Cyclone Jawad: বায়ুমণ্ডলের ‘ওপরমহলের কারসাজিতেই’ ডিসেম্বরে বাংলার পথে দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়
Cyclone Jawad: কেন অগ্রহায়ণের দ্বিতীয়ার্ধেও কপাল পুড়ছে বাংলার? উত্তর খুঁজতে গিয়ে বায়ুমণ্ডলের ‘ওপরমহলের কারসাজি’ দেখতে পাচ্ছেন আবহবিদরা।
কমলেশ চৌধুরী: ডিসেম্বর এলে ঠান্ডা পড়ে। তা নয়, উল্টে দুর্যোগের হুঙ্কার রাজ্যে। শীতকালও যেন বর্ষার হাতে জবরদখল! সবার একটাই প্রশ্ন, আবার ঘূর্ণিঝড়? এই শীতের মুখেও!
কেন অগ্রহায়ণের দ্বিতীয়ার্ধেও কপাল পুড়ছে বাংলার? উত্তর খুঁজতে গিয়ে বায়ুমণ্ডলের ‘ওপরমহলের কারসাজি’ দেখতে পাচ্ছেন আবহবিদরা। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, উপমহানির্দেশক সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘ঘূর্ণিঝড় কোন দিকে এগোবে, তা ঠিক করে বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরের বায়ুপ্রবাহ। ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি অনুযায়ী, বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন স্তরের বায়ুপ্রবাহ অভিমুখ ঠিক করে দেয়। শুক্রবার জাওয়াদ যেখানে রয়েছে, সেখানকার বায়ুমণ্ডলের উপরিস্তরের উচ্চচাপের প্রভাবে প্রাথমিক ভাবে অন্ধ্রপ্রদেশ-ওড়িশার দিকে এগোবে।’
তাহলে বাংলার দিকে বাঁক নেওয়ার আশঙ্কা কেন? সঞ্জীববাবুর উত্তর, ‘উপকূলে পৌঁছনোর মুখে আর ওই উচ্চচাপের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না ঘূর্ণিঝড়। অন্য বায়ুপ্রবাহের মধ্যে ঢুকে পড়বে জাওয়াদ। সেই দখিনা-দখিনাপশ্চিমী বায়ুপ্রবাহই বাঁক নিতে বাধ্য করবে ঘূর্ণিঝড়কে।’
রয়েছে আরও শর্ত। পুণের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ট্রপিক্যাল মেটেরোলজির জলবায়ু বিজ্ঞানী পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝাও রয়েছে দেশে। সেটি পশ্চিম থেকে পূর্বে সরছে। ঘূর্ণিঝড় উপকূলের কাছে পৌঁছনোর পর পশ্চিমী অক্ষরেখার টানও কাজ করবে। সেই কারণে দেশের উত্তর-পূর্ব অভিমুখে এগোনোর সম্ভাবনা।’ পুরী ছুঁয়েও স্থলভাগের ভিতরে না-ঢুকে, উপকূল ধরে এগোবে বাংলার দিকে।
বঙ্গবাসীর হাহুতাশ অন্যায্য নয়। ডিসেম্বরে বাংলায় ঘূর্ণিঝড় একেবারেই বিরল। ১২৯ বছরে মাত্র একবার। তা-ও ৪০ বছর আগে! মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, ১৯৮১ সালের ১০ আগস্ট বাংলাদেশ লাগোয়া বাংলায় আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় থ্রি-বি। ঝড়ের সর্বোচ্চ গতিবেগ উঠেছিল ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটারে। দুই দেশ মিলিয়ে মৃত্যু হয় ২০০ জনের।
তার পর ডিসেম্বরে আর বাংলামুখো হয়নি কোনও ঘূর্ণিঝড়। ওড়িশায় বাংলার চেয়ে বেশি ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ে। কিন্তু ডিসেম্বরে ওড়িশাকে একটিও ঘূর্ণিঝড়ের ধাক্কা সইতে হয়নি। কেন? আসলে ডিসেম্বরে বঙ্গোপসাগরে যে ঘূর্ণিঝড়গুলি সৃষ্টি হয়, সেগুলি যায় মূলত তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশের দিকে। শেষ ২০১৮ সালে অন্ধ্রে আছড়ে পড়েছিল ঘূর্ণিঝড় পাইটি। তার পর জাওয়াদের জন্ম। তা-ও এমন একটা বছরে, যেখানে ঘূর্ণিঝড়-প্রবণ দুই মাস অক্টোবর-নভেম্বর ঘূর্ণিঝড়-শূন্য। আর শীত-নবান্নে কাঁটা ছড়িয়ে ডিসেম্বরে জাওয়াদ-যন্ত্রণা!
জাওয়াদের জন্ম বঙ্গোপসাগরে অনুকূল পরিস্থিতি পেয়েই। মৌসম ভবনের আবহবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির পর যে শর্তগুলি দরকার হয়, তা প্রায় সবই অনুকূল। অন্যতম প্রশান্ত মহাসাগরের লা নিনা পরিস্থিতি। এর জন্যই পরপর নিম্নচাপ বঙ্গোপসাগরে। ‘মেঘবাহী যাযাবর’ ম্যাডেন জুলিয়ান অসিলেশনের সাহায্য। জলীয় বাষ্পের জোগান দিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত। নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়েছিল সুদূর থাইল্যান্ডে। সেখান থেকে পূর্ব উপকূল। যত লম্বা পথ, তত শক্তিবৃদ্ধির সুযোগ। সমুদ্রের জলতলও উষ্ণ। ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টির জন্য জলতলের তাপমাত্রা লাগে ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর তাপমাত্রা রয়েছে ২৯-৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরম জল মানেই জলীয় বাষ্পের বাড়বাড়ন্ত। সমুদ্রপথে শক্তি বাড়ানোর জন্য জ্বালানির অভাব অন্তত নেই। তাই তীব্র ঘূর্ণিঝড়েও পরিণত হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে জাওয়াদ।
বাংলার উপকূল থেকে কি সোজাসুজি ভিতরে ঢুকে আসবে ঘূর্ণিঝড়? নাকি আবারও কোনও বাঁক নিয়ে বাংলাদেশের দিকে চলে যাবে? নজর বায়ুমণ্ডলের ‘ওপরমহলের কারসাজির’ দিকেই।
আরও পড়ুন : ধেয়ে আসছে জাওয়াদ, খোলা হল দিন-রাতের কন্ট্রোল রূম! বাতিল বিদ্যুৎ দফতরের সমস্ত কর্মীদের ছুটি