Partha Chatterjee : ‘সবাই মমতা হতে পারবেন না’, তবে অভিষেকে আশাবাদী পার্থ

Partha Chatterjee : ২০১১ সাল। ৩৪ বছরের বাম সরকারকে গদিচ্যুত করে তৃণমূল কংগ্রেস। ২০ মে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ৫ বছর পর ২০১৬ সালে ফের ক্ষমতায় তৃণমূল। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির পালের হাওয়া কেড়ে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে হ্যাটট্রিক করেছেন মমতা। গতবছরের ৫ মে মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন তিনি। এগারো বছর পূর্ণ করল মমতার সরকার।

Partha Chatterjee : 'সবাই মমতা হতে পারবেন না', তবে অভিষেকে আশাবাদী পার্থ
তৃণমূল সরকারের ১১ বছর পূর্তিতে টিভি নাইন বাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 05, 2022 | 8:16 PM

কলকাতা : ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর থেকে রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী তিনি। একাধিক মন্ত্রকের দায়িত্ব সামলেছেন। এমনকী, ২০০৬ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ছিলেন। শুধু সরকারে নয়, তৃণমূল কংগ্রেসের গুরুদায়িত্বও তাঁর কাঁধে। তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব তিনি। তৃণমূল সরকারের ১১ বছর পূর্তিতে কী বলছেন দল ও সরকারের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee)? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে যে দলের দ্বিতীয় ক্ষমতার কেন্দ্র বলা হচ্ছে, তা নিয়ে তাঁর কী মত? টিভি নাইন বাংলায় একান্ত সাক্ষাৎকারে সব প্রশ্নের জবাব দিলেন রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী।

তৃণমূল সরকারের এই এগারোর বছরের সাফল্যের রহস্য কী? পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “সব মানুষের কাছে সার্বিক উন্নয়নের স্বাদ পৌঁছে দেওয়া। মহিলাদের সামনের সারিতে নিয়ে আসা। জীবনের সর্বস্তরে এই রাজ্যের মহিলারা অনেকটাই এগিয়েছেন।” তিনি আরও বলেন, ৩৪ বছরের বামফ্রন্টের অপশাসনের পর মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা অনেকটাই বেশি ছিল। গ্রামীণ উন্নয়ন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল। তার বদল এনেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে কাজ করেছেন। ৬৯টার মতো প্রকল্প আছে। মানুষের হাতে অর্থ পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্প নিয়ে বড় বড় অর্থনীতিবিদরা প্রশংসা করেছেন।

২০১১ সালে ৩৪ বছরের বাম সরকারে বিরুদ্ধে লড়াই করে জিতেছিল তৃণমূল। আর ২০২১ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসছে বলে হাওয়া উঠেছিল। তা সত্ত্বেও এই বিপুল জয় এল কী করে ? পার্থ চট্টোপাধ্যায় বললেন, “সমাজকে দ্বিখণ্ডি করার চেষ্টা হয়েছিল একুশের বিধানসভার সময়। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ছিল, সবাইকে নিয়ে একত্রিত থাকা যাবে কি না। সব প্ররোচনা সত্ত্বেও বাংলাকে এক রাখতে পেরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এটাই সবচেয়ে বড় সাফল্য।”

২০১১ সালের ২০ মে থেকে ২০১২ সালের ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত তিনি শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রী। পরে শিক্ষামন্ত্রীও হন। এখন আবার শিল্প ও বাণিজ্য দফতরে ফিরে এসেছেন। রাজ্যে কি শিল্প আসছে? আশাবাদী পার্থ। তিনি বলেন, “আগের দু’দফায় সামাজিক উন্নয়নে জোর ছিল বেশি। তৃতীয় দফায় আমাদের লক্ষ্য শিল্প। শিল্পবান্ধব পরিবেশ হয়েছে। শ্রমদিবস নষ্ট হয় না। রাজ্য একশো দিনের কাজে প্রথম। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে প্রথম। কৃষিতে প্রথম।”

সিঙ্গুর আন্দোলনের জেরে তৃণমূলের গায়ে শিল্পবিরোধী তকমা লেগেছিল। রাজ্যের শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী দাবি, তাঁদের সরকারের শিল্পবিরোধী তকমা ঘুচেছে। সেজন্যই রাজ্যে বিনিযোগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন শিল্পপতিরা।

কন্যাশ্রী, স্বাস্থ্যসাথীর মতো রাজ্য সরকারের এত প্রকল্প চালানোর ক্ষেত্রে আর্থিক অসুবিধা কীভাবে সামলায় রাজ্য? শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী বলছেন, রাজস্ব বৃদ্ধি হয়েছে। নানা দিক থেকে আয় বেড়েছে। খরচের বাহুল্য কমানো হয়েছে।

এ তো গেল সরকারের এগারো বছর। এই ১১ বছরে তৃণমূলের বহরও বেড়েছে। রাজনৈতিক মহলে কান পাতলেই শোনা যায়, তৃণমূলে এখন ক্ষমতার দুটি ভরকেন্দ্র। প্রথম অবশ্যই মমতা। আর দ্বিতীয় ভরকেন্দ্র তাঁর ভাইপো তথা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এটা কি সত্যি? কী বলছেন তৃণমূলের মহাসচিব?

ক্ষমতার দ্বিতীয় কেন্দ্রের দাবি উড়িয়ে দিলেন তৃণমূলের মহাসচিব। তাঁর বক্তব্য, “ক্ষমতার অন্য কেন্দ্র তৈরি হয়নি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আমাদের শক্তি। তবে কখনও না কখনও তো কাউকে আসতে হয়। তবে আমরা মনে করি, তরুণ প্রজন্ম যে উঠে আসছে, তাতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অন্যতম মুখ। অন্য দলের এমন কোনও যুব নেতাকে খুঁজে পাব না, যে অভিষেকের মতো যুক্তিবাদী কথা বলতে পারে।”

অভিষেকের প্রশংসা করে পার্থ বলেন, “আমাদের দলের পরবর্তী প্রজন্মের নেতাদের মধ্যে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধারে কাছে কেউ নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যেভাবে মানুষের কাছে পৌঁছেছেন, সেটা ধীরে ধীরে শিখবেন। সবাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হতে পারবেন না। কিন্তু, তাঁর পথকে বেছে নিতে পারবে। আমার বিশ্বাস, সেদিক থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও অসুবিধা হবে না।”

ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে নিয়ে দলের মধ্যে অসন্তোষ দেখা গিয়েছিল বিধানসভা নির্বাচনের আগে। মাঝেমধ্যে মুখ খুলতে দেখা যায় কোনও কোনও নেতাকে। পার্থ অবশ্য বলছেন, দলে গণতন্ত্র আছে বলেই তো কথা বলতে পারছে।

তৃণমূলের একাধিক নেতা-নেত্রী গত কয়েকদিনে ‘ভবিষ্যদ্বাণী’ করেছেন, অভিষেক কবে মুখ্যমন্ত্রী হবেন। তৃণমূলের মহাসচিব সেকথা বললেন না বটে। কিন্তু, বুঝিয়ে দিলেন, একদিন তৃণমূলের ব্যাটন ধরবেন অভিষেকই।