ধরেই বিধানসভা ভোট হবে। গত সফরে এসেই ভোটার তালিকা নিয়ে একাধিক অভিযোগে কান ভারী হয়েছিল জৈনের। সেই সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত সফরেও সুদীপ জৈনের সঙ্গে এসেছিলেন কমিশন সচিব রাকেশ কুমার। এবারেও এসেছেন। সেই সংক্রান্ত আলোচনাও দ্বিতীয় দফার বৈঠকের আলোচ্য বিষয় হবে।
আগামিকাল, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করবেন তিনি। সেখানে থাকার কথা মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, স্বাস্থ্য সচিবের। তারপরে ১২টায় বৈঠক হবে খরচের খতিয়ান নিয়ে। সেখানে থাকবেন রেল, আয়কর ও শুল্ক বিভাগের কর্তারা। থাকবেন এ রাজ্যের ইবি-র কর্তাও, যিনি নোডাল অফিসার। এরপর বিকেলেই দিল্লি ফিরে যাওয়ার কথা সুদীপের।
আরও পড়ুন: লোকসভার থেকেও বেশি বাহিনী বিধানসভা ভোটে, স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে বৈঠক কমিশনের